ফয়সাল চৌধুরী : চুরির অপবাদ দিয়ে ছোট ভাই আশরাফুল ইসলামকে মারপিট ও বড় ভাই সুরমান খানকে (৪০) মারপিটের পর হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিবেশী হালিম বিক্রেতা আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত হাকিমসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে কুষ্টিয়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের চর থানাপাড়া এলাকা থেকে রিকশাচালক ছুরমান খানের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত সুরমান খান কুষ্টিয়া শহরের চর থানাপাড়া এলাকার আব্দুল কালাম খানের ছেলে। তিনি এক মেয়েসন্তানের বাবা। তিনি পেশা একজন রিকশা চালক ছিলেন ।তার ছোট ভাই আশরাফুল ইসলাম (২৫) কুষ্টিয়া শহরের মিশন স্কুলের বিপরীতে প্রতিবেশী হাকিমের দোকানে কাজ করতেন। আটকরা হলেন: হাকিম, নিতু ও হাকিমের স্ত্রী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকায় হাকিম নামের এক হালিম বিক্রেতা মঙ্গলবার রাতে চুরির অভিযোগ এনে সুরমানকে ধরে নিয়ে যায়। পরে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হাকিমের বাড়িতে তাকে আটকে রেখে মারধর করা হয়। তবে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে হাকিমের বাড়িতে সুরমানকে আর পাওয়া যায়নি। সবশেষ বৃহস্পতিবার সকালে জিকে বালুর ঘাট এলাকার একটি বাড়ির শৌচাগারে ঝুলন্ত অবস্থায় সুরমানের মরদেহ পাওয়া যায়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, গত ৩১ মার্চ রাতে প্রতিবেশী হাকিমের বাড়িতে চুরি হয়েছে বলে দাবি করে হাকিম তার দোকানের কর্মচারী আশরাফুল ইসলামকে চোর সন্দেহে মঙ্গলবার তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করেন।
এর জের ধরে হাকিম ও তার লোকজন আজ বৃহস্পতিবার সকালে আশরাফুলের বড় ভাই ছুরমানকে মারপিট করে হত্যা করেন। আজ সকালে নিজবাড়ির পাশ থেকে সুরমানের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। নিহত সুরমান খানের বড় ভাই জয়নাল খান বলেন, ‘আমার ছোট ভাই আশরাফুল ইসলাম হাকিমের হালিমের দোকানে কাজ করত। ঈদের দিন রাতে হাকিম দাবি করে, তার বাড়িতে চুরি হয়েছে।
সে আশরাফুলকে চুরির মিথ্যা অপবাদ দেয়। এর পর থেকে হাকিম ও তার লোকজন আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকিধামকি দিয়ে আসছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘গত মঙ্গলবার সে বাড়ি থেকে আশরাফুলকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারপিট করে। এরপর আমার আরেক ভাই ছুরমান খান বুধবার সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিল। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির পাশে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
হাকিম ও তার লোকজন এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমরা মনে করছি এবং আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
নিহতের পরিবারের সদস্যরা বলেন, আশরাফুল ভালো মানুষ। তাকে চুরির মিথ্যা অপবাদ দেন হাকিম ও তার লোকজন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় সুরমানকে হত্যা করেছে হাকিম ও তার লোকজন। তাকে বিনা দোষে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি তাদের। কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশাররফ হোসেন বলেন, হাকিমের পরিবারের সদস্যরা সুরমানকে মারধর করেছে। এ ঘটনা এলাকার সবাই দেখেছে। খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।