ভারতে সম্প্রতি পাস হওয়া ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে নানা শহরে। এরইমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় বুধবার দুপুরে এই আইন বিরোধী বিক্ষোভ থেকে আবারও সহিংসতার খবর এসেছে। খবর: বিবিসি বাংলার
এর আগে মঙ্গলবার ওই জেলারই রঘুনাথপুরে সহিংসতা ঘটেছিল।
কয়েকটি মুসলিম সংগঠনের বিক্ষোভের পরে মুর্শিদাবাদ জেলার দুটি থানা এলাকায় পাঁচ জনের বেশি জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ওই এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত চলা ওই সহিংসতায় পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর চালানো হয়েছে কিছু আবাসিক ভবন ও দোকানেও।
এদিকে বুধবার সুতি থানা এলাকায় আবারও সহিংসতা হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, সুতির অজগরপাড়া এলাকায় বুধবার সকালে ১২ নম্বর জাতীয় মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ শুরু হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে অবরোধ চলে। অবরোধের ফলে জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
এসময় বিক্ষোকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। তারপরেই জনতার সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়।
পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বিক্ষোভ থেকে। পুলিশ একাধিক কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন যে জঙ্গিপুর শহরসহ রঘুনাথগঞ্জ ও সুতি থানা এলাকায় পুলিশ বাহিনী ব্যাপক টহল দিচ্ছে।
এদিকে, "উসকানিকে পা না দেওয়ার" আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
বুধবার এক সভায় তিনি বলেছেন, ''আমি জানি ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সংখ্যালঘুদের মনে একটা দুঃখ আছে। আপানারা ভরসা রাখুন, বাংলায় এমন কিছু হবে না যাতে বিভাজন হয়। সবাইকে একসঙ্গে থেকে বাঁচতে হবে।"
"আমি বলছি, দিদি আছে। দিদি আপনাদের রক্ষা করবে। আপনাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে। কেউ উসকানিতে পা দেবেন না।"
মঙ্গলবার কী হয়েছিল?
স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে জানা যাচ্ছে যে কয়েকদিন ধরেই ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদের নানা জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছিল।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে ওমরপুর মোড় থেকে ধুলিয়ান বাজার পর্যন্ত ১২ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের নানা জায়গায় অবরোধ করেন মুসলিম ছাত্র ও যুব সংগঠনের বিক্ষোভকারীরা।
ওই মহাসড়ক দিয়েই দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের মূল যোগাযোগ।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, ওই অবরোধ তুলতে যায় পুলিশ, আর তখনই সংঘর্ষ শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীর ওপরে ইট ছোড়া শুরু হলে পাল্টা লাঠি চার্জ করে তারা, এরপরে কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটায়। দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বলেও জানা গেছে।
পুলিশ বাহিনীর একাধিক গাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
রাত পর্যন্ত পুলিশ ওই এলাকার নানা রাস্তায় লাঠি নিয়ে বিক্ষোভকারীদের তাড়া করে, কয়েক জায়গায় রাতেও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে হয়েছে।
মহাসড়ক দিয়ে অবশ্য যান চলাচল রাতেই শুরু হয়ে গেছে।
জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা, ইন্টারনেট বন্ধ
মঙ্গলবারের অশান্তির প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এলাকায় পাঁচজনের বেশি মানুষের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।
"ভুয়া খবর বা গুজব যাতে না ছড়ায়" তার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১১ই এপ্রিল, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এক বিবৃতিতে মঙ্গলবারের ঘটনার নিন্দা করে জানিয়ে বলেছেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর যে কোনো প্রচেষ্টাকে কঠোরভাবে দমন করা উচিত।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরি পুলিশের লাঠি চালানোর নিন্দা করেছেন।
জঙ্গিপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক জাকির হুসেন বলছেন যে কিছু গুন্ডাপ্রকৃতির লোক নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়েছিল। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
বিজেপি মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে যে 'মুসলমান তোষণ'-এর অভিযোগ বারেবারেই করে থাকে, এদিনও আবারও সেই একই অভিযোগ তুলেছে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে ভারতের পার্লামেন্ট উত্তপ্ত তর্কবিতর্কের পর মুসলিম ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলটি পাস হয় এবং ৫ই এপ্রিল শনিবার দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বিলটিতে সম্মতি দেওয়ায় এটি এখন ভারতের একটি আইনে পরিণত হয়েছে।
তবে এই বিলটিকে চ্যালেঞ্জ করে অন্তত চারটি পিটিশন সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা হয় যেগুলো করেছেন এআইএমআইএম, কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি বা আরজেডি-র মতো দলের নেতারা এবং অন্তত একটি সিভিল রাইটস গোষ্ঠী।
এছাড়া মণিপুর, গুজরাত, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড ভারতজুড়ে বিভিন্ন শহরে এই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আয়োজন করছে।