মহসিন কবির: মার্কিন অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের জন্য অন্যান্য দেশের ওপর ‘ন্যূনতম ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক’ ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ৫ এপ্রিল থেকে এটি কার্যকর হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু দেশের ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ শুল্ক আরোপ বিশ্ব নেতারা ভালোভাবে নেননি। তারা কঠোর সমালোচনা করেছেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এসব খবর জানা গেছে।
বুধবার (২ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প কোন দেশের ওপর কত পারস্পরিক শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) আরোপ করছেন, তার একটি তালিকা তুলে ধরেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’।
এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেসব দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তা কার্যকর করা হবে আগামী ৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রাত ১২ টা ১ মিনিট থেকে। আর যেসব দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশের বেশি শুল্ক ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প, সেই নতুন শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ৯ এপ্রিল মার্কিন স্থানীয় সময় রাত ১২ টা ১ মিনিট থেকে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান ও শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিশ্বজুড়ে শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সরকারগুলোর প্রতিক্রিয়া হলো-
কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং অটোমোবাইলের উপর আমেরিকান শুল্ক ’লাখ লাখ কানাডিয়ানকে’ সরাসরি প্রভাবিত করবে। আমরা পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে এই শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াই করব। আমরা জি-৭ এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলব।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টারমার বলেছেন, ‘বাণিজ্য যুদ্ধ কারও স্বার্থে নয়। আমরা সকল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি।’
ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ব্রাজিল সরকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ মূল্যায়ন করছে, যার মধ্যে বৈধ জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আশ্রয় নেয়াও অন্তর্ভুক্ত।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিস বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের কোনও যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি নেই এবং এটি আমাদের দুই দেশের অংশীদারিত্বের ভিত্তির বিরুদ্ধে যায়। এটি কোনও বন্ধুর কাজ নয়। আজকের সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলবে এবং এটি আমেরিকান পরিবারের জন্য ব্যয় বাড়িয়ে তুলবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হ্যান ডাক-সু বলেছেন, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ বাস্তবে পরিণত হওয়ায় সরকারকে বাণিজ্য সংকট কাটিয়ে উঠতে তার সমস্ত সক্ষমতা নিক্ষেপ করতে হবে।
নিউজিল্যান্ডের বাণিজ্যমন্ত্রী টড ম্যাকক্লে বলেছেন, যেখানে বাণিজ্য অবাধে প্রবাহিত হয় সেখানে নিউজিল্যান্ডের স্বার্থ সবচেয়ে ভালোভাবে রক্ষা করা হয়... মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালী। আমরা আরও তথ্য পেতে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব এবং আমাদের রফতানিকারকরা এই ঘোষণার প্রভাব আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন।
স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, স্পেন তার কোম্পানি এবং কর্মীদের সুরক্ষা দেবে এবং একটি উন্মুক্ত বিশ্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন বলেছেন, আমরা ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য বাধা চাই না। আমরা বাণিজ্য যুদ্ধ চাই না... আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও সহযোগিতার পথে ফিরে যেতে চাই, যাতে আমাদের দেশের মানুষ আরও ভালো জীবন উপভোগ করতে পারে।
সুইস প্রেসিডেন্ট কারিন কেলার-সাটার বলেছেন, ফেডারেল কাউন্সিল দ্রুত পরবর্তী পদক্ষেপগুলি নির্ধারণ করবে। দেশের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্বার্থ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক আইন এবং মুক্ত বাণিজ্যের প্রতি আনুগত্য মূল মূল্যবোধ হিসেবে রয়ে গেছে।
আইরিশ প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে আমদানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে শুল্ক কারও উপকারে আসে না। আমার এবং সরকারের অগ্রাধিকার হল আইরিশ চাকরি এবং আইরিশ অর্থনীতি রক্ষা করা।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তির দিকে কাজ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব, যার লক্ষ্য এমন একটি বাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানো যা অনিবার্যভাবে অন্যান্য বৈশ্বিক খেলোয়াড়দের পক্ষে পশ্চিমাদের দুর্বল করে দেবে।
কলম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরা সারাবিয়া বলেছেন, আমরা জাতীয় শিল্প এবং আমাদের রফতানিকারকদের সুরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব।
