শিরোনাম
◈ কুমিল্লার চান্দিনায় যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৩ জনের পরিচয় মিলেছে ◈ অবিশ্বাস্য লড়াই শেষে ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ! ◈ ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করা অনৈতিক: মার্কিন আইনপ্রণেতারা ◈ দিনাজপুর মিনি চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীর সমাগমে সরগরম ও প্রাণবন্ত ◈ তাইওয়ানের চারপাশে চীনের বড় সামরিক মহড়া! ◈ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ৭ ◈ ইরান হামলায় যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশসীমা দেবে না গালফ দেশগুলো ◈ এবার তিন গুণ খরচ হচ্ছে নতুন টাকা ছাপাতে, কোন নোট ছাপাতে কত খরচ হয়? ◈ সেভেন সিস্টার্স ইস্যু: বাংলাদেশকে ‘ভেঙে ফেলার’ হুমকি ভারতীয় নেতার ◈ তরুণীর ফোনে যেভাবে ফাঁদে পড়েন উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, অতপর যা ঘটল...

প্রকাশিত : ০১ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:৪৬ রাত
আপডেট : ০১ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নেপালের মাওবাদী কমান্ডার এখন রাজতন্ত্রের পক্ষে হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের নেতা

নেপালে রাজতন্ত্র এবং হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সাম্প্রতিক আন্দোলন ক্রমশ হিংসাত্মক রূপ নিচ্ছে, যা দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক মাওবাদী কমান্ডার দুর্গা প্রসাদ। মাওবাদী নেতার হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের নেতা হয়ে ওঠা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। একসময় যিনি রাজতন্ত্র উচ্ছেদের জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন, আজ তিনি সেই রাজতন্ত্র ফেরানোর প্রধান প্রবক্তা। আবার সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রও চান। এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানে নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন মোড় তৈরি হয়েছে।

আন্দোলনের পটভূমি:

প্রায় দুই দশক আগে, ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার পর নেপালে ২৪০ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয় এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালের মে মাসে সংবিধান সংশোধন করে এই পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ২০১৫ সালে, নেপাল একটি নতুন ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান গ্রহণ করে, যা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় নিশ্চিত করে। কিন্তু, এই নতুন ব্যবস্থা জনগণের মধ্যে পুরোপুরি আস্থা তৈরি করতে পারেনি। গত ১৭ বছরে নেপালে ১৩ বার সরকার পরিবর্তন হয়েছে, যা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পরিচায়ক।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের একাংশের অসন্তোষ, অর্থনৈতিক সংকট, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে রাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থন আবার বাড়তে শুরু করেছে। আন্দোলনকারীরা মনে করেন, রাজতন্ত্র এবং হিন্দু রাষ্ট্র ফেরানো গেলে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সুরক্ষিত হবে।

দুর্গা প্রসাদের বিতর্কিত ভূমিকা:

প্রাক্তন মাওবাদী কমান্ডার দুর্গা প্রসাদ, যিনি একসময় প্রচণ্ডর নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী)-এর সশস্ত্র শাখা পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন যোদ্ধা ছিলেন, এখন তিনি রাজতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনের প্রধান নেতা। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি রাজতন্ত্র উচ্ছেদের জন্য গেরিলা যুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন।

তাঁর এই আকস্মিক মত পরিবর্তন অনেককে হতবাক করেছে এবং রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পুলিশের অভিযোগ, দুর্গা প্রসাদ কাঠমান্ডুতে সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন। তিনি গাড়ি দিয়ে পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে দেন, যা সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার কারণ হয়।

আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা ও সহিংসতা:

কাঠমান্ডু এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় রাজা জ্ঞানেন্দ্রের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত তিনজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগে রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির (আরপিপি) সহসভাপতি রবীন্দ্র মিশ্র এবং সাধারণ সম্পাদক ধাওয়াম সমশের রানাসহ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।

তবে, দুর্গা প্রসাদ এখনো পলাতক, যদিও তিনি এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন যে, তিনি কাঠমান্ডুর একটি মন্দিরে আত্মগোপন করে আছেন।

রাজতন্ত্রের শেষ এবং জ্ঞানেন্দ্রের বর্তমান জীবন:

প্রায় দুই দশক আগে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া শেষ রাজা জ্ঞানেন্দ্র বর্তমানে কাঠমান্ডুর ‘নির্মল নিবাস’-এ একজন সাধারণ নাগরিকের মতো জীবনযাপন করছেন। সংবিধান অনুযায়ী, তার কোনো রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। এমনকি, রাজপ্রাসাদে যাওয়ার বা সরকারি কোনো সুবিধা পাওয়ারও অধিকার তার নেই।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব:

এই আন্দোলনের কারণে নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। একদিকে সরকার গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা রক্ষার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে রাজতন্ত্রের সমর্থকেরা তাদের দাবিতে অনড়।

এই অস্থিরতা দেশের অর্থনীতি, সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে, যা সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি স্বরূপ।

নেপালের রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং সাধারণ মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সমাধান খোঁজার জন্য। সরকারকে জনগণের অভাব-অভিযোগের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে এবং এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে যা জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে।

একদিকে যেমন সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, তেমনই অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের পথ খুঁজতে হবে। নেপালের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে, দেশটির ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেয়, তা দেখার অপেক্ষা। সূত্র: আনন্দবাজার

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়