জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবককে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছে জার্মানি৷ নিয়ম অনুযায়ী, এ বছর জার্মানির কারও সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার কথা৷
ফলে সাধারণ পরিষদের নতুন সভাপতি হিসেবে সেপ্টেম্বর থেকে বেয়ারবকের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত৷ তার আগে জুন মাসে এই পদে তার নির্বাচিত হওয়ার কথা৷ এই পদের মেয়াদ এক বছর৷
ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে সংসদ নির্বাচনের পর এখন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে৷ সেই সরকারে থাকছে না বেয়ারবকের গ্রিন পার্টি৷ তাই নতুন সরকার গঠন হওয়া পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাবেন তিনি৷
কে এই আনালেনা বেয়ারবক? : আনালেনা বেয়ারবক একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ, যিনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারদর্শী৷ তার গ্রিন পার্টি যখন নিশ্চিত হয় যে তারা জার্মানির পরবর্তী সরকারে থাকছে না, তখনই তিনি নতুন সম্ভাবনার খোঁজ করতে থাকেন৷ বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দায়িত্বের জন্য মনোনীত করেছে৷ জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টেফেন হেবেস্ট্রাইট বলেছেন, বেয়ারবক এই পদের জন্য অত্যন্ত যোগ্য ও সম্মানিত একজন ব্যক্তি৷
জাতিসংঘে তার দায়িত্ব কী হবে? : নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে বেয়ারবকের দায়িত্ব মূলত প্রশাসনিক হবে৷ তিনি সাধারণ পরিষদের বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করবেন এবং আন্তর্জাতিক আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন৷ যদিও এই পদটি এক বছরের জন্য, এটি ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় যাওয়ার জন্য বড় একটি সুযোগ৷
বিতর্ক ও সমালোচনা: এই নিয়োগ নিয়ে কিছু বিতর্কও রয়েছে৷ আগে জার্মান সরকার জানিয়েছিল যে তারা অভিজ্ঞ কূটনীতিক হেলগা শ্মিডকে এই পদে মনোনয়ন দেবে৷ হেলগা শ্মিড ২০১৫ সালে সই হওয়া ইরান চুক্তির অন্যতম মূল স্থপতি ছিলেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত বেয়ারবককে মনোনয়ন দেওয়া হয়৷ এই সমালোচনার জবাবে বেয়ারবক বলেন, ‘‘আমার নিয়োগ অনেক পূর্বসূরিদের মতোই, যারা আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন৷''
বর্তমান চ্যালেঞ্জ: ৪৪ বছর বয়সি বেয়ারবক এখনো জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং নতুন জোট সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে থাকবেন৷ সম্প্রতি তিনি লেবানন সফরে গিয়েছিলেন, যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন৷ তিনি সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার ওপর জোর দেন৷
তার পররাষ্ট্রনীতি : বেয়ারবক সবসময়ই মূল্যবোধভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছেন৷ ২০২১ সালে চ্যান্সেলর প্রার্থী থাকাকালীন তিনি চীন, বেলারুশ, হাঙ্গেরি ও রাশিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর অবস্থান নেন৷ তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর তার কিছু বক্তব্য বিতর্ক সৃষ্টি করেছে৷
২০২৩ সালে স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপীয় কাউন্সিলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি, একে অপরের বিরুদ্ধে নয়৷'' রাশিয়া এই বক্তব্যকে কাজে লাগিয়ে দাবি করে, এটি প্রমাণ করে যে পশ্চিমারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে৷
একই বছর বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি চীনের বৈশ্বিক উচ্চাভিলাষ নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেন, যা চীন-জার্মানি সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে৷
বেয়ারবকের রাজনৈতিক যাত্রা : বেয়ারবক ছোটবেলা থেকেই রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিলেন৷ ১৯৮০-এর দশকে তার বাবা-মা তাকে পারমাণবিক বিদ্যুতের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিয়ে যেতেন৷ তিনি হামবুর্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইন পড়েন এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে আন্তর্জাতিক আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন৷
২৫ বছর বয়সে তিনি গ্রিন পার্টিতে যোগ দেন এবং দ্রুত উঠে আসেন৷ ২০২১ সালে তিনি গ্রিন পার্টির প্রথম চ্যান্সেলর প্রার্থী হন৷ তবে তার প্রচারাভিযান চলাকালীন বিতর্ক তৈরি হয়, যখন তার লেখা বইতে তথ্য চুরির অভিযোগ ওঠে৷ এরপরও তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এবং এখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন৷ উৎস: ডয়েচে ভেল