শিরোনাম
◈ ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় স্কুল ব্যাংকিং চালু করতে হবে ◈ দুটি কারণ পাওয়া গেছে এসএসসিতে পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার ◈ যে কারনে কর্মবিরতির ঘোষণা মেট্রোরেল কর্মীদের ◈ রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয় নিয়ে কেন লুকোচুরি? ◈ ভারত সফরে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি, আলোচনা হবে বাংলাদেশ নিয়েও ◈ ফুল কিনতে যাওয়া তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, দুই ছাত্রদল নেতাসহ আটক ৪ ◈ জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে এক ঢিলে তিন পাখি মেরেছে অন্তর্বর্তী সরকার ◈ ঈদের পর নির্বাচন ও সংস্কার দাবিতে ফের উত্তপ্ত হবে রাজনীতির মাঠ  ◈ অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের আরেকটি দল আসছে, নেতৃত্বে শিবিরের সাবেকরা ◈ দুই-একজন অপকর্ম করছে, তাদেরকে কোনভাবেই দলে রাখতে পারব না : ইশরাক

প্রকাশিত : ১৬ মার্চ, ২০২৫, ০৪:১০ দুপুর
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০২৫, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৪২ হাজার কুয়েতির নাগরিকত্ব বাতিল করল কুয়েত সরকার

৮৪ বছর বয়সী আমির মিলাশ আল-আহমাদ আল-জাবের আল-সাবহ কুয়েতের নতুন শাসক। তবে তিনি দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বেশ কর্তৃত্ববাদী পথে এগোচ্ছেন।

গণতন্ত্রকে 'রাষ্ট্র ধ্বংসের হাতিয়ার' হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে, আমির গত বছরের ১০ মে সংসদ স্থগিত করেন এবং সংবিধান সংশোধনের ঘোষণা দেন। তার দাবি, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কুয়েতকে পঙ্গু করে রেখেছে।

এই উদ্যোগের সমালোচনা করায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পাশাপাশি সংসদের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই দমনপীড়নের নিন্দা জানিয়েছে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে কুয়েতে প্রায় ৪২ হাজার মানুষের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে, যা দেশটির জন্য একটি নীতিগতভাবে বড় পরিবর্তন। এর আগে, কুয়েতসহ অন্যান্য উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলোর মতোই কুয়েতে নাগরিকত্ব বাতিলের ঘটনা ছিল বিরল এবং সাধারণত আদালতের রায়ের ভিত্তিতে সীমিত কিছু ক্ষেত্রে, যেমন রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে বা কিউবার গুয়ানতানামোতে মার্কিন ঘাঁটিতে আটক সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা হতো।

তবে, গত ডিসেম্বরে একটি আইন সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব বাতিলের এখতিয়ার আরও প্রসারিত করা হয়েছে। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নৈতিক দুর্নীতি বা অসততা অথবা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ কার্যকলাপের (যার মধ্যে আমির বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সমালোচনাও অন্তর্ভুক্ত) ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বাতিল করা যাবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সুপ্রিম কমিটি কুয়েতি নাগরিকত্বের বৈধ দাবিদারদের নির্ধারণের জন্য মামলাগুলো পর্যালোচনা করে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে নাগরিকত্ব হারানো ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয়, আর উদ্বিগ্ন কুয়েতিরা সেই তালিকা খুঁটিয়ে দেখে নিজের বা পরিবারের কারও নাম রয়েছে কি না।

কুয়েতি বিবাহিত নারী

মার্চের ৬ তারিখে একদিনেই অন্তত ৪৬৪ জন নাগরিক তাদের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন, যার মধ্যে ১২ জনকে 'অবৈধভাবে' দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখার অভিযোগে এবং ৪৫১ জনকে 'জালিয়াতি ও প্রতারণার' জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে বলে মিডল ইস্ট সংবাদমাধ্যম আল-মনিটর জানিয়েছে।

কুয়েত দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে না, তাই যারা কুয়েতি নাগরিকত্ব অর্জন করেন, তাদের অবশ্যই তাদের আগের নাগরিকত্ব ছাড়তে হয়।

এসব ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে রয়েছে কুয়েতি নাগরিককে বিয়ে করার পর নাগরিকত্ব পাওয়া নারীরা। কুয়েতি নাগরিকত্ব হারিয়ে তারা রাষ্ট্রবিহীন হয়ে পড়েছেন এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যেমন-তারা আর রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা পাবেন না  এবং তাদের সন্তানের রাষ্ট্রীয় স্কুলে ভর্তি পুনরায় নবায়ন সম্ভব নয়।

অকুয়েতিরা এই ধনী পেট্রো-মোনার্কির দ্বারা প্রদত্ত উদার সামাজিক কল্যাণ সুবিধাগুলো লাভ করতে পারে না। তারা জমি মালিক হতে পারে না বা কোনও কোম্পানিতে অধিকাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারে না। যারা তাদের নাগরিকত্ব হারিয়েছে তারা জানিয়েছে, তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে বা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।

প্যারিস ডফিন বিশ্ববিদ্যালয় পিএসএল -এর জাতীয় বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের (সিএনআরএস) এর এক গবেষক ক্লেয়ার বেউগ্রা বলেন, "এই পদক্ষেপগুলোর গতি এবং আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কুয়েতের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। সরকার এলোমেলোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।"

এমন অবস্থায় সরকারের অবস্থান শিথিল করতে গত ডিসেম্বরে সরকার বিবাহিত কুয়েতি নাগরিকদের নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

'রাতারাতি নাগরিকত্বহীন'

নাগরিকত্বের নতুন নিয়ম সমাজের সব স্তরের মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে। ফিনান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনে ফয়সাল নামের এক ব্যক্তির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তিনি একজন কুয়েতি ব্যবসায়ী। তার পাসপোর্ট বিমানবন্দর থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোনও কারণ উল্লেখ না করে এটি করা হয়েছে। তবে তার বাবা কুয়েতি বংশোদ্ভুত নন তাই তিনি তার নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। ফয়সাল বলেন, "এ কারণে আমি রাতারাতি নাগরিকত্বহীন হয়ে পড়েছি। আজ আমি শুধু এটা ভাবছি যে আমি দুবাই চলে যাব এবং সেখানে বসবাস করব।"

রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্যরা তাদের কুয়েতি নাগরিকত্ব হারানোদের মধ্যে রয়েছেন। গবেষক বেউগ্রা এ বিষয়ে বলেন, "কুয়েতে গুজব রয়েছে যে, 'ভুয়া' নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপের আড়ালে, এমন কিছু জনগণের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে, যাদেরকে কর্তৃপক্ষ 'অবিশ্বস্ত' মনে করে এবং তাদের বেশিরভাগই বিরোধী দলের সদস্য।"

ডিন্যাচারালাইজেশনগুলো কুয়েতের আরেকটি নাগরিকত্বহীন জনগণের শ্রেণিকে নির্দেশ করে। তাদের মধ্যে একটি গোষ্ঠী হলো 'বিডুন'। তারা বেশিরভাগই যাযাবর গোত্রের বংশধর। কুয়েতি ভাষায় বিডুন অর্থ নাগরিকত্বহীন। এ বিডুনরা কখনও প্রমাণ করতে পারেনি যে তারা কুয়েতি নাগরিক এবং কয়েক প্রজন্ম ধরে তারা নাগরিকত্বহীন অবস্থায়ই রয়েছে।

তাদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রক্রিয়া করা হয়। এর মাধ্যমে তাদের না নাগরিক ও না বিদেশি বাসিন্দা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যার কারণে তারা সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। কুয়েতে প্রায় এক লাখ বিডুন থাকতে পারে। খবর: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়