শিরোনাম
◈ শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে ◈ পুলিশের এসআই পদে নিয়োগবঞ্চিত ৮৮ জনের নিয়োগের পথ খুলল ◈ হঠাৎ বন্ধ বাংলাদেশিদের ওমরা ভিসা ◈ দেশবাসীর কাছে নির্যাতনের শিকার মাগুরার সেই শিশুটির জন্য সেনাবাহিনীর দোয়া প্রার্থনা ◈ রাখাইনকে সহায়তায় বাংলাদেশকে করিডোর দিতে বলল ফোর্টিফাই রাইটস ◈ গণজাগরণ মঞ্চের সেই লাকির বিষয়ে জবি ক্যাম্পাসে যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হল ◈ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হলেন নার্গিস ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইয়াসিন ◈ অবশেষে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেলেন সেই শামীমা বেগম ◈ ‘আমাকে থানায় নিতে ওসিকে আসতে হবে’ বলা ছাত্রদল নেতা কারাগারে ◈ শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে আ.লীগ নেতা সাক্ষাৎকার দি‌লেন ভার‌তের এএন আই‌কে (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৩ মার্চ, ২০২৫, ০১:৩৩ রাত
আপডেট : ১৩ মার্চ, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : আর রিয়াজ

অবশেষে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেলেন সেই শামীমা বেগম

ডেইলি মেইল: ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী শামীমা বেগম। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে তার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়। এর ফলে শামীমা আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে আবারও ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। এই রায়ের ফলে এখন শামীমার যুক্তরাজ্যে ফেরার পথ খুলে গেলেও, ব্রিটিশ সরকার তাকে ফিরিয়ে নেওয়া বা নতুন করে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা জানার জন্যে আরো অপেক্ষা করতে হবে। 

তবে এ খবরের পর শামীমা বেগম সিরিয়ায় ব্রিটিশ মিডিয়া ডেইলি মেইল অনলাইনের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেন। গতকাল বুধবার ব্রিটিশ মানবাধিকার সংগঠন ‘ইউকে হিউম্যান রাইটস ব্লগ’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এন ৩ ও জেডএ বনাম যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (২০২৫) ইউকেএসসি-৬ মামলার শুনানির পর আদালত এই রায় দেন।
মূলত জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে শামীমা বেগমসহ আরও একজন ব্রিটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল। তবে, আপিল বিভাগের দীর্ঘ শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়, নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের ফলে তাদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পুরো সময়ের জন্য কার্যকর থাকবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগম ২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এ যোগ দিতে সিরিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি ডাচ নাগরিক ইয়াগো রিয়েডিকে বিয়ে করেন এবং তিন সন্তানের জন্ম দেন, যাদের সবাই পরবর্তীতে মারা যায়। ২০১৯ সালে সিরিয়ার আল হোল শরণার্থী শিবিরে অবস্থানকালে ব্রিটিশ সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করে।

এরপর তৎকালীন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ যুক্তি দিয়েছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। তবে, ব্রিটিশ সরকারের দাবি ছিল, শামীমার পিতৃসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ থাকায় তাকে রাষ্ট্রহীন করা হয়নি। যদিও বাংলাদেশ সরকার তখনই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, শামীমা বেগমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেই এবং তিনি দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না।

এদিকে বিবিসি রেডিও ফোর-এর দ্য ওয়ার্ল্ড টুনাইট প্রোগ্রামে ব্রিটিশ সরকারের স্বাধীন সন্ত্রাসবাদ আইন পর্যালোচক মিঃ হল বলেন যে শামীমার মত রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি এবং জাতীয় নিরাপত্তার ভারসাম্যের ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের এক ধাপ পিছিয়ে এসে বৃহত্তর চিত্রটি দেখা উচিত। জাতীয় নিরাপত্তার সামগ্রিক স্বার্থে কাউকে ফিরিয়ে আনা বেশ বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত হতে পারে। 

শামীমা বেগমকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি যুক্তরাজ্যের বিবেচনা করা উচিত কিনা জানতে চাওয়া হলে যুক্তরাজ্যের সংস্কার নেতা নাইজেল ফারাজ বলেন যে ‘সহজাতভাবে’ এটি এমন কিছু নয় যা তিনি করতে চান তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে ‘এখন চিন্তা করছেন।’ শামীমার মত যেসব ব্রিটিশ তরুণ এর আগে আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে যোগ দিতে ব্রিটেনে ছেড়েছে তারা সিরিয়ায় শরণার্থী শিবিরে থাকলে স্পষ্টতই কিছু জাতীয় নিরাপত্তা সুবিধা রয়েছে কারণ আপনাকে তাদের উপর নজরদারি করতে হবে না। 

আবার ইউরোপে এখনও পর্যন্ত এধরনের ব্যক্তি যারা কোনো আক্রমণ ঘটাননি কিন্তু তাদের দেশে ফিরতে না দিলে যদি তারা পালিয়ে যায়, তাহলে তারা ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্যের জন্য অনেক বেশি বিপজ্জনক হতে পারে। এই সপ্তাহের শুরুতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সন্ত্রাস দমন প্রধান সেবাস্তিয়ান গোর্কা সিরিয়ার কারাগার শিবিরে বন্দী তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের ব্রিটিশ সদস্যদের প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানান। যুক্তরাজ্যকে আইসিস সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে টাইমসকে গোর্কা বলেন, যে কোনও জাতি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জাতির একজন গুরুতর মিত্র এবং বন্ধু হিসেবে দেখাতে চায়, তাদের এমনভাবে কাজ করা উচিত যা সেই গুরুতর প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। 

কিন্তু ব্রিটেনের রক্ষণশীল নেতা কেমি ব্যাডেনোচ বলেন যে তার নেতৃত্বে একটি রক্ষণশীল সরকার শামীমা বেগমকে ‘কখনই ফিরিয়ে নেবে না। নাগরিকত্ব মানে একটি দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া এবং এর সাফল্য কামনা করা। এটি অপরাধ পর্যটনের জন্য কোনও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ দলিল নয়।’

ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন শামীমা বেগম ‘যুক্তরাজ্যে ফিরে আসবেন না’। গুড মর্নিং ব্রিটেনের সাথে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এটা আদালতের মাধ্যমেই ফয়সালা হয়ে গেছে। তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক নন। আমরা তাকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনব না। আমরা এ বিষয়ে স্পষ্ট। আমরা আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করব। এবং ঐ শিবিরগুলিতে যারা রয়েছে তাদের অনেকেই বিপজ্জনক, উগ্র।

শামীমার আইনজীবীরা ২০২৩ সালে তার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আপিল করেন। কিন্তু ব্রিটিশ আপিল আদালত তার আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় আসে, যেখানে বলা হয় শামীমা বেগম তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কখনো হারাননি এবং তিনি ব্রিটেনেরই নাগরিক।

বর্তমানে শামীমা বেগম সিরিয়ার আল রোজ শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন। তার আইনজীবীরা দাবি করেছেন, শিবিরের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। খাদ্যসংকট, রোগব্যাধি ও অনিরাপত্তার কারণে সেখানে আটকে থাকা নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। শামীমার পরিবার ও সমর্থকরা তাকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে এনে আইনানুগ বিচারের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়