রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ কীভাবে শেষ হবে, তা নিয়ে বিশ্বনেতাদের উদ্বেগের কোনো শেষ নেই। এই যুদ্ধ বন্ধে সর্বশেষ আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সৌদি আরবে। সোমবার রাতে লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত জেদ্দা শহরে আলোচনার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
বিশ্লেষকদের মতে—বৈশ্বিকভাবে মধ্যস্থতাকারী উঠতে চায় সৌদি আরব। দেশটিতে এবার আমেরিকা, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করা, সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।
এই বৈঠকটি এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যেই জেলেনস্কিকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে সমালোচনা করেছেন। তবে এর আগে গত মাসেও সৌদি আরব প্রথমবারের মতো মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তাদের মধ্যে সরাসরি বৈঠকের আয়োজন করেছিল।
সিএনএন জানিয়েছে, সৌদি আরবে আলোচনার আয়োজনকে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার জন্য উপযুক্ত স্থান বলে বর্ণনা করেছেন। এটি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য একটি কূটনৈতিক অর্জন। কারণ তিনি তার দেশকে একটি শক্তিশালী মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক যুদ্ধ ও সংঘাতে সৌদি আরবকে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করতে দেখা গেছে। ইয়েমেনের যুদ্ধ থেকে দেশটি ক্রমান্বয়ে সরে এসেছে, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। একই সঙ্গে দেশটি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গেও কৌশলগত অংশীদারত্ব রক্ষা করছে।
পুতিন ও ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক
সৌদি আরব বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্ট, মিউজিক ফেস্টিভ্যাল, দাতব্য সম্মেলন ও শান্তি আলোচনার মাধ্যমে নিজেকে বৈশ্বিক শান্তিরক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। ২০২৩ সালের আগস্টেও তারা ইউক্রেন ইস্যুতে একটি সম্মেলন আয়োজন করেছিল। যদিও ওই সম্মেলনে রাশিয়া অংশ নেয়নি।
তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন যুবরাজ সালমান। ২০২৩ সালে সৌদি আরবে সফর করেছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। দেশটিকে ব্রিকস জোটে যোগ দেওয়ারও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এ ছাড়া তেলের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে সৌদি আরব।
অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও সৌদি আরবের সম্পর্ক বেশ দৃঢ়। প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৭ সালে ট্রাম্প তাঁর প্রথম বৈদেশিক সফরের জন্য সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছিলেন। এমনকি ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পরও ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রেখেছে সৌদি আরব।
গাজা সংকট ও সৌদি কৌশল
শুধু ইউক্রেন সংকটই নয়, সৌদি আরব গাজা ইস্যুতেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখছে। ট্রাম্প সম্প্রতি গাজাকে পুনর্গঠনের পরিকল্পনার কথা বললেও সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব দেশ তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব যদি ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে মধ্যস্থতা করতে পারে, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে এবং গাজা ইস্যুতে সৌদি অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার কারণে সৌদি আরবের জন্য এই ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরব কূটনৈতিক কৌশলে যে পরিবর্তন এনেছে, তা আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশটির অবস্থানকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। এটি ভবিষ্যতে সৌদি আরবকে বৈশ্বিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে পারে।