শিরোনাম
◈ দুই মাসে নির্যাতিত ২৯৪ নারী, ধর্ষণের শিকার ৯৬ ◈ জাতিসংঘ মহাসচিবকে নিরাপত্তা দেবে এসএসএফ ◈ তিন মাসে ৩ দেশ সফরে যাবেন ড. ইউনূস ◈ নির্বাচনী প্রচারণায় শেখ হাসিনার প্রতি জোর: ভারত 'অন্তর্ভুক্তিমূলক' নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে: টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন ◈ সরকার সাবেক ৬৪ সচিবের আমলনামা যাচাই করবে ◈ ব্যবসায়ীকে স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা, বোমা ফাটিয়ে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট ◈ সারা দেশে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তালিকা হচ্ছে! ◈ ধনী মনে করে বিয়েতে রাজি হওয়ার পর সর্বস্ব লুটে ! ◈ এক যুগ পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফের চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত ◈ তামিম ইকবালের অপরাজিত শতকে মোহামেডানের বড় জয় 

প্রকাশিত : ১০ মার্চ, ২০২৫, ০৩:৩০ রাত
আপডেট : ১০ মার্চ, ২০২৫, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিরিয়া, ঘরে-ঘরে ঢুকে হত্যা

ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিরিয়া। আবারও সেই হত্যাযজ্ঞ ও রক্তক্ষয়। গত কয়েকদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে ভয়াবহ সংঘাত চলছে। প্রতিদিন অসংখ্য হতাহতের খবর আসছে। এর মধ্যে আলাউয়ি সম্প্রদায় নামে একটি সম্প্রদায় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর আলাউয়ি সম্প্রদায়ের ভাগ্য এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। দীর্ঘদিন শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থাকা এই সম্প্রদায়ের লোকজন এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও আসাদের শাসনামলে ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুচ্যুত সুন্নি জনগোষ্ঠীর প্রতিশোধের শিকার হচ্ছে। সিরিয়ার নতুন সরকারও তাদের প্রতি শত্রুতামূলক আচরণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

 গত ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের পরও সিরিয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। আভ্যন্তরীণ সংঘাতের পাশাপাশি ইসরাইল নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
 
বাশার আল-আসাদের অনুগত সশস্ত্র যোদ্ধারা দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। এতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সিরিয়ার নতুন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে আলাউয়ি সম্প্রদায়ের মানুষদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হচ্ছে।
 
 শনিবার (৮ মার্চ) ব্রিটেনভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানায়, সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে দুই দিনের লড়াইয়ে সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
 
সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৪৫ জনই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া ১২৫ জন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও ১৪৮ জন আসাদের অনুগত যোদ্ধা। হতাহতদের মধ্যে সংখ্যালঘু আলাউয়ি সম্প্রদায়ের নারী ও শিশুও রয়েছে।
 
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস আরও জানিয়েছে, গত শুক্রবার (৭ মার্চ) সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী লাতাকিয়া প্রদেশে আলাউয়ি সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ১৬২ জনকে প্রকাশ্য ময়দানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। এই লাতাকিয়া বাশার আল-আসাদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
 
সিরিয়ার নতুন নেতা ও প্রেসিডেন্ট আহমেদ আহমেদ আল-শারার সরকারের দাবি, তারা আসাদপন্থি বাহিনীর আক্রমণের জবাব দিচ্ছে। পাশাপাশি সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে দেখছে।
 
কারা এই আলাউয়ি সম্প্রদায়?

আলাউয়ি সিরিয়ার একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। শিয়া ইসলাম থেকে উদ্ভূত হওয়ায় তাদের আলাদা বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে। সিরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ১২ শতাংশ এই আলাউয়ি সম্প্রদায়ের। ঐতিহাসিকভাবে আলাউয়িরা সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষ করে লাতাকিয়া ও তারতুস প্রদেশে বসবাস করে আসছে।
 
বাশার আল-আসাদের পরিবারও এই আলাউয়ি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। পরিবারটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করে। আসাদ পরিবারের শাসনামলে আলাউয়িরা সামরিক বাহিনী ও সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিল। ফলে আসাদ পরিবার এই সম্প্রদায়ের মানুষকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, জনমনে এমন ধারণা তৈরি হয়েছিল।
 কেন তাদের হত্যা করা হচ্ছে?

 আসাদের পতনের পর নতুন সরকারের প্রতি অনুগত সশস্ত্র সুন্নি গোষ্ঠীগুলো আলাউয়িদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড শুরু করে, যা সিরিয়ার সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে আরও গভীর করে তোলে। বিষয়টি আসাদ সরকারের উৎখাতে নেতৃত্ব দেয়া সুন্নি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের কর্তৃত্বকে হুমকির মুখে ফেলে।
 
কয়েক দশক ধরে আলাউয়িরা ছিল আসাদের সমর্থন ঘাঁটির মেরুদণ্ড। এখন তারা বিরোধীদের মারাত্মক প্রতিশোধের মুখোমুখি হচ্ছে। গত চার মাস ধরেই তাদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন চলছে। চালানো হচ্ছে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। নারী ও শিশু কেউই বাদ যাচ্ছে না।
 
গত সপ্তাহে সংঘাত জোরদার হওয়ার পর থেকে আলাউয়ি গ্রামগুলোতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা সেসব ভয়াবহ দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। বলছেন, বন্দুকধারীরা রাস্তায় বা বাড়ির সামনে বা দোরগোড়ায় গিয়ে আলাউয়ি সম্প্রদায়ের নিরস্ত্র মানুষদের একেবারে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। হত্যার শিকার বেশিরভাগই পুরুষ।
 
 শুধু হত্যাই নয়, আলাউয়িদের বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, যার ফলে এই সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ নিকটবর্তী পাহাড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
 
গ্রামের পাশাপাশি আলাউয়ি প্রধান শহরগুলোতেও নৃশংস হামলা চালছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর একটি বানিয়াস। বাসিন্দারা রাস্তায়, বাড়ির আঙিনায় ও ছাদে পরিত্যক্ত অবস্থায় অগণিত লাশ দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে বন্দুকধারীরা স্থানীয়দের ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের প্রতিবেশীদের মৃতদেহ সংগ্রহ করতে বাধা দিয়েছে।
 
৫৭ বছর বয়সি আলী শেহাও তার পরিবারের সাথে পালিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাদের পাড়ায় রীতিমতো গণহত্যা চালানো হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আলী বলেছেন, তার পাড়ায় কমপক্ষে ২০ জন আলাউয়িকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি জানান, কয়েকজনকে তাদের দোকানে, অন্যদের তাদের বাড়ির ভেতরে হত্যা করা হয়।
 
শেহার ভাষ্য, ‘এটা খুবই ভয়াবহ ছিল। লাশ রাস্তায় পড়ে ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘বন্দুকধারীরা লোকজনের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালাচ্ছিল, হত্যা করার আগে কোন সম্প্রদায়ের তা পরীক্ষা করার জন্য পরিচয়পত্র চাইছিল।’
 
 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:  সিরিয়ায় আলাউয়ি সম্প্রদায়ের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞে এখন পর্যন্ত তেমন জোরালোভাবে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব প্রায় নিরব। শুধুমাত্র ফ্রান্স চলমান সহিংসতায় ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে।  গত শনিবার (৮ মার্চ) এক বিবৃতিতে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গণহত্যার স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়