শিরোনাম
◈ ভারতে শেখ হাসিনার ৭ মাস, যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে জনগণ ◈ যে কারণে সামরিক ফ্লাইট স্থগিত করল ট্রাম্প প্রশাসন ◈ গত কয়েক দিন ধরে বেড়েছে অগ্নিদুর্ঘটনা, যে সতর্কবার্তা দিল সেনাবাহিনী ◈ লন্ডনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ওপর হামলার চেষ্টা (ভিডিও) ◈ নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন করা হচ্ছে: শ্রম উপদেষ্টা ◈ চাঁদপুরে রমজান উপলক্ষে কার্ড ছাড়াই দেয়া হচ্ছে টিসিবির পন্য ◈ অপরাধ বৃদ্ধিতে তরুণদের মনে ক্ষোভ ও বিস্ময়! ◈ সরকারি যানবাহনের চালকরা আইন অমান্য করলেই ব্যবস্থা: গণবিজ্ঞপ্তি ◈ এবার মুশফিককে নিয়ে মাশরাফির আবেগঘন পোস্ট ◈ টাকা আদায়ে ড. ইউনূসকে চিঠি দেবেন আফ্রিদি, যা বললেন বিসিবিপ্রধান

প্রকাশিত : ০৫ মার্চ, ২০২৫, ১২:১৫ দুপুর
আপডেট : ০৬ মার্চ, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেশে দেশে নাগরিকত্ব বিক্রি, কোথায় কত অর্থ খরচে নাগরিকত্ব মেলে, সুযোগ নেন বাংলাদেশিরাও!

দেশে দেশে অর্থের বিনিময়ে নাগরিকত্ব বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের যেসব ধনাঢ্য ব্যক্তি উন্নত দেশগুলোতে স্থায়ী হতে চান, তাঁদের জন্য ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশ নাগরিকত্ব পাওয়ার এমন সুযোগ দিচ্ছে। এতে উন্নত দেশগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে। এমন দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই ছিল। পুরোনো সে কর্মসূচি বাতিল করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।

গত মঙ্গলবার অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ঘোষণা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেতে হলে গুনতে হবে ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ কোটি টাকার মতো। ওই পরিমাণ অর্থ দিলেই মিলবে ‘গোল্ড কার্ড’, যা সে দেশের নাগরিকত্বের প্রমাণ।

গোল্ড কার্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তহবিলে চলে যাবে। আর্থিক ঘাটতি মেটাতে এটি কাজে লাগবে বলেই জানাচ্ছে সে দেশের প্রশাসন।

এত দিন অভিবাসীরা গ্রিন কার্ডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেতেন। এবার চালু হতে চলেছে গোল্ড কার্ড। এই কার্ড গ্রিন কার্ডের পরবর্তী সংস্করণ। তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই এখন এভাবে অর্থ বা বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। খবর বিবিসির

মূলত উন্নয়নশীল দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষেরা এ ধরনের নাগরিকত্বের সুযোগ নেন। বাংলাদেশের অনেক মানুষ দুবাই, কানাডা, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এই নাগরিকত্বের সুযোগ নিয়েছেন, যদিও দেশ থেকে বৈধভাবে অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই। অর্থাৎ এই অর্থ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অবৈধ। দ্বৈত নাগরিকত্বের আড়ালে চলে টাকা পাচার—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

যুক্তরাষ্ট্র এখন গোল্ড কার্ড বিক্রির পরিকল্পনা করেছে। এতে খুলে যাবে সে দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার নতুন পথ। ধনী ব্যক্তিরা এই কার্ড কিনে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হতে পারবেন। ১৯৯০ সালে চালু হওয়া ইবি-৫ কর্মসূচি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পছন্দ না হওয়ায় এবার তিনি নতুন কর্মসূচি চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এর রূপরেখা স্পষ্ট হবে।

দেশে দেশে নাগরিকত্ব বিক্রি

বর্তমানে ইউরোপের মাল্টা, সাইপ্রাস, মন্টেনেগ্রো, মলদোভা, লাটভিয়া, গ্রিস ও লিথুয়ানিয়া প্রভৃতি দেশ বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব দিচ্ছে। ক্যারিবীয় দেশ অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারমুডা, গ্রানাডা, সেন্ট লুসিয়াতেও এই সুবিধা পাওয়া যায়।

এ ছাড়া কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপের অনেক দেশেই বিনিয়োগের বিনিময়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়া যায়। এর মধ্যে কোনো কোনো দেশ পর্যায়ক্রমে নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগও দেয়।

বাংলাদেশিরাও সুযোগ নেন

মালয়েশিয়ার ‘সেকেন্ড হোম কর্মসূচি’ খুবই জনপ্রিয়। এই সুযোগ নেওয়া বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান পঞ্চম। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় নিবাস গড়েছেন ৩ হাজার ৬০৪ জন বাংলাদেশি। ওই সময় পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় সক্রিয় ‘সেকেন্ড হোম’ পাসধারী ছিলেন ৫৬ হাজার ৬৬ জন।

অনেক বাংলাদেশি মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন কিংবা নিবাস গড়েছেন। দুবাই চেম্বারের হিসাব অনুসারে, ১১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি দুবাইয়ে নিবন্ধন নিয়ে এখন ব্যবসা করেন। এর মধ্যে অনেকেরই হোটেল ও আবাসন ব্যবসা রয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ দেশ থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ নিয়ে দুবাইয়ে লগ্নি করেছেন। এই সুবিধা দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিনিয়োগ ভিসার অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সে দেশে ৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলে নাগরিকত্বের সুবিধা পাওয়া যায়, যাকে বলা হয় গোল্ডেন ভিসা।

বাংলাদেশ থেকে কানাডা ও যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। বিশেষ করে কানাডার বেগম পাড়ায় অনেক প্রভাবশালী বাংলাদেশি বাড়ি-গাড়ি কিনে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা অস্ট্রেলিয়ার দিকেও অনেকের আগ্রহ রয়েছে। তবে এখন মাল্টা, সাইপ্রাস, লাটভিয়ার মতো ইউরোপের দেশগুলোয় সরাসরি নাগরিকত্ব নিয়ে চলে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।

কোথায় কত অর্থ খরচে নাগরিকত্ব মেলে

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব নিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত যেসব দেশে দ্বিতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে থাকেন, সেগুলোতে জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত উঁচু। এসব দেশে নাগরিকত্ব বা স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার পেলে বিনা বাধায় থাকা ও কাজ করা যায়। আবার করের হারও কম। এ ছাড়া মানুষ সাধারণত সেই সব দেশেই যায় যেখানকার পাসপোর্ট শক্তিশালী। ওই সব পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের অনেক দেশেই বিনা ভিসায় যাওয়া যায় বা অন অ্যারাইভাল ভিসায় ঢোকা সম্ভব।

একেক দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করার অধিকার পেতে একেক পরিমাণ অর্থ লাগে। যেমন কানাডায় ১২ লাখ কানাডীয় ডলার বিনিয়োগ করতে হয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক অভিবাসন প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্যানুসারে, ইউরোপের দেশ মাল্টায় নাগরিকত্ব পেতে ছয় লাখ ইউরো বিনিয়োগ করতে হয়। ইউরোপের আরেক দেশ নর্থ মেসিডোনিয়ায় দুই লাখ ইউরো বিনিয়োগের বিনিময়ে পাওয়া যায় নাগরিকত্ব। ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থল তুরস্কের ক্ষেত্রে এই অঙ্ক চার লাখ মার্কিন ডলার।

ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে এন্টিগুয়া ও বারমুডার নাগরিকত্ব পাওয়া যায় ২ লাখ ৩০ হাজার ডলার বিনিয়োগের বিনিময়ে। ডমিনিকান রিপাবলিকের ২ লাখ মার্কিন ডলার; গ্রেনাডায় ২ লাখ ৩৫ হাজার ডলার, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ও সেন্ট লুসিয়ায় ২ লাখ ৪০ হাজার ডলার বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। ওশেনিয়া অঞ্চলের নাউরুতে নাগরিকত্ব মেলে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে। এ ছাড়া কোস্টারিকায় ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং পানামায় ১ লাখ ডলার বিনিয়োগের বিনিময়ে পাওয়া যায় নাগরিকত্ব।

আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে মিসরের নাগরিকত্ব পাওয়া যায় ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার বিনিয়োগের বিনিময়ে। মধ্যপ্রাচ্যের জর্ডানে ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব মেলে।

এ ধরনের নাগরিকত্ব বিক্রির কর্মসূচি নিয়ে সারা বিশ্বেই সমালোচনা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে উন্নত দেশগুলোতে অর্থ চলে যাচ্ছে। ট্রাম্পের নতুন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া আরও জোরদার হবে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা। সূত্র : প্রথমআলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়