শিরোনাম
◈ ভারতে শেখ হাসিনার ৭ মাস, যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে জনগণ ◈ যে কারণে সামরিক ফ্লাইট স্থগিত করল ট্রাম্প প্রশাসন ◈ গত কয়েক দিন ধরে বেড়েছে অগ্নিদুর্ঘটনা, যে সতর্কবার্তা দিল সেনাবাহিনী ◈ লন্ডনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ওপর হামলার চেষ্টা (ভিডিও) ◈ নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন করা হচ্ছে: শ্রম উপদেষ্টা ◈ চাঁদপুরে রমজান উপলক্ষে কার্ড ছাড়াই দেয়া হচ্ছে টিসিবির পন্য ◈ অপরাধ বৃদ্ধিতে তরুণদের মনে ক্ষোভ ও বিস্ময়! ◈ সরকারি যানবাহনের চালকরা আইন অমান্য করলেই ব্যবস্থা: গণবিজ্ঞপ্তি ◈ এবার মুশফিককে নিয়ে মাশরাফির আবেগঘন পোস্ট ◈ টাকা আদায়ে ড. ইউনূসকে চিঠি দেবেন আফ্রিদি, যা বললেন বিসিবিপ্রধান

প্রকাশিত : ০৫ মার্চ, ২০২৫, ১২:০২ দুপুর
আপডেট : ০৬ মার্চ, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

বাংলাদেশ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন, জামায়াতে আমার অনাস্থা, বার্তাসংস্থা পিটিআইকে অমর্ত্য সেন

এল আর বাদল : বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন নোবেল পুরস্কার বিজেতা অমর্ত্য সেন। বার্তাসংস্থা পিটিআই-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেছেন, তার বন্ধু মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কিন্তু অচলাবস্তা কাটাতে তাকে অনেকদূর যেতে হবে।

অমর্ত্য সেন বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি তাকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছে। কীভাবে বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে পারবে তা নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। -ডয়েচেভেলে

শান্তিনিকেতনের বাড়িতে বসে বার্তাসংস্থা পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ বরাবর জামায়াতের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল, তাদের উচিত ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি প্রশংসাযোগ্য দায়বদ্ধতা  দেখানো।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি প্রভাবিত করে
অমর্ত্য সেন বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, কারণ, আমার মধ্যে বাঙালিত্বের বোধ প্রবল। তিনি বলেছেন, আমি জীবনের অনেকটা সময় ঢাকায় কাটিয়েছি। সেখানেই আমি আমার স্কুলের শিক্ষা শুরু করি। এছাড়া আমি অনেকবার আমার মানিকগঞ্জে আমার পৈত্রিক বাড়িতে গেছি। আমি বিক্রমপুরে, বিশেষ করে সোনারংয়ে আমার মামার বাড়িতেও নিয়মিত গেছি। আমার কাছে এই সব জায়গাগুলির আলাদা গুরুত্ব আছে। আমার কাছে খুবই উদ্বেগের বিষয় হলো, বাংলাদেশ কীভাবে বর্তমান অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসবে।

অমর্ত্য সেন ঢাকায় সেন্ট গ্রেগরিস স্কুলে তার প্রথাগত শিক্ষা শুরু করেন। পরে তিনি শান্তিনিকেতনে চলে আসেন এবং বিশ্বভারতীতে লেখাপড়া শুরু করেন।

বাংলাদেশের সাফল্য
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের প্রগতি নিয়ে অমর্ত্য সেন বলেছেন, 'বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। একটা সময় তা ভারতকেও পিছনে ফেলে দেয়। তাদের জন্মহার কমেছে। ভারতের তুলনায় গড় আয়ু বেশি। তিনি বলেছেন, 'গ্রামীন ব্যাংক ও ব্র্যাকের মতো সরকারের বাইরে থাকা সংগঠনগুলির সহায়তায় বাংলাদেশ আর্থিক ও সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে, বিশেষ করে মেয়েদের অধিকারের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ হয়েছে।

অমর্ত্য সেন মনে করেন, বাংলাদেশের সংবাদপত্র তুলনামূলকভাবে স্বাধীন। কঠোর সরকার-বিরোধী অবস্থান নিয়েও তারা চলতে পেরেছে। বাংলাদেশের সেনাও সংযত আছে। তারা অন্য দেশের মতো ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেনি।

সবাইকে নিয়ে চলতে হবে
তবে তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ''আওয়ামী লীগকে যেন নিষিদ্ধ করা না হয়। তাহলে আওয়ামী সরকার যে ভুলটা করেছিল, তারই পুনরাবৃত্তি হবে।

তিনি বলেছেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশ যেন সবাইকে নিয়ে চলার ঐতিহ্য বজায় রাখে, কোনো একটি গোষ্ঠীর দিকে চলে না যায়। এর জন্য একটা বৃহত্তর ও প্রসারিত দৃষ্টিুভঙ্গি প্রয়োজন। আমার আশা, স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদের প্রতি বাঙালিদের দায়বদ্ধতা থাকবে। আমি আশা করি, ভবিষ্য়ৎ নির্বাচন দৃশ্যত অনেক বেশি অবাধ হবে। সেখানে পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে। বাংলাদেশ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন ঠিকই, তবে আমার আশা শেষ হয়ে যায়নি।

ইউনূসের উপর আস্থা আছে
মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে অমর্ত্য সেনের বক্তব্য, ইউনূস আমার ভালো বন্ধু। আমি জানি, তিনি খুবই দক্ষ। তিনি একজন অসাধারণ মানুষ। তিনি বাংলাদেশের ধর্মনিরপক্ষতা নিয়ে, গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতার কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন। যদি কেউ হঠাৎ করে দেশের প্রধান হয়ে যান, তাহলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশে ইসলামভিত্তিক দল আছে, হিন্দু সংগঠনও আছে। তবে ইউনূসের দক্ষতার উপরে আমার গভীর আস্থা আছে।

সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে

তবে তিনি হিন্দুদের উপর আক্রমণ ও মন্দির ভাঙার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, এই ধরনের সহিংসতা বন্ধ করা সরকার এবং সাধারণ মানুষ দুজনেরই দায়িত্ব।

তিনি বলেছেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার গর্ব অনুভব করে। তারা জামায়াতের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতেও মসজিদের উপর আক্রমণ হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা ভারত বা বাংলাদেশ যেখানেই হোক না কেন, অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।

তার মতে, কিছু ঘটনাকে বাড়িয়ে চড়িয়ে দেখিয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকানি দেয়ার মতো সহজ কাজ আর নেই। এভাবেই ১৯৪০-এর পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা প্রবল হয়েছিল। এর ফলে রক্তপাত হয়েছে। আমাদের অতীতের দিকে ফিরে তাকাতে হবে, আর তার আলোয় ভবিষ্যতের দিকে দেখতে হবে। বাছাই করে কিছু ঘটনার প্রচার খুবই ভয়ংকর হয়ে ওঠে।

জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান সোমবার ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। বাংলাদেশের ‘দেশপ্রেমিক' জনগন তা সহ্য করবেন না।

তিনি বলেছেন, ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সম্প্রতি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অনাকাক্সিক্ষত নাক গলানোর মতো কথা বলেছেন। জানি না তাঁর বিবেক কোথায়? বাংলাদেশকে সহনশীলতার সবক দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। তিনি যে দেশে এবং সমাজে বসবাস করেন, সেই সমাজের আয়নায় নিজেকে দেখার চেষ্টা করুন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়