শিরোনাম
◈ এলপি গ্যাসসহ যেসব পণ্যে ভ্যাট তুলে দিলো এনবিআর ◈ শান্তিরক্ষা মিশন এলাকা সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক পরিদর্শনে গেলেন সেনা প্রধান ◈ গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, সিদ্ধিরগঞ্জে নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৮   ◈ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি মির্জা ফখরুল ◈ রাজধানীর শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেলে ভয়াবহ আগুন, নিহত ৪ (ভিডিও) ◈ সরকারি প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের রায় স্থগিত ◈ জাতীয় নাগরিক পার্টি জনগণের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারবে? আছে চ্যালেঞ্জ ◈ এবার জানা গেল খালেদা জিয়ার আসনে কে হচ্ছেন জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী! ◈ রিয়াল সোসিয়েদাদকে ৪-০ গোলে হারালো বার্সেলোনা ◈ অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াত আমির

প্রকাশিত : ০২ মার্চ, ২০২৫, ০৮:১৪ রাত
আপডেট : ০৩ মার্চ, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কী আছে ইউক্রেনের মাটির নিচে, যা নিয়ে এত কাড়াকাড়ি?

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ইউক্রেনের নেতা ভোলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাকবিতণ্ডা দুইদেশের মধ্যে হতে চলা বহুল আলোচিত এক চুক্তি ভেস্তে দিয়েছে। চুক্তিটি হলে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ সম্পদের বিশাল মজুদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা তৈরি হতো।

কিন্তু হোয়াইট হাউসের বৈঠকে নির্ধারিত সময়ের আগেই জেলেনস্কি হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সহায়তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞ কিনা তা নিয়ে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে ট্রাম্প এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে কথা কাটাকাটির পর ওই ঘটনা ঘটে।

ওই চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরির প্রস্তাবের রূপরেখা দেওয়া আছে, যেন ভবিষ্যতে ইউক্রেনের বিরল এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের মজুদ এবং দেশটির তেল ও গ্যাস খাত থেকে পাওয়া অর্থ ব্যবহারের পরিকল্পনা করা যায়।

কী আছে ওই চুক্তিতে: চুক্তিতে একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল তৈরির কথা আছে। তহবিলটির লক্ষ্য হবে, ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে দেশটির পুনর্গঠন, আরও উন্নয়ন প্রকল্প, অবকাঠামো এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগের জন্য ইউক্রেনে আবারও বিনিয়োগ করা।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পদ থেকে হওয়া আয়ের ৫০ শতাংশ ইউক্রেন যৌথ তহবিলে যোগ করবে। কিন্তু বাকি ৫০ শতাংশ কোথা থেকে আসবে এবং তহবিলের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখবে, তা স্পষ্ট নয়।

ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধিকে সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করার জন্য ইউক্রেনের প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রর সমর্থন করবে। কিন্তু সরাসরি কোনো নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে না।

ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র কত সাহায্য পাঠিয়েছে : এর আগে মার্কিন সামরিক সাহায্য এবং ইউক্রেন যে সহায়তা পেয়েছে তার, বদলা হিসেবে ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে ৫০০ বিলিয়ন ডলার সম্ভাব্য রাজস্ব পাওয়ার অধিকার দাবি করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ প্রদান করেছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি সংখ্যাটি আবারও বলেছেন। কিন্তু জেলেনস্কির দাবি, ইউক্রেনে মার্কিন সাহায্য আসলে অনেক কম।

ইউক্রেনে কী কী খনিজ আছে : ইউক্রেনের অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ইউরোপিয় ইউনিয়নের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, এমন ৩৪টি খনিজ পদার্থের মধ্যে ২২টিরই মজুদ ইউক্রেনে রয়েছে। দেশটিতে বিরল মৃত্তিকা মৌলেরও মজুদ রয়েছে। ওই ১৭টি ধাতুর খনিজ ইলেকট্রনিক্স, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নত প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়।

জাতিসংঘের রাশিয়ান ভাষার সংবাদ পরিষেবা অনুসারে, ২০২২ সাল পর্যন্ত ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ পৃথিবীব্যাপী সরবরাহের হার ছিল প্রায় ৫ শতাংশ। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের মধ্যে রয়েছে মূল্যবান ধাতু, ফেরোঅ্যালয়, টাইটানিয়াম, যারকোনিয়াম, গ্রাফাইট এবং লিথিয়াম।

পৃথিবীব্যাপী টাইটানিয়ামের উৎপাদনের ৭ শতাংশ ইউক্রেন থেকে আসে। দেশটির লিথিয়াম মজুদ এখনো ব্যবহার শুরু হয়নি বলা যায়। এর পরিমাণ আনুমানিক ৫ লাখ টন, যা ইউরোপের অন্যতম বড় মজুদ হিসেবে বিবেচিত। আরও আছে গ্রাফাইট, লিথিয়াম, যারকোনিয়াম, বেরিলিয়াম এবং ল্যান্থেনাইড বর্গের কয়েকটি ধাতু।

কার্বনের নরম, ধূসর-কালো ধরন গ্রাফাইট। এটি ধাতুর মতো তাপ এবং বিদ্যুৎ পরিবহন করে। কিন্তু এটি সহজে বিক্রিয়া করে না এবং তাপও পরিবহন করে না। লুব্রিকেন্ট, মোটর ব্রাশ, ঘর্ষণ উপকরণ এবং ব্যাটারি তৈরিতে এটি কাজে লাগে।

লিথিয়াম একটি নরম, রুপালি ধাতু যা খুব হালকা এবং অত্যন্ত সক্রিয়। ব্যাটারি, সিরামিক, কাচ, অস্ত্র এবং নিউক্লিয়ার ফিউশন ঘটাতে ধাতুটি ব্যবহৃত হয়।

শক্তিশালী, হালকা এবং ক্ষয়-প্রতিরোধী ধাতু টাইটানিয়াম। এটি বিমান, চিকিৎসা ইমপ্লান্ট এবং ক্রীড়া সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

যারকোনিয়ামও শক্তিশালী, ক্ষয়-প্রতিরোধী ধাতু। পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর, মহাকাশ প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা ইমপ্লান্ট তৈরিতে এর ব্যবহার আছে।

বেরিলিয়াম একটি হালকা, শক্তিশালী এবং তাপ-প্রতিরোধী ধাতু। মহাকাশ, ইলেকট্রনিক্স এবং পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর প্রযুক্তিতে এটি কাজে লাগে।

চৌম্বকীয়, পরিবাহী এবং আলোকিত বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত মূল্যবান ধাতুগুলোর গ্রুপ ল্যান্থেনাইডস। ইলেকট্রনিক্স, ব্যাটারি এবং পুনরায় ব্যবহারযোগ্য শক্তির প্রযুক্তি নির্মাণে ধাতুগুলো প্রয়োজন।

এই খনিজগুলো ইউক্রেনের ঠিক কোথায় : বেলগ্রেড এবং নিউইয়র্কে নিবন্ধিত পাবলিক পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (সিআইআরএসডি) অনুসারে, ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর আগে, ইউক্রেন ২০ হাজার খনিজ সম্পদ নিবন্ধন করেছিল। সেসবের মধ্যে ৮ হাজার ৭০০টি প্রমাণিত। সেগুলো পৃথিবীব্যাপী ব্যবহৃত ১২০টি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ধাতু এবং খনিজের মধ্যে ১১৭টি ধারণ করে।

দেশটিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উত্তোলনযোগ্য কয়লা, গ্যাস, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, আকরিক, টাইটানিয়াম এবং ইউরেনিয়ামের কিছু মজুদ রয়েছে। খনিজগুলোর বেশিরভাগই লুহানস্ক, ডনেস্ক, জাপোরিঝিয়া, ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক, কোরোভোগ্রাদ, পোলতাভা এবং খারকিভ অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে।

বর্তমানে ইউক্রেনের যে প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার অধিকারে গেছে, সেসব এলাকার মধ্যে লুহানস্ক, ডনেস্ক এবং জাপোরিঝিয়ার বিশাল অংশও রয়েছে। ইউক্রেনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক উই বিল্ড ইউক্রেন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের অনুমান অনুসারে, ইউক্রেনের ধাতব সম্পদের প্রায় ৪০ শতাংশের ওপর এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ইউক্রেন বলছে, তাদের বিরল খনিজ উপাদানগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ডনেস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে অবস্থিত। দেশটির বৃহত্তম লিথিয়াম মজুদের মধ্যে একটি, শেভচেঙ্কো লিথিয়াম আকরিক ক্ষেত্র, ডনেস্কের একটি গ্রামীণ জনবসতিতে অবস্থিত।

ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ কত : ইউক্রেন সরকারের বিনিয়োগ প্রচার অফিস, ইউক্রেন ইনভেস্টের মতে, তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলো দেশটির পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত, যা এখন মূলত রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। ওই সম্পদগুলোর দখল হারানো কেবল ইউক্রেনের অর্থনীতিকেই প্রভাবিত করেনি বরং পৃথিবীব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকেও ব্যাহত করেছে। এর ফলে বিশেষ করে উন্নত প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাত প্রভাবিত হচ্ছে।

কিন্তু ইউক্রেন ইনভেস্ট রিপোর্ট করেছে যে, যুদ্ধ চলার পরেও খনি খাত দেশটির অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বহাল আছে। নিরাপদ অঞ্চলে খনিজ উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। উৎস: বাংলানিউজ২৪

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়