অনুজ দেব বাপু, চট্টগ্রাম : চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে যেভাবে প্রতিদিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাচ্ছি সেভাবে রমজানের প্রথম দিন থেকেই বাজারে যাব। আমার সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। যদি কেউ ওজনে কম দেয় বা পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দেয়, তাকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ অভিযান শুধু একদিনের জন্য নয়, পুরো রমজান মাস জুড়েই চলবে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় মেয়র এ হুঁশিয়ারি দেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) রাজস্ব বিভাগের উদ্যেগে রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় অন্যদের মধ্যে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামালসহ চসিক, জেলা প্রশাসন, পুলিশ, ক্যাবসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মেয়র বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো হয়, অথচ বাংলাদেশে ঠিক উল্টোটা ঘটে। রমজান এলেই দাম বেড়ে যায়, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সংযমের মাস। যদি আমরা এই মাসেও নৈতিক চরিত্র ঠিক রাখতে না পারি, তবে আর কোনো সুযোগ নেই। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় ন্যায্য ব্যবসা ও সততার পথ অনুসরণ করতে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফার লোভে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা একেবারেই অনৈতিক।
চলমান খাল উদ্ধার ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আমরা চকবাজারসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু তারপরও কিছু মানুষ আবারও বসার চেষ্টা করছে। সন্ধ্যার পর তারা দোকান বসিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। আমরা বারবার উচ্ছেদ করছি, তবে এ দায়িত্ব এলাকাবাসীকেও নিতে হবে। যদি কেউ জোরপূর্বক জায়গা দখল করে বসে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। যদি কোন অসাধু চক্র সশস্ত্র হয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে, তবে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
মেয়র শাহাদাত বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করার জন্য আমরা স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম চালু করছি। অনেক এলাকায় গাড়িগুলো যথাযথ জায়গায় দাঁড়ায় না, ফলে যানজট তৈরি হয়। আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। যতবারই অবৈধ পার্কিং বা ফুটপাত দখল উচ্ছেদ করা হয়, কিছুদিন পর আবার একই অবস্থা ফিরে আসে। এ জন্য মার্কেট কমিটি, প্রতিটি থানা ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আমরা খাল পরিষ্কার করছি, কিন্তু অনেকেই খালে ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিন ফেলছে। এটি নগরবাসীর দায়িত্ব যে তারা যেন সচেতন হয় এবং খাল দূষণ না করে। প্রশাসন নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তবে নাগরিকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।
সভায় বিভিন্ন প্রতিনিধি আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি জানান। দাবিগুলি হলো- সড়কে অবৈধভাবে বসা হকারদের উচ্ছেদ করা, পণ্যের সঠিক মূল্য তালিকা প্রদর্শন এবং এর মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা, পণ্যের সাপ্লাই চেইন সঠিকভাবে পরিচালনা করা, আমদানি পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ, রমজান মাসে ট্রাফিক জ্যাম কমানোর জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ ও পণ্যের ওজন সঠিকভাবে দেওয়া নিশ্চিত করা।