মহসিন কবির: উত্তর-পূর্ব ভারতের সপ্তভগিনী রাজ্যসমূহ. উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম ও মেঘালয় এই সাত পার্শ্ববর্তী রাজ্য একত্রে সপ্তভগিনী রাজ্য, সাত বোন রাজ্য বা সেভেন সিস্টার্স নামেও পরিচিত।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ স্থল-সীমান্ত, তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই কিন্তু এই সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে। আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায়, সাতটির মধ্যে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, সেভেন সিস্টার্স-ভুক্ত এই রাজ্যগুলোর বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী অতীতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকেই অবাধে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।
ফলে ভারতের এই অঞ্চলটির ওপর প্রতিবেশী বাংলাদেশের যে একটা ‘স্ট্র্যাটেজিক লিভারেজ’ বা কৌশলগত সুবিধা আদায়ের পরিসর আছে, সে বিষয়ে পর্যবেক্ষকরা প্রায় সবাই একমত।
সেভেন সিস্টার্সের সবচেয়ে বড় রাজ্য আসামের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা একাধিকবার প্রকাশ্যেই বলেছেন, বাংলাদেশ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আলফা-র নেতাদের ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে বলেই আসাম আজ এত ‘শান্তিপূর্ণ’, রাজ্যের লোক ‘রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন।
মিজোরামের দু’দুবারের মুখ্যমন্ত্রী, মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের সর্বোচ্চ নেতা জোরামথাঙ্গা দুই বছর আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাংলাদেশের সাহায্য না-পেলে তাদের মিজো জাতীয়তাবাদী আন্দোলন কখনওই সাফল্যের মুখ দেখত না এবং মিজোরাম একটি পৃথক রাজ্য হিসেবেও হয়তো আত্মপ্রকাশ করতে পারত না।
সেভেন সিস্টার্সের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের আর একটি বড় উপহার ছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া।
এই দুটি বন্দর ব্যবহারের সুযোগ স্থলবেষ্টিত সেভেন সিস্টার্সকে শুধু সামুদ্রিক বাণিজ্যের নতুন দিগন্তই খুলে দেয়নি, ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ভৌগোলিক দূরত্বও অনেক কমিয়ে দিয়েছে। মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে সেই সুযোগ আরও বাড়বে নিশ্চিতভাবে।
মিয়ানমারের মধ্যে দিয়ে ভারত যে কালাদান মাল্টিমোডাল প্রোজেক্ট বাস্তবায়নের কাজে হাত দিয়েছিল, সেটার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাও অনেক কমে গিয়েছিল বাংলাদেশ সরকারের ওই সিদ্ধান্তের ফলে।
বছর কয়েক আগে শেখ হাসিনা ঢাকায় এক সাংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘ভারতকে আমি যা দিয়েছি, তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’
দুই দেশেই পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা ধারণা করেন, তিনি সেদিন সেভেন সিস্টার্সে শান্তি ও প্রগতি ফিরিয়ে আনার দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন।
শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতের সাবদিকে থেকে ভারতের মাথায় বাস পড়েছে। বাংলাদেশে ফাদে ফেরতে বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বন করতেছে। মিথ্যা রটনা রটিয়ে তার প্রচার করছে।
তাতেও ক্ষ্যন্ত হননি, আমেরিকায় গিয়ে চেয়েছেন মার্কিন প্রসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্যাম্পের মন গলাতে। কিন্ত সেটা পারেননি ভারতের নরেন্দ্র মোদি। মোদির সফরের দিনে ভারতের প্রতি অতিরিক্ত ট্যাক্স আরব করেছেন ট্যাম্প। ইলন মাস্কের সঙ্গে অলাপ করেও বরব গলাতে পরেননি মোদি। ইলন মাস্কে জানান, ষ্টার লিঙ্কের ব্যবসা প্রসারিত হবে বাংলাদেশ থেকেই।
সেভেন সিস্টার্স প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নেপাল জলবিদ্যুৎ দিতে রাজি, আমরা নিতে রাজি। মাঝখানে ভারতের ৪০ কিলোমিটার পথ বাধা হয়ে আছে। তবে আশা করি ভারত তাদের স্বার্থের কারণেই দেবে। বাংলাদেশকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। অর্থনীতি হলো আমাদের পণ্য নেপালে যাবে, সেভেন সিস্টার্সে যাবে। প্রতিবেশীদের পণ্য আমাদের এখানে আসবে, এভাবেই একটি লাভজনক অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে যাবে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জেলা প্রশাসক এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।
হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, হতাশ হবেন না, আমি হতাশ হই না। আমাদের এখানের মানুষদের এক সময় বোঝা মনে করা হতো। আমি তাদের সম্পদ মনে করি। আগামী দিনে আমাদের এখান থেকে অনেক কর্মী নেয়া হবে। আমরা তেমন করেই নিজেদের গড়ে তুলতে চাই।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আমরা খুবই সুবিধাজনক অবস্থায় আছি। এই সুবিধা নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাজ করতে পারলে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে আমাদের ভালো করার সুযোগ আছে।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ভারতের টেলিভিশন এনডিটিভি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সেই সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে চারদিকে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিবেশী মিয়ানমার, ভারতের সেভেন সিস্টার্স, পশ্চিমবঙ্গ সব জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়বে অস্থিরতা।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগই তরুণ। তারা কখনও ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। কাজেই গণতন্ত্র নিশ্চিতের মাধ্যমে তাদের খুশি করা উচিত। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম কখনও ভোটকেন্দ্রে যায়নি কারণ বাংলাদেশে ওই নির্বাচনগুলো আসলে হয়নি। তরুণরা যাতে বুঝতে পারে দেশে গণতন্ত্র রয়েছে এটি নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করেন, তা মিয়ানমারসহ বাংলাদেশের চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে এবং পশ্চিমবঙ্গের সেভেন সিস্টার্সে ছড়িয়ে পড়বে। এটি আমাদের চারপাশে এবং মিয়ানমারের সর্বত্র আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো হবে। বড় সমস্যা হবে, কারণ এখানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :