শিরোনাম
◈ পার্কে ৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সাবেক এমপি সালাহউদ্দীন গ্রেফতার ◈ নির্বাচনে ডিসিদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের নির্দেশ ◈ উত্তরার কিশোর গ্যাং নেতা শিশির গ্রেফতার ◈ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ও ছাত্রদলের পাল্টাপাল্টি অবস্থান ◈ উত্তপ্ত খুলনা: ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের সমাবেশ শিববাড়ি মোড়ে ◈ যে ছাত্রলীগ হতে চাইবে, তার পরিণতি ছাত্রলীগের মতোই হবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ ◈ জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা স্পষ্ট হওয়া দরকার : পরিবেশ উপদেষ্টা  ◈ ‘বিইআরসির অনুমোদন ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যাবে না’  ◈ কেউ বলতে পারবেন না আমরা কোনও পত্রিকাকে রিপোর্ট নামিয়ে ফেলতে বলেছি: শফিকুল আলম ◈ ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের উৎপাদন কমেছে ৪১ মিলিয়ন

প্রকাশিত : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৬:২৩ সকাল
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৯০টি একাডেমি প্রশিক্ষণ দেয় গাজা গণহত্যায় জড়িতদের

পার্সটুডে- ইসরাইলি স্থলবাহিনীর ৪০% কর্মকর্তা নির্বাচিত হয় উগ্র ইহুদিবাদী-খ্রিস্টান সামরিক স্কুল থেকে। এইসব স্কুল উগ্র ইহুদিবাদী-খ্রিস্টানদের পরিচালিত।

আর এইসব স্কুল থেকে পাস-করা বা বের হওয়া বর্ণবাদী ছাত্ররা সেনা-কর্মকর্তা হিসেবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যায় ভূমিকা রেখেছে বলে  ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর থেকেও স্পষ্ট হয়েছে। ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ-এর ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন ও একটি প্রবন্ধ থেকে জানা যায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ২৫২ নম্বর ব্রিগেডের প্রধান ইহুদা ফ'খ স্পষ্টভাবে এমন কিছু নির্দেশ দিয়েছেন যেগুলো গাজায় যুদ্ধ-অপরাধের দৃষ্টান্ত।  

২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর ইয়ানিউ কুউবুয়িচ এক প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন যার শিরোনাম ছিল এরকম:  'গাজায় কোনো বেসামরিক ব্যক্তি নেই, সবাই সন্ত্রাসী: নেতজারিম চেক-পয়েন্টে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারে ইসরাইলি সেনাদের সাক্ষ্য'। 

২০২৫ সালের পয়লা জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল এরকম: 'গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও ত্রাণ সহায়তা বন্ধ করা: নেতজারিম চেক-পয়েন্টে মোতায়েন ইসরাইলি সেনাদের কমান্ডারের নির্দেশ'। এ সম্পর্কে একটি প্রধান সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয় ২০২৫ সালের দোসরা জানুয়ারি। ওই সম্পাদকীয়টির শিরোনাম ছিল: 'ফ'খের ব্যক্তিগত সেনা এবং ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক কাঠামো ও বিদ্রোহী কমান্ডারদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিভেদ বা দূরত্ব সৃষ্টি'। আর এইসব প্রামাণ্য লেখা থেকে স্পষ্ট যে গাজার বাইত হানুন, জাবালিয়া ও আশপাশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালানো হয়েছে। 

বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর সরাসরি গুলি বর্ষণের নির্দেশ 

যে প্রামাণ্য রিপোর্টগুলোর কথা বলা হল সেগুলো থেকে বোঝা যায় ইসরাইলি সেনা কমান্ডার গাজার অধিবাসীদের 'মানব-পশু' হিসেবে উল্লেখ করেছে। আর এরই ভিত্তিতে নেতজারিম ক্রসিং পয়েন্টে একটি কল্পিত সীমারেখা টানা হয়েছে যে সীমানা আগেভাগে না জানিয়ে অতিক্রম করা মাত্র ফিলিস্তিনিরা মৃত্যুদণ্ডের শিকার হন। ইহুদা ফ'খ এর সুস্পষ্ট নির্দেশ অনুযায়ী এই সীমা অতিক্রমকারী ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ বা শিশু যে-ই হোক না কেন তার ওপর অবশ্যই গুলি চালাতে হবে। এই কমান্ডার বলেছিল: 'গাজায় কোনো বেসামরিক ব্যক্তি নেই, এরা সবাই-ই সন্ত্রাসী!' গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার দীর্ঘ পাঁচ মাস পর ইসরাইলের এইসব পদক্ষেপের কথা ফাঁস হয় যখন একদল ইসরাইলি সেনা ও কর্মকর্তা এই নৃশংস অপরাধযজ্ঞের ব্যাপারে শিহরিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন যে তারা এ ব্যাপারে আর নিরব থাকবেন না। তা সত্ত্বেও ফ'খ-এর কমান্ডের আওতায় থাকা বেশিরভাগ সেনা কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই এইসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছে। 

লাশগুলোর অক্ষ ও নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ

 ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ 'লাশগুলোর অক্ষ' নামে একটি এলাকার কথা উল্লেখ করে লিখেছে যে হত্যাযজ্ঞের শিকার ফিলিস্তিনিদের লাশ এখানে ফেলা হয়েছে এবং এসব লাশের ওপর লেলিয়ে দেয়া হয়েছে ভবঘুরে কুকুরের পাল।  এই অঞ্চল সম্পর্কেই ইহুদিবাদী ইসরাইলের সেনা মুখপাত্র বলেছে যে 'এই অঞ্চলে ২০০ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে'। একজন  ইসরাইলি সেনা-কর্মকর্তা এই দৈনিককে তথা হারেৎজকে জানিয়েছেন, এই ২০০ জন ফিলিস্তিনির মধ্যে কেবল দশ জন ছিল হামাসের সদস্য! 

ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর কেবল ২৫২ নম্বর ব্রিগেডই যে এমন অপরাধযজ্ঞে জড়িত ছিল তা নয় ইসরাইলের অন্যান্য সেনা ইউনিটগুলোও এই একই কৌশল বাস্তবায়ন করেছে। ব্রিগেড-৯০-এর একজন রিজার্ভ সেনা সাক্ষ্য দিয়েছে যে কল্পিত এই অঞ্চল দিয়ে একজন পিতা ও তার দুই সন্তান যখন অগ্রসর হচ্ছিলেন তখন কোনো সতর্ক সংকেত না দিয়েই তাদের হত্যা করা হয়। ওই সেনাটি বলেছে, ওরা আমাদের জন্য কোনো হুমকিই ছিল না। আমরা যা করেছি তা ছিল চরম নিকৃষ্ট দুরাচার। 

ফ'খের অপরাধযজ্ঞ ও ক্ষুদে নেপোলিয়ন

 ইহুদা ফ'খ তার কমান্ডের সীমানার ভেতরে কোনো ধরনের বাছ-বিচার না করেই হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। তার কোনো কোনো সেনা তাকে ক্ষুদ্র নেপোলিয়ন বলে উল্লেখ করে।   হামাস নেতা ইয়াহিয়া আস সিনাওয়ার-এর শাহাদাতের পর ২০২৪ সালের তথা গত বছরের ১৬ অক্টোবর ফ'খ তার সেনাদের এক বৈঠকে এই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করে যে 'কেন সিনাওয়ারকে টুকরো টুকরো করার অভিযানে' সে উপস্থিত হতে পারেনি ও কেনো নিজ চোখ দিয়ে তথা সরাসরি সিনাওয়ারের পবিত্রতার ধ্বংস সাধন  দেখতে পারেনি। এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকেই সে এইসব মন্তব্য করে বলে একজন ইসরাইলি সেনা জানায়।  তদন্তে জানা গেছে ফ'খ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই নির্দেশ জারি করেছে এবং একদল আধা-সামরিক ব্যক্তিকে নিয়ে নিজস্ব ব্যক্তিগত সেনাবাহিনীও গঠন করেছে। গোলান ফ'খ এদেরকে গাজা অঞ্চলে নিয়ে আসে যাতে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়নি এমন এলাকাগুলোও পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া যায়।  

ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীতে উগ্র খ্রিস্টানদের অনুপ্রবেশ 

এইসব অপরাধ ফাঁস হওয়ার পর ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র বলেছে, এইসব অভিযানই সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে করা হয়েছে এবং ব্রিগেড কমান্ডারের সিদ্ধান্তগুলো ছিল পেশাদারসুলভ ও সুবিবেচিত।

ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর কর্তৃপক্ষ নানা মিথ্যা কথা বলে এইসব অপরাধে জড়িত উগ্র কমান্ডারদের কোনো বিচার করেনি, বরং তাদের প্রশংসা করেছে। ফখের প্রতি ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চতর মহলের সমর্থন ও সেখানে ইহুদিবাদী খ্রিস্টানদের  প্রভাব থেকে বোঝা যায় গত তিন দশকে ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীতে এই উগ্র খিস্টানরা তাদের প্রভাব কত গভীরভাবে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই উগ্র গ্রুপেরই এক সদস্য ১৯৯৪ সালে হযরত ইব্রাহিম-আ'র পবিত্র মাজার সংলগ্ন  মসজিদে পবিত্র রমজান মাসে এক গণহত্যা অভিযান চালিয়ে ২৯ জন রোজাদার ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে আহত করে। গবেষণায় দেখা গেছে ইসরাইলি স্থলবাহিনীর ৪০% কর্মকর্তা নির্বাচিত হয় উগ্র ইহুদিবাদী-খ্রিস্টান সামরিক স্কুল থেকে। অথচ ১২০ আসনের ইসরাইলি সংসদ নেসেটে তাদের আসন রয়েছে মাত্র ১৩টি। এই গ্রুপের সেনারা যে কোনো সেনা অভিযান চালানোর আগে শত্রুর ধ্বংসের জন্য ইহুদিদের খোদার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করে।

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যায় জড়িতদের বেশিরভাগই এই স্কুলের। এরা পৈশাচিক নির্যাতনের জন্য বেশ কুখ্যাত। বন্দিদের ওপর যৌন নির্যাতন ও ৭৮ বছরের বৃদ্ধ ফিলিস্তিনিকে হত্যার সঙ্গেও এই গ্রুপ জড়িত। ইহুদা ফ'খ ছিল বনি দাউদ নামক একটি সামরিক স্কুলের ছাত্র যেখানে শেখানো হত যে হিটলার ভুল লক্ষ্য নির্বাচন করেছিল।  এই উগ্র ইহুদিবাদী খ্রিস্টান গ্রুপের দখলে রয়েছে বহু সংবাদপত্র, রেডিও-টেলিভিশন এবং এরা বহু সরকারী অফিসের কাছ থেকে অর্থ পায়। ইসরাইলি সশস্ত্র-বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলোও এরাই নিয়ন্ত্রণ করে।  ১৯৫৩ সাল থেকে একটি বিশেষ ধর্মীয়-সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এইসব উগ্র ইহুদিবাদী গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে এসেছে। ১৯৬৭ সালে এদের একাডেমির সংখ্যা ছিল মাত্র তিনটি,১৯৯০ সালে নাগাদ তা ১৩টিতে উন্নীত হয় এবং বর্তমানে এরকম একাডেমির সংখ্যা প্রায় ৯০টি ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়