শেয়ারের দামের কারসাজি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে হিমাচল প্রদেশভিত্তিক এলএস ইন্ডাস্ট্রিজের প্রোমোটার প্রোফাউন্ড ফাইন্যান্সসহ পাঁচটি সংস্থাকে শেয়ারবাজারে লেনদেন থেকে নিষিদ্ধ করেছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (এসইবিআই)। এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দুবাইভিত্তিক এনআরআই বিনিয়োগকারী জাহাঙ্গীর পানিক্কাভিট্টিল পেরুম্বারামবাথু, যিনি জেপিপি নামে পরিচিত।
এসইবিআইর বরাতে ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এলএস ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার বিক্রি করে ১ কোটি ১৪ লাখ রুপি পেয়েছেন জেপিপি। তিনি প্রথমে মাত্র ১ ডলারে কোম্পানির ১০ কোটি ২৮ লাখ শেয়ার কিনেছিলেন। কোম্পানিটির রাজস্ব প্রায় শূন্য থাকা সত্ত্বেও, শেয়ারমূল্য বেড়ে গিয়ে ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেপিপির হাতে থাকা বাকি শেয়ারগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য ৬৯৮ কোটি রুপিতে পৌঁছায়।
বর্তমানে কোম্পানির শীর্ষ মূল্যায়নে জেপিপির বিনিয়োগ এখন ৩২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। এটি এফইএমএ বিধিমালার লঙ্ঘনের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এসইবিআই লক্ষ্য করেছে, বাজারের শীর্ষস্থানে রয়েছে তাঁর শেয়ারগুলোর। ছোট একটি অংশ বিক্রি করেও, জেপিপি অনেক অর্থ আয় করছেন এবং এর বড় অংশ দুবাইয়ে পাচার করা হচ্ছে।
নিয়ন্ত্রকের দাবি, এলএস ইন্ডাস্ট্রিজ ও এর প্রধান সহযোগীরা কোম্পানির দুর্বল আর্থিক অবস্থার পরও কৃত্রিমভাবে কোম্পানির শেয়ার মূল্য বাড়িয়েছে। কোম্পানির সাবেক পরিচালক সুয়েক মেং চায় জেপিপির কাছে ১ ডলারের বিনিময়ে ১২ দশমিক ১২ শতাংশ শেয়ার স্থানান্তর করেছিলেন, যা পরবর্তীতে মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে বিশাল আকার ধারণ করে।
এসইবিআইর তদন্তে জানা গেছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এবং নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর—এই দুই সময়ের মধ্যে জেপিপির শেয়ার কেনাবেচার কার্যক্রমের সময় শেয়ারমূল্য অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
এছাড়া, ২০২৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, যখন শেয়ারের মূল্য সবচেয়ে বেশি (২৬৭.৫০ রুপি) ছিল, জেপিপি অনেক শেয়ার বিক্রি করেছিলেন। এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তাঁর শেয়ার বিক্রি করার সময় এবং মূল্য বাড়ানোর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক বা কৌশল ছিল কিনা।
এসইবিআইর আশ্বিনী ভাটিয়া মন্তব্য করেছেন, এলএস ইন্ডাস্ট্রিজ, এর প্রোমোটার প্রোফাউন্ড ফাইনান্স এবং জেপিপি একটি প্রতারণামূলক চক্রান্তের অংশ হিসেবে দেখাচ্ছে যা বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করতে চায়। আরও কেউ ভুক্তভোগী হওয়ার আগে ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি।
এলএস ইন্ডাস্ট্রিজ বিশ্বের সবচেয়ে বহুমুখী রোবোটিক খাদ্য প্রস্তুতের প্ল্যাটফর্ম রোবোশেফের অধিগ্রহণের পরিকল্পনার ঘোষণা দিলে এ বিষয়টি আরও মনোযোগ কাড়ে। এসইবিআই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, রোবোশেফের পরিচালকদের আত্মীয়রা, যেমন—সুরেশ গয়াল, আলকা সাহনি ও শশী কান্ত সাহনি শেয়ারগুলোর মূল্য বৃদ্ধির সময় শেয়ার বিক্রি করে উল্লেখযোগ্য লাভ করেছেন।
৫ হাজার ৫০০ কোটি রুপির এলএস ইন্ডাস্ট্রিজের শূন্য রাজস্ব এবং শেয়ারমূল্যের উঠা-নামায় অস্বাভাবিকতাই তাদের কারসাজি প্রকাশ্যে আনে। এ নিয়ে এসইবিআই আরও গভীর তদন্ত চালাচ্ছে। উৎস: আজকের পত্রিকা।
আপনার মতামত লিখুন :