পার্সটুডে-সাবিত মারদাভি অল্প বয়স থেকেই ইহুদিবাদী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু করেছিলেন। পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব বিরোধী প্রতিরোধের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের একজন সামরিক কমান্ডার তিনি। ইহুদিবাদী ইসরাইল ২১ বার তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে।
নি;সন্দেহে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মধ্যে যারা ভারী সাজা ভোগ করেছেন তাদের মধ্যে সাবিত মারদাভি অন্যতম। গেল ২৫ জানুয়ারী ২০২৫ তারিখে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাঠামোর মধ্যে হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে যে বন্দি বিনিময় হয় সে সময় তিনি মুক্তি পান। মেহের নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, সাবিত মারদাভি ১৯৭৬ সালে জেনিনের আরাবাহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠার শুরুতেই ইসলামি জিহাদ আন্দোলনে যোগ দেন তিনি এবং ২০০০ সালে আল-আকসা ইন্তিফাদার সময় তিনি ইসলামি জিহাদের সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেডের অন্যতম কমান্ডার ছিলেন।
আল জাজিরা জানিয়েছে, মারদাভি বিবাহিত এবং ওসামা নামে তার একটি ছেলেও আছে। কিন্তু যেহেতু তাকে ক্রমাগত ইহুদিবাদীরা তাড়া করছিল এবং পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল, তাই তিনি তার ছেলেকে কেবল এক বছর বয়স যখন তখন দেখতে পান। তিনি জেনিনের আরাবাহ শহরের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং ইসরাইলি কারাগারে থাকাকালীন সম্মানসহ ডিপ্লোমা অর্জন করেন। এরপর তিনি অর্থনীতি পড়ার জন্য আল-কুদস আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন কিন্তু পড়াশোনা শেষ করতে পারেন নি।
১৯৮৭ সালে পাথুরে ইন্তিফাদার সূত্রপাত হয় এবং সেটাই প্রথম ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা। সাবিত মারদাভির সাহসিকতা ও বীরত্ব ফাতাহ আন্দোলনের ব্যাটালিয়ন কমান্ডারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তারা তাকে ইহুদি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য নিয়োগ করে।
সাবিত মারদাভিকে প্রথম ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে ৪ বছরের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সে সময় তিনি কারাগারে ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের নেতাদের সাথে পরিচিত হন। ১৯৯৮ সালে ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত পুরো সময়টা তিনি পড়াশোনায় কাটান।
আনোয়ার হামরান এবং আইয়াদ মারদানের শাহাদাতের পর সাবেত মারদাভি জেনিন এর সুরাইয়া আল-কুদস ক্যাম্পসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
দখলদার ইহুদিবাদীরা সাবিত মারদাভিকে পশ্চিম তীরে একজন মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। কারণ তিনি ২০০১ এবং ২০০২ সালে ইহুদি-বিরোধী বেশ কয়েকটি বড় সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এবং সেই বছরের এপ্রিলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
২০০২ সালে শুরু হওয়া জেনিন যুদ্ধে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে মারদাভি অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং দুবার গুলিবিদ্ধ হন।
ইসরাইলি গোয়েন্দা ও গুপ্তচররা সবসময় মারদাভিকে জেনিনের কুদস ব্রিগেডের সামরিক কমান্ডার এবং ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে শাহাদাত পিয়াসী কয়েক ডজন অভিযানের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বিবেচনা করত।
ইসরাইলি কারাগারে ৩ বছর আটক থাকার পর কুদস ব্রিগেডের নেতৃত্ব দেওয়ার এবং কয়েক ডজন ইহুদিবাদীকে হতাহত করার ঘটনায় ধারাবাহিক শাহাদাত পিয়াসী অভিযানের পরিকল্পনা ও পরিচালনার অভিযোগে তাকে ২১ বার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গ্রেপ্তারের পর তিনি ইসলামী জিহাদ আন্দোলনের বন্দীদের জন্য একজন রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এবং দখলদারদের কারাগারে বন্দী আন্দোলনের সকল সংস্থার একজন বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন।
সাবেত মারদাভি বইও লিখেছেন যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল জেনিন শিবিরের ঘটনাবলী নিয়ে লেখা প্রামাণ্য গ্রন্থ। তিনি সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করতেও সক্ষম হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে বন্দী এই ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে ইসরাইল দীর্ঘ সময় ধরে নির্জন কারাগারে বন্দী করে রেখেছিল এবং ২০১৪ সালের আগস্টে দখলদাররা তাকে শাত্তাহ কারাগারে সুড়ঙ্গ খনন এবং পালানোর চেষ্টার অভিযোগে একটি সেলে নিক্ষেপ করে।
ইহুদিবাদী ইসরাইল হামাসের সাথে যত বন্দী বিনিময় চুক্তি হয়েছে সকল চুক্তিতেই সাবিত মারদাভিকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। অবশেষে গত ২৫ জানুয়ারী ২০২৫ তারিখ তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।#
আপনার মতামত লিখুন :