যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)।
পাশাপাশি বাংলাদেশে টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে বাংলাদেশি তদন্তকারীদেরকেও সহায়তা করছে ব্রিটিশ সংস্থা এনসিএ।
সম্প্রতি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তি থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে ঢাকায় সফর করেছেন কয়েকজন ব্রিটিশ কর্মকর্তা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বলা হয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিক ও শেখ হাসিনা ছাড়াও তাদের পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে পাবনার রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনা এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিকও। বলা হচ্ছে, টিউলিপ এতে মধ্যস্থতা করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বর্তমানে টিউলিপ, হাসিনা ও তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই তদন্তে ব্রিটিশ পুলিশের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে ঢাকায় সফর করেছেন কয়েকজন ব্রিটিশ কর্মকর্তা।
সূত্র বলছে, ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে চান, যাতে মামলাটি বিচারের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
শেখ হাসিনার পতনের পর দুদক দেশের প্রধান ব্যাংকগুলোর কাছে টিউলিপ সিদ্দিকের অ্যাকাউন্ট ও লেনদেন-সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছে। একটি অফিশিয়াল বিজ্ঞপ্তিতে, দুদক টিউলিপ ও তার ছয় পরিবারের সদস্যের আর্থিক লেনদেনের তথ্য চেয়েছে।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে বলেন, 'টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে অবৈধ উপায়ে সম্পত্তি অর্জনের সঙ্গে তার কোনো সংযোগ আছে কি না, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা এবং দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে কি না, তা উদ্ঘাটন করা।'
যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছেন টিউলিপ। এ বিষয়ে তার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, 'এই অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি এবং টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে এই বিষয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি।'
তবে এনসিএর এক মুখপাত্র বলেন, 'আমরা সাধারণত আন্তর্জাতিক সহায়তার ধরন সম্পর্কে মন্তব্য করি না। আর এজেন্সি কোনো তদন্ত শুরু করেছে কি না বা কোনো অংশীদার তদন্তে সহায়তা করছে কি না, সে বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করতেও পারি না।'
এই অভিযোগ ছাড়াও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির কাছ থেকে লন্ডনে যথাক্রমে ৭ লাখ ও ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড মূল্যের দুটি ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ ওঠার পর এরইমধ্যে মন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ।
গত মাসে একজন এথিকস অ্যাডভাইজার দেখেছেন যে, টিউলিপ এই কেলেঙ্কারি সম্পর্কে অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দিয়েছেন। এরপরই লেবার পার্টির নেতৃস্থানীয় পদ থেকে তাকে ইস্তফা দিতে হয়েছে।
এনসিএ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, যুক্তরাজ্যেও টিউলিপের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। ব্রিটেনের ব্রাইবারি অ্যাক্ট ২০১০ অনুযায়ী, কেউ বিদেশে ঘুষ গ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে ব্রিটেনে মামলা এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে। অনুবাদ: দেশ রুপান্তর।
আপনার মতামত লিখুন :