মিয়ানমারের মান্দালয় অঞ্চলের নাটোগি টাউনশিপে প্রতিরোধ বাহিনী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) এক অতর্কিত হামলায় এক মেজরসহ অন্তত ২২ জান্তা সেনা নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও আটজনকে জীবিত আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ। প্রতিরোধ বাহিনীর বরাতে এ খবর জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী।
মিয়ানমারে প্রতিরোধ বাহিনীর হামলায় মেজরসহ ২২ সেনা নিহত
পিডিএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) তারা নাটোগি টাউনশিপের মায়া তাউং ও সেইন পান কান গ্রামের মাঝে সেনাবাহিনীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন ৯৯-এর প্রায় ৫০ জন সেনার একটি বহরের ওপর আক্রমণ চালায়। মেজর ইয়ান লিন অং ও ক্যাপ্টেন অং জাও মিন সেনা বহরের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
বিবৃতি অনুযায়ী, ওই সময় উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। এতে ক্যাপ্টেন অং জাও মিনসহ ২১ জন সেনা নিহত হন। পিডিএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সংঘর্ষের পর আমরা ক্যাপ্টেন অং জাও মিনসহ জান্তা বাহিনীর ২১ জন সেনার মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। পরে আমরা খবর পেয়েছি যে আহত মেজর ইয়ান লিন অংও মারা গেছেন। আমরা আটজন জান্তা সেনাকে জীবিত আটক করেছি।’
পিডিএফ বাহিনী এবং স্থানীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো গত বছরের শেষের দিকে মান্দালয় সমতল অঞ্চলের মাইংইয়ান জেলায় একটি বিশেষ অভিযান শুরু করে। যার লক্ষ্য হল জেলার চারটি শহর - মাইংইয়ান, টাউং থা, নাটোগি ও নাগানজুন জান্তা সেনা ও তাদের মিত্র মিলিশিয়াদের হাত থেকে মুক্ত করা।
এই অভিযানের অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার জান্তার সেনাবহরে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। ওইদিন পিডিএফ যোদ্ধারা জান্তা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করে। জান্তা কর্তৃপক্ষ যখন ক্ষমতা দখলের চার বছর পূর্তি উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখন এই হামলা চালায় পিডিএফ।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গণতন্ত্রপন্থি অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ছিল অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চতুর্থ বর্ষপূর্তি। কিন্তু এদিন রাজধানী নেপিদোর কোথাও কোনো জাঁকজমক বা উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি। এর আগের দিন শুক্রবার রাতে সারাদেশে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়।
সামরিক জান্তার শাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে অশান্তি শুরু হয়। রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ-প্রতিবাদে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। সেসব বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করে সেনাবাহিনী। জান্তা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় শত শত মানুষের। তবে এখানেই তা থেমে যায়নি।
বহু জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত মিয়ানমারে আগে থেকেই জাতিগত উত্তেজনা চলছিল। রাখাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি অন্যান্য প্রদেশেও জাতিগত সংখ্যালঘুরা বার্মিজ শাসনের অধীনে কয়েক দশক ধরে বৈষম্যের শিকার হয়েছে। কোনো কোনো প্রদেশে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহও দেখা গিয়েছিল। তেমন একটি প্রেক্ষাপটে জান্তার ক্ষমতা দখল এবং নির্বিচারে গুলি এসব বিদ্রোহীদের দিকেই এগিয়ে দেয় মানুষকে।
মানুষ দলে দলে বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে। জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয় তারা। শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। দেড় বছরের গৃহযুদ্ধে ইতোমধ্যে অনেকগুলো শহরে জান্তা বাহিনীর পতন ঘটেছে। দেশের ৬০ শতাংশের বেশি এলাকা এখন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দখলে। বিশেষ করে বাংলাদেশ লাগোয়া রাখাইনসহ সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলো এখন জান্তামুক্ত।
আপনার মতামত লিখুন :