বহুল আলোচিত কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন কলকাতার শিয়ালদহের অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস।
সোমবার সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬, ১০৩(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে সঞ্জয়কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া নির্যাতিতার পরিবারকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
যদিও আলাদতে নির্যাতিতার বাবা জানান, তিনি ক্ষতিপূরণ চান না। সেই সময়ে বিচারক বলেছেন, ‘এই মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ অর্থ দিয়ে কিছু করা যায় তা আমি মনে করি না। তবে কর্তব্যরত নারীদের রক্ষা করা রাজ্যের দায়িত্ব। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই নিয়ম।’
এদিন সঞ্জয়কে বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দেন বিচারক। হাতজোড় করে কাঠগড়ায় ওঠে সে। বিচারক সঞ্জয়কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত।’ এরপরেই সঞ্জয়কে বলার সুযোগ দেন বিচারক। সঞ্জয় বলেন, ‘আমি ধর্ষণ করিনি। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি যদি এ কাজ করতাম, সেক্ষেত্রে আমার গলায় থাকা রুদ্রাক্ষের মালা নষ্ট হতো না? আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার ওপরে অত্যাচার করেছে। প্রথমে আমাকে কিছু বলতেই দেওয়া হয়নি। যার যা ইচ্ছে, সেই রকম করছে।’
বিচারক বলেন, ‘আপনাকে ৩ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম। যা প্রমাণ এসেছে, তা আপনার থেকে ভালো কেউ জানে না। আমি প্রমাণের ওপর নির্ভর করে বিচার করতে পারি। আপনি ৩ ঘণ্টা যা বলেছেন, তার রেকর্ড রয়েছে। আপনি নির্দোষ, তা আগেও বলেছি। ’
এর আগে গত ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক তরুণী চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার হয়। সে সময় অভিযোগ উঠেছিল, ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে তাকে। প্রথমে এই ঘটনার তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ। ১০ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়েছিল সেই সময়ে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার পদে কর্মরত সঞ্জয় রায়কে। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্ত ভার যায় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দাদের (সিবিআই) হাতে।
আরজি করকাণ্ডে কী সাজা হলো সঞ্জয়ের?
গত ১১ নভেম্বর শিয়ালদহ কোর্টে শুরু হয়েছিল ধর্ষণ ও খুনের বিচার। ১২ নভেম্বর আরজি কর মামলার ইন ক্যামেরা ট্রায়াল শুরু হয়। গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) শিয়ালদহ অতিরিক্ত দায়রা আদালত এই ঘটনায় সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। পরে সোমবার ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণ জনিত আঘাতের কারণে মৃত্যু), ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডে ভারতের সব স্তরের মানুষ পথে নেমে প্রতিবাদ করেছিলেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নারীদের ওপর হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা ফের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। দোষীদের ফাঁসির দাবি করেছিলেন তিনিও। সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার আগে ডুমুরজলা হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী আবার জানান, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, তিনি তাই চান।
আপনার মতামত লিখুন :