শিরোনাম
◈ জনসংখ্যা দ্রুত কমছে, মাথা খারাপ ভারতের! ◈ প্রধান উপদেষ্টাকে যে কারণে ধন্যবাদ জানালেন মির্জা ফখরুল ◈ উপদেষ্টা হাসান আরিফের মরদেহ দেখতে ল্যাবএইড হাসপাতালে গেলেন: মির্জা ফখরুল  ◈ হামজার মতো আরও কিছু প্রবাসী বাংলাদেশিকে দেশের হয়ে খেলার জন্য অনুপ্রেরণা দিবে বাফুফে ◈ নেপালকে হারিয়ে নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ হলো বাংলাদেশ ◈ উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মন্তব্য নিয়ে ‘‘কড়া প্রতিবাদ’’ জানিয়েছে ভারত ◈ দেশে ফিরেই বিমানবন্দর থেকে হাসপাতালে ছুটে গেলেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ অল্পকিছু টাকা দিয়ে মানুষ হারানোর অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়: সারজিস আলম ◈ দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতু এর পাসপোর্ট কিনেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল! ◈ কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ

প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:২৪ দুপুর
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশে প্রসঙ্গে বদলাতে পারে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি

বাংলাদেশে প্রসঙ্গে বদলাতে পারে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি

সুমিত গাঙ্গুলি, ফরেন পলিসির প্রতিবেদন : পাঁচ দশকের বিরতির পর গত মাসে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ ডক করেছে। চট্টগ্রামে জাহাজের আগমন পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের লেনদেনে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যা ১৯৭১ সাল থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এসব উন্নয়ন দ্রুতগতিতে ঘটেছে। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত আগস্টে চাপের মুখে পদত্যাগ করার পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদে সর্বসম্মত প্রার্থী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

অফিসে তার শেষ দুই মেয়াদে হাসিনা ভারত সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। (বর্তমানে হাসিনা নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নিয়ে আছেন এবং ঢাকা সম্প্রতি ইন্টারপোলকে তার গ্রেপ্তারের জন্য একটি রেড কর্নার নোটিশ জারি করতে বলেছে।) গণবিক্ষোভের মুখে হাসিনার প্রস্থান ভারতের কাছে ছিল বড় ধাক্কা, কারণ বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)- এর সাথে ভারতের সম্পর্ক ছিল হিমশীতল। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশে নয়াদিল্লির মিত্রর সংখ্যা কমেছে , যদিও  ইউনূস দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখতে তার আগ্রহের কথা একাধিকবার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। পাকিস্তানের প্রতি  অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ অবশ্যই বাংলাদেশের সাথে তার নিজের সম্পর্কের ভবিষ্যত সম্পর্কে ভারতকে দুশ্চিন্তায় ফেলবে।

বাংলাদেশে, ভারত এখন যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে তাকে  আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা পররাষ্ট্র-নীতির পুনর্বিন্যাস বলে অভিহিত করেছেন। এই ধরনের পরিবর্তনগুলি বেশিরভাগই দুটি উৎস থেকে আসে: প্রথমটি হলো, বাহ্যিক পরিবেশের পরিবর্তন যা একটি দেশকে তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অগ্রাধিকার এবং কৌশলগুলি পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য করে। পরেরটি দৃশ্যত ঢাকার পররাষ্ট্র-নীতির অভিমুখে নাটকীয় পরিবর্তনে অবদান রাখছে, যার প্রভাব নয়াদিল্লির জন্য উল্লেখযোগ্য। হাসিনার অধীনে, যিনি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিলেন, দুই দেশের মধ্যে একটি গভীর পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল। হাসিনা বাংলাদেশের ইসলামপন্থী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে আশ্রয় দেননি এবং ভারতীয় বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে এসেছেন। প্রতিক্রিয়ায়, নয়াদিল্লি হাসিনার অধীনে ঢাকায়  গণতন্ত্রের অভাব উপেক্ষা করতে, ভারতীয় বাজারে প্রবেশাধিকার প্রদান করতে এবং আন্তঃসীমান্ত রেল ও সড়ক যোগাযোগ বাড়াতে ইচ্ছুক ছিল।

এইসব সত্ত্বেও, দ্বিপাক্ষিক এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মূলে থাকা কিছু অন্তর্নিহিত উত্তেজনা-এই সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করেছিল। হাসিনার প্রস্থানের সাথে সাথে এই পার্থক্যগুলি সামনে আসছে এবং ভারত-বাংলাদেশ উভয় পক্ষের জন্য সম্পর্ক  পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ উত্থাপন করেছে। ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে, বাংলাদেশ থেকে অনিয়মিত অভিবাসন সর্বদাই একটি জটিল সমস্যা ছিল-যে সরকারই অফিসে থাকুক না কেন, ২০১৪ সালে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)  ক্ষমতা গ্রহণের পরে এই সমস্যা আরো প্রকট হতে শুরু করে। এমনকি হাসিনার অধীনেও ঢাকার নেতৃত্ব বিষয়টি সমাধানে অনিচ্ছা দেখিয়েছে। বিজেপি বিষয়টিকে রাজনীতিকরণ করেছে, বিশেষ করে ভারতের ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে মূলত ধর্মীয় পরিচয় এবং ইসলামফোবিয়াকে সামনে রেখে বিজেপি প্রচার চালিয়েছে।

উত্তেজনা এখন বাড়ছে: নভেম্বরে বাংলাদেশে একজন হিন্দু সন্ন্যাসীকে গ্রেপ্তার করার পর বিক্ষোভ বেড়েছে। দুই দেশ তাদের সীমান্তের মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ এনেছে। বাংলাদেশি হিন্দুরা যদি ভারতে আশ্রয় নেয়, তাহলে অভিবাসন সমস্যাটি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে। প্রসঙ্গটি তুলে ভারত বাংলাদেশকে কোণঠাসা করতে পারে।  অন্যদিকে ঢাকা নিঃসন্দেহে ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি তার আচরণের জন্য নয়া দিল্লিকে আক্রমণ করবে-যার ফলে শত্রুতা বাড়তে পারে। ভুল তথ্যের মাধ্যমে এই ধরনের শত্রুতা আরও খারাপ দিকে যেতে পারে। কিছু ভারতীয় প্রতিবেদন বাংলাদেশের মাটিতে পরিস্থিতিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে, কিছু ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। 

আরেকটি ইস্যু যা নিয়ে  উভয় পক্ষ একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে তা হলো ১৯৯৬ সালে গঙ্গা নদী নিয়ে বিরোধের সমাধান হওয়া সত্ত্বেও তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি। যদিও বিজেপি সরকার বিষয়টি সমাধান করতে ইচ্ছুক ছিল, তবে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই চুক্তিতে সম্মতি দেয়নি। এই ইস্যুটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত বিরোধী শক্তিকে ইন্ধন জোগাতে পারে। এদিকে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কিছু অংশ  ভারতকে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বিগ্নতার মধ্যে রেখেছে। একটি হলো বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের উত্থান এবং দেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব। যারা হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সাহায্য করেছিল তাদের মধ্যে ইসলামপন্থী এবং ভারতবিরোধী দল রয়েছে যারা এখন উচ্ছ্বসিত বোধ করছে। সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের হিন্দুদের ভয় ও বিভ্রান্তি দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ভারত তার নিজস্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত তাদের মধ্যে এর সম্ভাব্য সংক্রামক প্রভাবের আশঙ্কা করছে। ভারতের প্রধান কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং, দীর্ঘদিন ধরে এই উন্নয়নের উপর গভীর নজর রেখেছে। বিজেপির যেহেতু বৃহত্তর হিন্দু ভিত্তি রয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। তবে এই ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারকে লজ্জায় ফেলতে পারে ভারত। যেকোনও উত্তেজনা অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অদূর ভবিষ্যতে হাসিনার আওয়ামী লীগের বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নেই, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি  নতুন সরকার গড়তে পারে। বিএনপির সাথে ভারতের অস্থির সম্পর্কের  ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন হতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক বৈদেশিক-নীতিগুলি দেখায় যে ভারত বাংলাদেশের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকে আগের চেয়ে আরও সীমিত করে দেখতে পারে।

বাংলাদেশের প্রধান ইসলামপন্থী দল জামায়াত-ই-ইসলামী যদি অতীতের মতো বিএনপির সঙ্গে জোট করে, তাহলে ভারতের পররাষ্ট্র-নীতির সম্পূর্ণ পুনর্বিন্যাস হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবেশী বাংলাদেশকে ‘শত্রু’ হিসেবে ভেবে নিয়ে ভারত ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করতে পারে। এই সম্ভাব্য ফলাফলকে আটকানোর জন্য নয়াদিল্লির হাতে কিছু হাতিয়ার রয়েছে। তবে অন্যান্য দল এবং বাংলাদেশি সুশীল সমাজকে বাদ দিয়ে হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের উপর ভারতের অত্যধিক নির্ভরতা তাকে এই অস্থিতিশীল অবস্থানে ফেলেছে।

(সূত্র : ফরেন পলিসি। সুমিত গাঙ্গুলি ফরেন পলিসির একজন কলামিস্ট এবং স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির হুভার ইনস্টিটিউশনের একজন সিনিয়র ফেলো, যেখানে তিনি ইউএস-ভারত সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে হান্টিংটন প্রোগ্রাম পরিচালনা করেন।) অনুবাদ : মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়