শিরোনাম
◈ উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফ মারা গেছেন ◈ কলকাতার আদালতে জামিন পেলেন পি কে হালদার ◈ পিলখানা হত্যাকাণ্ডে হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ইস্যুতে যা বললো যুক্তরাষ্ট্র ◈ কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকে ডাকাতি: এক মাস আগেই হয় পরিকল্পনা : ওসি মাজহার ◈ বিশ্বব্যাংক থেকে তিন প্রকল্পে ১১৬ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ ◈ রূপপুর চালু হলে বসে থাকতে পারে বড় সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র ◈ উত্তরায় রেস্টুরেন্টে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯ ইউনিট ◈ আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে মাথানত করা যায় না : কলকাতার মেয়র ফিরহাদ ◈ সাব্বির-মোসাদ্দেকের বাংলা টাইগার্স জিতলো লঙ্কা টি-টেন লিগের শিরোপা ◈ একের পর এক শিক্ষার্থী হত্যায় উদ্বেগ, ক্ষোভ, নির্বিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:১০ দুপুর
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:৪৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারতের লোকসভায় একের পর এক হাতাহাতি, দায় নিচ্ছে না কেউ 

ভারতের লোকসভায় একের পর এক হাতাহাতি, দায় নিচ্ছে না কেউ 

মহসিন কবির: ভারতের লোকসভায় একের পর এক হাতাহাতি ঘটনা ঘটেই চলছে। বেশ কয়েকবার এ হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় একপক্ষ অন্যপক্ষ দায়ী করছে। তবে সুরাহা হয়নি। সবশেষ ১৮ ডিসেম্বরও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। 

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর আম্বেদকর-মন্তব্য ঘিরে দেশটির সংসদে সরকার ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলছে। তার মাঝেই সংসদ পরিণত হলো রণক্ষেত্রে। ধ্বস্তাধস্তিতে আহত হলেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দুই সাংসদ। আর এতে অভিযোগের আঙুল উঠেছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির দিকে।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংসদের বাইরে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ও বিজেপি সাংসদদের মধ্যে তীব্র ধাক্কাধাক্কি হয়। সংঘর্ষে বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সারাঙ্গী মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হন। এছাড়া, আরেক আহত বিজেপি সাংসদ মুকেশ রাজপুতকেও আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।

বিজেপির অভিযোগ, রাহুল গান্ধির আঘাতেই তাদের দলের এমপিরা আহত হয়েছেন। বিজেপি সরকারের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু বলেন, ‌কী করে তিনি (রাহুল) সংসদে শক্তি প্রয়োগ করতে পারেন। কোন আইন তাকে এমপিদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ক্ষমতা দিয়েছে?

সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়– ভারতীয় সংসদের বাইরে বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সারাঙ্গী মাথায় আঘাত পেয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকেন। এসময় রাহুল গান্ধি তার কাছে গিয়ে শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজেপি সাংসদরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। তখন বিজেপি নেতা নিশিকান্ত দুবে রাহুলকে উদ্দেশ করে বলেন– ‘রাহুল, আপনার কি লজ্জা করে না? আপনি এখানে গুন্ডামি করছেন! একজন বৃদ্ধ লোককে (প্রতাপ সারাঙ্গী) ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন!

ঘটনার পর রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, বিজেপি সাংসদরা তাকে ধাক্কা মেরেছেন এবং সংসদ ভবনে প্রবেশে বাধা দিয়েছেন। এই ঘটনার পর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে এজাহার (এফআইআর) করেছে বিজেপি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, পার্লামেন্ট স্ট্রিট পুলিশ স্টেশনে গিয়ে বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর, বাঁশুরি স্বরাজ।

২০২৪ সালের ০৭ নভেম্বর ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভায় তুমুল কাণ্ড ঘটেছে। বিধানসভায় অধিবেশন চলাকালে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সদস্যরা।

আনন্দবাজার জানিয়েছে, একটি পোস্টারকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে অধিবেশন শুরু হলে বারামুলার সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার রশিদের ভাই তথা আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টির বিধায়ক খুরশিদ আহমেদ শেখ অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর সমর্থনে একটি পোস্টার তুলে ধরেন। তার এ পোস্টারে বিরোধী দলনেতা আপত্তি জানান। এরপর তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। ফলে বিরোধী ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের মধ্যে প্রথমে ধস্তাধস্তি ও পরে হাতাহাতি লেগে যায়।

বিজেপির অভিযোগ, ওই বিধায়কের পাশে জম্মু ও কাশ্মীরের শাসকদল ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) এবং কংগ্রেস দাঁড়িয়েছে। এ সময় সেখানকার বিজেপি সভাপতি রবীন্দ্র রায়না জোটকে আক্রমণ করে বলেন, ওরা পাকিস্তানের হাত শক্ত করছে। জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।

২০২৩ সালে ১৩ ডিসেম্বর ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার শীতকালীন অধিবেশন চলাকালে বড় ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির এই সংসদ ভবনে প্রাণঘাতী হামলার ২২তম বার্ষিকীতে বুধবার লেকাসভায় আইনপ্রণেতাদের আসনে অতর্কিত ঢুকে পড়েছে এক যুবক। এ সময় ওই যুবক হলুদ ধোঁয়া ছড়িয়ে সংসদ কক্ষে আতঙ্ক তৈরি করেন।

লোকসভার সদস্যরা বলেছেন, অনুপ্রবেশকারী সেখানে চিৎকার করে কিছু স্লোগান দিয়েছেন। সংসদ কক্ষের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এক যুবক লাফিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ার পর চিৎকার করছেন। তানাশাহি নেহি চলেগা অর্থাৎ স্বৈরতন্ত্র চলবে না বলে স্লোগান দেন তিনি। এ সময় দ্বিতীয় এক ব্যক্তি দর্শক সারি থেকে ধোঁয়া স্প্রে করেন। পরে সংসদ সদস্য ও নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের দুজনকে ধরে ফেলেন।

২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকল ভারতের পার্লামেন্ট। লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে পার্লামেন্ট থেকে একদিনে বিরোধী দলগুলোর ৭৮ সাংসদকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে ১৪ জন সাংসদকে বহিষ্কার করা হয়। সবমিলিয়ে বহিষ্কৃত এমপির সংখ্যা দাঁড়ালো ৯২ জনে।

২০২২ সালের ২৮ মার্চ। বগটুই ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভে উত্তাল বিধানসভা। মহিলা নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি বিজেপি বিধায়কদের। চলল দুপক্ষের ধস্তাধস্তি, জামা ছেঁড়া, ঘুষি মারারও ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ ঘিরে সরগরম বিধানসভা। ধস্তাধস্তিতে মাটিতে পড়ে যান বিধায়কও। ঝরল রক্তও। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছাল যে ডাকতে হল অ্যাম্বুলেন্সও। গোটা পরিস্থিতির ভৎর্সনা স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। শুধু হই-হুল্লোড় নয়, ভোটপ্রচারে রাহুল গান্ধীর ‘ডান্ডাপেটা’ মন্তব্য ঘিরে রীতিমতো হাতাহাতি হলো ভারতের সংসদে। লোকসভায় শাসক-বিরোধী সাংসদদের এই বাকবিতণ্ডা, হাতাহাতির জেরে শুক্রবার দিনের মতো অর্থাৎ সোমবার পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে বাধ্য হন স্পিকার ওম বিড়লা।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ‘ডান্ডাপেটা করবে বেকার যুবসমাজ’-সম্প্রতি দিল্লির বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে এমনই মন্তব্য করেছিলেন রাহুল গান্ধী। সেই মন্তব্যের জেরে লোকসভায় নিন্দা প্রস্তাব পাশ করা হোক বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। তার পরেই কংগ্রেস সাংসদরা ওয়েলে নেমে স্পিকারের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পাল্টা হিসেবে বিজেপি সাংসদরাও হই-হট্টগোল শুরু করে দেন। দফায় দফায় এই পরিস্থিতির জেরে বাধ্য হয়ে দিনের মতো অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার।

এর আগে দিল্লির বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে হিন্দিতে রাহুল বলেন, ‘ছয় মাস পর দেশের যুবসমাজ নরেন্দ্র মোদীকে ডান্ডা মেরে মেরে দেশছাড়া করবেন।’ এরপর শুক্রবার সংসদের অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করেন রাহুল। জবাব দিতে উঠে দাঁড়ান স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। কিন্তু তিনি ওয়েনাডের এই সাংসদের (রাহুল) প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রাহুলের ওই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

২০১২ সালের ৯ সেপ্টম্বর। দফায় দফায় বিরোধী এমপিদের বিক্ষোভে উত্তাল ছিলো ভারতের সংসদ। প্রথম দফা মুলতুবি থাকার পর বেলা বারোটা নাগাদ রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন সমাজবাদী পার্টির সদস্য নরেশ আগরওয়াল এবং ভুজন সমাজবাদী পার্টির অবতার সিং। এর জেরেই এক সময় হাতাহাতি বেধে যায় এই দুই সাংসদের মধ্যে।

সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে হাতাহাতির ঘটনায় ক্ষুব্ধে হয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। প্রথমে বেলা দুইটা পর্যন্ত মুলতুবি রাখা হয়েছিল রাজ্যসভার অধিবেশন। কয়লা ব্লক বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে শুক্রবারে দিনের শুরুতেই উত্তাল হয় ওঠে সংসদের দুই কক্ষ। লোকসভা এবং রাজ্যসভার ওয়েলে নেমে  বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী সংসদ সদস্যরা। তাদের দাবি, সংসদে দাঁড়িয়ে কয়লা দুর্নীতির দায় স্বীকার করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে এবং আগের ৫৮টি কয়লা ব্লক বণ্টন বাতিল করে সেগুলোর ফের নিলাম করতে হবে।

বিমা সংক্রান্ত একটি বিল নিয়ে রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হলো ভারতের রাজ্যসভা। তুমুল হট্টগোল ও হাতাহাতির মধ্যে শেষ পর্যন্ত তড়িঘড়ি করে পাস হয় বিলটি।

২০ সালের ১১ আগস্ট। বিমা সংক্রান্ত বিলটি রাজ্যসভায় উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। আলোচনার জন্য অধিবেশনের সময় বাড়ানোর আর্জি জানায় সরকার। তবে বিরোধীরা বিলটি নিয়ে অন্য একদিন আলোচনার দাবি তোলে। তাদের আপত্তি গ্রাহ্য না হওয়ায় এক পর্যায়ে শুরু হয়ে তীব্র বাকবিতণ্ডা। বাকবিতণ্ডা থেকে আরম্ভ হয় বিধায়কদের ধস্তাধস্তি। হট্টগোলের মধ্যে কাগজ ছিড়ে ছুঁড়ে মারতে দেখা যায় তাদের, চেয়ারও ছুঁড়ে মারেন কেউ কেউ। এসময় এক নারী নিরাপত্তাকর্মীর গলা টিপে ধরার অভিযোগও ওঠে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই কণ্ঠভোটে বিল পাস করিয়ে নেয় মোদি সরকার। বিষয়টিকে গণতান্ত্রিক আচরণের পরিপন্থী বলছে বিরোধী দলগুলো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়