প্রেমে প্রত্যাখ্যান করায় এক নারীকে হত্যা করেছে তাঁর ভাশুর। পরে তাঁর দেহ তিন টুকরো করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়। কলকাতার দক্ষিণের অভিজাত টালিগঞ্জ এলাকায় ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত শুক্রবার সকালে কলকাতার রিজেন্ট পার্ক এলাকায় একটি পলিথিন ব্যাগে ছিন্ন মস্তক পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। প্রথমে তারা ভেবেছিলেন এটি হয়তো পশুর দেহাবশেষ। কিন্তু পরে যখন পলিথিন খুলে ভেতরের ভয়াবহ দৃশ্যটি দেখতে পান, তারা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মস্তকটি উদ্ধার করে এবং সেখান থেকে শুরু হয় এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের প্রক্রিয়া।
পুলিশি তদন্তে জানা গেছে, মস্তকের আঘাতের চিহ্ন ও তাজা রক্তের উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, ওই নারীকে হত্যার পর ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মস্তকটি ওই স্থানে ফেলা হয়েছিল। সিসিটিভি ফুটেজ এবং এলাকাবাসীর বয়ান সংগ্রহ করে পুলিশ জানতে পারে, ওই নারী টালিগঞ্জের একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন এবং সম্প্রতি তাঁর ভাশুর আতিউর রহমান তাঁর প্রতি অস্বাভাবিক আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন।
তদন্তে জানা গেছে, পেশায় নির্মাণশ্রমিক আতিউর প্রায়ই ওই নারীর সঙ্গে একত্রে যাতায়াত করতেন। দুই বছর আগে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার পর ওই নারী প্রতিদিন সকালে কাজে যেতেন এবং সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেন। আতিউর এই সুযোগে তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ওই নারী স্পষ্টভাবে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন। এ ছাড়া, তিনি আতিউরের সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দেন এবং তাঁর ফোন নম্বর ব্লক করে দেন। এতে আতিউর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং এই ক্ষোভ থেকেই তিনি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাজ শেষে ওই নারী বাড়ি ফেরার সময় আতিউর তাঁকে জোর করে একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যান। সেখানে তিনি প্রথমে শ্বাসরোধ করে তাঁকে হত্যা করেন। পরে নির্মমভাবে শিরশ্ছেদ করেন এবং তাঁর দেহ তিন টুকরো করেন। এই টুকরোগুলো তিনি আলাদা আলাদা স্থানে ফেলে দেন—মস্তক একটি ময়লার ভাগাড়ে, ধড় আর নিম্নাংশ একটি পুকুরের কাছে।
পুলিশের ডেপুটি কমিশনার বিদিশা কলিতা জানিয়েছেন, ‘এটি অত্যন্ত নৃশংস একটি অপরাধ। হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারী আতিউরের নজর এড়ানোর চেষ্টা করলেও তিনি পরিকল্পিতভাবে এই কাজটি করেছেন।’ তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পর আতিউর পালিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ ২৪-পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবারের বাসুলডাঙ্গায় আশ্রয় নেন।
সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য প্রমাণের সূত্র ধরে পুলিশ আতিউরের অবস্থান শনাক্ত করে। গতকাল শনিবার সকালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তিনি স্বীকার করেন যে, প্রণয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এ কাজটি করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ময়লার ভাগাড় এবং পুকুরের আশপাশ থেকে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। স্নিফার ডগ ব্যবহার করে ঘটনাস্থল থেকে আরও তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকেও তথ্য নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের মতে, আতিউরের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে দ্রুত চার্জশিট দাখিল করা হবে।
এই ঘটনার পর পুরো টালিগঞ্জ এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, এত নৃশংস হত্যাকাণ্ড আগে কখনো তারা দেখেননি। সমাজে ক্রমবর্ধমান হিংস্র মনোভাব ও অস্বাভাবিক সম্পর্কের কারণে এই ধরনের অপরাধ বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
আপনার মতামত লিখুন :