পার্সটুডে-অনুসন্ধানী মিডিয়ার সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গেছে সাইদিনায়া কারাগারের পরিস্থিতির ওপর প্রকাশিত বেশিরভাগ ভিডিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এবং টিক-টক ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে সাইবারস্পেসে প্রকাশিত হয়েছে।
গত সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত সাইদিনায়া কারাগার নিয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন মিথ্যা খবর প্রচারিত হচ্ছে। পার্সটুডে আরও জানায়, দৈনিক জামজাম পত্রিকা একটি নিবন্ধে এ বিষয়ে সিএনএন-এর আচরণ বিশ্লেষণ করেছে। সিএনএন থেকে কয়েক মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে ক্যামেরা প্রতিবেদকের সাথে দৃশ্যত লাইভ সম্প্রচারে সাইদিনায়া কারাগারে গেছে। কারাগারের একটি কক্ষের দরজা খুলে একজন বন্দিকে ছেড়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। ওই দৃশ্য এতটাই ভুয়া মনে হয় যে শিক্ষকদের পাঠদানের কণ্ঠস্বরও সরব হয়ে উঠেছে!
দুঃখের বিষয় হলো ভিডিওটি ইরানের সংবাদ সংস্থাগুলোর মধ্যেও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়! কোনও একটি নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে এরকম সম্পূর্ণ ভুয়া ভিডিও প্রকাশ করার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও এই নেটওয়ার্ক থেকে হাস্যকরভাবে এ ধরনের ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল। এই ভিডিওর প্রতিবেদক ছিলেন সিএনএন-এর আন্তর্জাতিক প্রধান রিপোর্টার ‘ক্লারিসা ওয়ার্ড। রিপোর্টার হিসেবে ‘ক্লারিসা ওয়ার্ড’-এর নামটিও মিডিয়ার প্রতারণার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে। কয়েক মাস আগে এই নেটওয়ার্কেরই একজন বার্তা সম্পাদক সিএনএনের ভিডিও প্রতারণার কথা স্বীকার করেছিলেন।
ভয় পাওয়ার চেষ্টা করো!
সিএনএন-এর মিথ্যাচারের গল্প অনেক লম্বা। এমনকি তাদের মিথ্যা প্রতিবেদনের তালিকা এই নিবন্ধে সংশ্লিষ্ট করার মতো ছোট নয়। তবে আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, সেটা গাজায় ক্লারিসা ওয়ার্ডের উপস্থিতি। ইহুদিবাদী ইসরাইলি আগ্রাসনের সময় গাজায় তার উপস্থিতির সাথে এই উদাহরণটি সম্পর্কিত। প্রতিবেদনটি চিত্রায়িত হয়েছিল অধিকৃত ভূখণ্ড এবং গাজার মধ্যবর্তী সীমান্তের কাছে। ওই প্রতিবেদনে একটি "জাল" অডিও ক্লিপ রয়েছে যে ক্লিপটি একটি অফ-স্টেজ ভয়েস মানে যেখানে ভিডিও করা হচ্ছিলো, সেখানকার নয়, বাইরের।
আপাতদৃষ্টিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির ভেতর ওই কণ্ঠস্বর বলে ওঠে: তোমার চারপাশে লক্ষ্য করো মনে হচ্ছে তুমি বিপদে পড়েছো। চেষ্টা করো সুন্দর এবং ভীতু সাজার। অবশ্য এই সুস্পষ্ট কেলেঙ্কারির মুখে সিএনএন ঘোষণা করেছিল: অডিওটি কোনওভাবে ছবিতে যুক্ত করা হয়েছিল। তারপরও অনেক সত্যান্বেষি সাইট (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং) প্রকাশিত প্রতিবেদনকে বস্তুনিষ্ঠ নয় বলে স্বীকার করেছে এবং স্পষ্ট ভাষায় বলেছে: ভিডিওটি জাল।
মিথ্যাচারের প্রতিযোগিতা
আজকাল সোশ্যাল নেটওয়ার্কের উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ এমন হয়ে গেছে যে সত্য এবং বস্তুনিষ্ঠতাকে রক্ষা করার জন্য প্রচুর সাহসী এবং নির্ভীক হতে হবে বললে অত্যুক্তি হবে না। ভয়ঙ্কর সাইদিনায়া কারাগার থেকে একজন বন্দীর মুক্তির ওপর যে হাস্যকর ভুয়া একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে এবং আপনি এটিকে যুক্তি দিয়ে অবাস্তব মনে করছেন; সন্দেহ নেই, আপনি সম্ভাব্য অপরাধে অংশগ্রহণের জন্য অভিযুক্ত হবেন!
তবে এই ঘেটনা থেকে যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেল তা হল "সাইদিনায়া কারাগার থেকে মুক্তি" শিরোনামে প্রকাশিত বেশিরভাগ ভিডিওই সত্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, গত কয়েকদিন আগে একটি ভিডিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। 'সাইদিনায়া কারাগারের ব্ল্যাক হোলস' শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনটিতেও যেসব চিত্র দেখানো হয়েছে সেগুলো ছিল "ভিয়েতনাম যুদ্ধ জাদুঘরের" ছবি। এটা এতোই স্পষ্ট যে বিশ্বের নিউজ চ্যানেলগুলো এমনকি সরকারি সংবাদ সংস্থাগুলো পর্যন্ত এসব ছবি ব্যাপকভাবে প্রকাশ করেছে।
গতিময় ইনফ্লুয়েন্সাররা
আমরা এখন যেহেতু জেনে গেছি তাই ক্ল্যারিসা ওয়ার্ডের নাম শুনলেই আমাদের প্রথম থেকেই তার দেওয়া রিপোর্টের সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ হওয়াটাই স্বাভাবিক। সে কারণেই অন্তত গত কয়েকদিনের পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায় যে অনেক প্রভাবশালী অফিসিয়াল রিপোর্টারদের সঠিক খবর প্রচারের স্থানটি এখন ইনফ্লুয়েন্সাররা নিয়ে নিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো জাল ভিডিওগুলোর ভিউ কখনও কখনও ৯ মিলিয়ন পর্যন্ত হয়ে গেছে অথচ এর সত্যতার বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে করা (অর্থাৎ সেই ভিডিওটির সত্যতা অস্বীকার করা) ভিডিওর ভিউ খুব কমই হয়, বড় জোর ১ লাক লাখে পৌঁছেছে!
আপনার মতামত লিখুন :