শিরোনাম
◈ মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি: হাসপাতাল থেকে পালালেন আ. লীগ নেতা  মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ◈ শারীরিক অবস্থা সুস্থ থাকলে  মুক্তিযোদ্ধা দলের ২১ ডিসেম্বরের  মহাসমাবেশে  অংশ নিবেন খালেদা জিয়া  ◈ হাসিনার জন্মদিন পালন করে ভাইরাল সেই নেত্রী আটক ◈ পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় তাহেরির বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ৩ ◈ বাংলাদেশে লোকালয়ে শিয়ালের আক্রমণ বাড়ছে! ◈ প্রতিবন্ধীরা একা নন, একসঙ্গে কাজ করে আমরা একটি সমাজ গড়ে তুলতে চাই : তারেক রহমান  ◈ যে কারণে রুশ সেনাবাহিনীতে ভারতীয় রয়েছেন জানালেন মোদি সরকার ◈ ক্রমাগত বন্ধু হারাচ্ছে ভারত, বাড়ছে শত্রু ◈ জুনিয়র মহিলা এশিয়া কাপ হকি, শ্রীলঙ্কাকে ৮ গোলে হারালো বাংলাদশ ◈ কুমিল্লা স্টেডিয়ামে আবাহনীকে ১-০ গোলে হারালো মোহামেডান

প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৯:৩২ রাত
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:২৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ক্রমাগত বন্ধু হারাচ্ছে ভারত, বাড়ছে শত্রু

মহসিন কবির: দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কোন বন্ধু রাষ্ট্র নেই। চীন, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, নেপালসহ কোন দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। 

এক মাত্র বাংলাদেশ ছিলো সুখ-দু:খের সাথী। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈরিতা তৈরি করছে ভারত। সম্প্রতি কানাডা ও সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। 

ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে বিভিন্ন ইস্যুতে যখন টানাপোড়েন মধ্যে বাংলাদেশে সফর করেছেন ঠিক ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। যদিও তিনি বলেছেন কোন দলের সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে ভারত। তাদের কথার অস্থা কতটা রাখতে পারবে বাংলেদেশ, সেটা সময়ই বলে দেবে।

ঢাকা-নয়াদিল্লির শীতল সম্পর্ক দ্রুত উজ্জীবিত করার তাগিদ দিচ্ছেন ভারতের বিশিষ্টজনরা। তাদের অভিযোগ, কিছু অতি উৎসাহী রাজনৈতিক শক্তি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে দুই দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক দৃষ্টিতে নয়; বরং দুদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেয়ার দাবিও জানাচ্ছেন ভারতীয়রা।

এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় অবস্থানকালে ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশের রাষ্ট্রদূত (২০ জন অনাবাসী রাষ্ট্রদূতসহ) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ মোট ২৮ জন সমবেতভাবে বৈঠক করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত একত্রিত হয়ে সরকার প্রধানের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ এবারই প্রথম। এ বৈঠক বাংলাদেশ ও ইইউয়ের সম্পর্ক আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। 

কিছু দেশে ভিসা আসতে বাংলাদেশের ভারত যেতে হতো। সেটা যাতে যাওয়া  লাগে সেটারও একাট সুরাহা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে বহুজাতিক ভিসা প্রোসেসিং সার্ভিস সংস্থা ভিএফএস গ্লোবাল ঢাকায় সুইডিশ দূতাবাসের সহযোগিতায় বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া বা সুইডেনে যাওয়ার জন্য শেনজেন ভিসা আবেদনের জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেম চালু হয়েছে।

এতে বলা হয়, আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে সব আবেদনকারীদের অবশ্যই ঢাকায় ভিএফএস গ্লোবাল সুইডেনের সঙ্গে শেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে আগাম একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হবে। ওয়াক-ইন আবেদন আর গ্রহণ করা হবে না। অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লটটি আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তাই নিজেকেই বুক করতে হবে।

আবেদনকারী যখন অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করবেন তখন ভিএফএস গ্লোবাল দ্বারা একটি পরিষেবা ফি চার্জ করা হবে। আবেদনকারী যদি অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য উপস্থিত না হন বা আবেদনকারীর নির্ধারিত সময়ের স্লটের ২৪ ঘণ্টা আগে আপনি এটি বাতিল করেন তবে ফি ফেরত দেয়া হবে না।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক রায়কে ঘিরে দেশটিকে দেয়া দেয়া মোস্ট ফেভারড নেশন (এমএফএন) নামের বিশেষ সুবিধা বাতিল করেছে সুইজারল্যান্ড। এতে দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ যদি অন্য একটি দেশকে মোস্ট ফেভারড নেশন মর্যাদা দেয়, তাহলে সেই দেশকে শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা দিতে হয়। এতদিন সুইজারল্যান্ড ভারতকে এই সব সুবিধা দিত। এখন এমএফএন সুবিধাটি বাতিল করার ফলে ভারতের পণ্য রফতানি ও দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

হোটেল বুক করে, বিমানের টিকিট কেটেও দুবাই যাওয়া বাতিল করতে হচ্ছে ভারতীয়দের। সংযুক্ত আবর আমিরাত প্রশাসন পর্যটক ভিসার ব্যাপারে কড়াকড়ি করায় সমস্যায় পড়েছেন তারা। অনেক ভারতীয়ের ভিসাও পর পর বাতিল হচ্ছে। 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগে দুবাইয়ের ভিসা আবেদনের ৯৯ শতাংশই অনুমোদিত হত। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টেছে। অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় সব নথি দেওয়ার পরেও ভিসার আবেদন প্রত্যাখান হচ্ছে বলেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। সংযুক্ত আবর আমিরাত সরকার সম্প্রতি দুবাইয়ের পর্যটকদের ভিসার জন্য নতুন এবং কঠোর নিয়ম আরোপ করেছে। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, পর্যটকদের তাদের হোটেল বুকিংয়ের বিবরণ এবং ফেরার বিমান টিকিট দাখিল করতে হবে ভিসা আবেদনের সময়।

২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তখনকার জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার পর সেই শত্রুতা ভয়াবহ রূপ নেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন্ধ হয়ে যায় ইসলামাবাদে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ক সার্কের সম্মেলন। তাতে সায় দেয় বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা সহ আরও কিছু দেশ। কার্যত তখনই সার্ককে শ্বাসরোধ করে মমি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক চিরবৈরী।

ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দেখা হয় নেপালকে। নেপালে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয় তার মধ্যে তিনভাগের দুই ভাগই যায় ভারত থেকে। কিন্তু ধারাবাহিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভুল পদক্ষেপ নেয়ার কারণে ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। 

ভারত তার চারপাশে যেসব প্রতিবেশী আছে তাদের সঙ্গে ক্রমশ সম্পর্ক হারাচ্ছে। একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো মালদ্বীপ। সেখানে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া আউট’ ইস্যুতে প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ মুইজু। নির্বাচিত হওয়ার পর তার দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়ার আল্টিমেটাম দেন। সে অনুযায়ী ভারত সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়। মালদ্বীপের সঙ্গে ভারত বা ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপ এখনো সম্পর্ক ধরে রাখলেও মালদ্বীপের এই নির্বাচন আঞ্চলিক ক্ষেত্রে ভারতের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানকেই তুলে ধরে।

মালদ্বীপের মতো একই কথা প্রযোজ্য শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে। দীর্ঘদিন ধরে পক প্রণালীতে অবস্থিত কাটচাথিভু দ্বীপ ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে এই দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার কাছে হস্তান্তর করা হলেও এখন পর্যন্ত তা উত্তেজনার একটি ইস্যু হয়ে আছে। শুধু এটাই নয়, শ্রীলঙ্কায় চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি তাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। এ দু’টি ইস্যুই দিল্লিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। 

বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ব্যান্ডউইথ সরবরাহের প্রস্তাব বাতিল করেছে বিটিআরসি। সম্প্রতি বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমানের সেই করা চিঠিতে এ বিষয়টি জানানো হয়৷

জানা গেছে, ভারতের টেলিকম অপারেটর ‘ভারতী এয়ারটেল’-এর সঙ্গে মিলে এই উদ্যোগ নিয়েছিল দেশীয় প্রতিষ্ঠান সামিট এবং ফাইবার অ্যাট হোম। প্রস্তাব বাতিলের কারণ হিসেবে বিটিআরসি বলছে, ট্রানজিটের কারণে আঞ্চলিক হাব হিসেবে দুর্বল হবে বাংলাদেশ, শক্তিশালী হবে ভারত।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটা ঘটনাকে ভারতীয় মিডিয়া হিন্দুদের উপর নির্যাতন হচ্ছে বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফলাও করে প্রচার করতে থাকে। গত কয়েক মাসে একই ইস্যুতে মিথ্যা খবর প্রচারের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। এমনকি এসব মিথ্যা খবর নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদলের নেতাদেরকেও সরব হতে দেখা যায়। যেগুলো ফ্যাক্টচেকে ইতোমধ্যে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে ভারতের অব্যাহত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ড. ইউনূস বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে এসে পরিস্থিতি দেখে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু মোদি সেই আহ্বানে সাড়া দেননি। তবে গত চার মাসে দু-দেশের মধ্যে তিনটি টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সম্পর্কের উন্নতি হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়