ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে বড় ধাক্কা দিল সুইজারল্যান্ড সরকার। ভারতকে দেয়া ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’ (এমএফএন) তকমা বাতিল করেছে সুইজারল্যান্ড। এতে দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুইস সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর সেখানে কাজ করা ভারতীয় সংস্থাগুলোকে ১ জানুয়ারি থেকে চড়া হারে কর দিতে হবে।
ডাবল ট্যাক্স এভয়েডেন্স এগ্রিমেন্ট (ডিটিএএ)-এর অধীনে ভারতকে ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’ মর্যাদা দিয়েছিল সুইজারল্যান্ড সরকার। গত বছর নেসলে সম্পর্কিত একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে আয়কর আইনের অধীনে বিজ্ঞাপিত না হলে ডিটিএএ কার্যকর করা যাবে না। এর পরই সুইস সরকারের তরফে এই বড় পদক্ষেপ নেয়া হলো।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ যদি অন্য একটি দেশকে মোস্ট ফেভারড নেশন বা ‘এমএফএন’ মর্যাদা দেয়, তাহলে সেই দেশকে শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা দিতে হয়। এতদিন সুইজারল্যান্ডকে ভারতকে এই সব সুবিধা দিত। এখন এমএফএন সুবিধাটি বাতিল করার ফলে ভারতের পণ্য রপ্তানি ও দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এমএফএন ধারা অনুযায়ী, ভারত ও কোনো তৃতীয় ওইসিডি (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) দেশের মধ্যে লভ্যাংশ, সুদ, রয়্যালটি বা প্রযুক্তি সেবার ফির ওপর কম করের হার প্রযোজ্য হলে, তা সুইজারল্যান্ড ও ভারতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। কিন্তু ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ওই মামলায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি নেসলে একটি পক্ষ ছিল।
ভারতের শীর্ষ আদালত জানায়, ভারতীয় আয়কর আইনের ৯০(১) ধারা অনুযায়ী একটি প্রজ্ঞাপন ছাড়া এমন ‘দ্বৈত কর নিরসন চুক্তি’ কার্যকর হবে না। ভারতের এ রায়ের ফলে বেঁকে বসে সুইজারল্যান্ড। এমএফএন স্ট্যাটাস প্রত্যাহারের পর সুইজারল্যান্ড ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ কর আরোপ করবে, যারা সুইস উইথহোল্ডিং ট্যাক্সের জন্য ফেরত দাবি করে এবং সুইস ট্যাক্স নাগরিক যারা বিদেশি ট্যাক্স ক্রেডিট দাবি করে।
এর আগে ২০২১ সালে এই হার ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছিল। নাঙ্গিয়া অ্যান্ডারসেন এমঅ্যান্ডএম ট্যাক্স পার্টনার সন্দীপ ঝুনঝুনওয়ালা বলেছেন, ভারতের সঙ্গে তার কর চুক্তির অধীনে এমএফএন ধারার প্রয়োগের একতরফা স্থগিতাদেশ, দ্বিপাক্ষিক চুক্তির গতিশীলতায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
সুইজারল্যান্ডের এই সিদ্ধান্ত সেখানে কর্মরত ভারতীয় সংস্থাগুলোর জন্য করের চাপ বাড়াতে পারে। যা বিশ্বব্যাপী জটিলতা তৈরি করতে পারে। সামগ্রিকভাবে এই পদক্ষেপ ভারতে সুইস বিনিয়োগকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করেন ঝুনঝুনওয়ালা। সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
আপনার মতামত লিখুন :