শিরোনাম
◈ ‘দায়মুক্তি’ শিরোনামে আওয়ামী লীগের লাইভ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা ◈ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক নয়: ট্রাম্পকে সৌদির পাল্টা জবাব ◈ এবার যশোরেও ডাস্টবিনে শেখ হাসিনার ছবি ◈ যুব চ্যাম্পিয়নশিপে  ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার কষ্টের জয় ◈ লন্ডনে লিফলেট বিতরণে যে নাটক করলেন আওয়ামী লীগ নেতারা, নিতে প্রত্যাখ্যান ব্যবসায়ী! (ভিডিও) ◈ গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রাপ্তির ফারাক কতটা? ◈ জামায়াত এখনই নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করছে কেন? ◈ আসিফ-নাহিদরা পদত্যাগ করলেও সরকারে থাকতে পারেন ছাত্র প্রতিনিধি ◈ ঢাকার সড়কে চালু হচ্ছে গোলাপি রংয়ের ২,৬১০টি বাস ◈ চৌকিতে আমু ফ্লোরে ঘুমান সালমান, খাবার অনেক সময় গন্ধ হয়ে যায়: যেমন কাটছে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের কারাজীবন

প্রকাশিত : ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:০৭ রাত
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ভারত, কানাডার সঙ্গে বন্ধুত্বে খড়া, বিভিন্ন দেশে চলছে ইন্ডিয়া আউট আন্দোলন

দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ভারত, কানাডার সঙ্গে বন্ধুত্বে খড়া, বিভিন্ন দেশে চলছে ইন্ডিয়া আউট আন্দোলন

মহসিন কবির: দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব কমেছে। ধীরে ধীরে ভারতের প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে দেশগুলো। ইমোমধ্যে অনেক দেশে ভারতের বন্ধুত্ব থেকে বেরিয়ে গেছে। একমাত্র বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। সেটা শেখ হাসিনার কারণে হারানোর পথ তৈরি হচ্ছে। অনেক তিক্ততা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। এ তিক্ততার সম্পর্ক সামনের দিকে কি হবে সেটা সময়েই বলে দেবে। 

পাকিস্তান তো ‘চির শুত্রু’, এছাড়া নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলংকার সঙ্গেও দিল্লির সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে আগেই। সর্বশেষ অজনপ্রিয় শেখ হাসিনাকে দিয়ে বাংলাদেশকে দেড় দশক ধরে কব্জা করে রেখেছিল দেশটি। 

ভারত-নেপাল: শেখ হাসিনাকে নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে যখন উত্তেজনা চলছে, তখন ভারতকে আরও হতাশ করল নেপাল। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নিয়ে চীনের সঙ্গে একটি কাঠামোগত চুক্তি সই করেছে নেপাল। যা নেপালে চীনের প্রভাব বিস্তারের পথ সুগম করেছে। বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআইয়েরর অংশ হওয়ার জন্য কাঠমান্ডুর জন্য প্রাথমিক বোঝাপড়ার সাত বছর পর,  এই নতুন চুক্তি প্রকল্পে যোগ দিল নেপাল।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, নেপালি প্রধানমন্ত্রী কে. পি. শর্মা ওলি বেইজিংয়ে চার দিনের সফর করেছেন। জুলাই মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি তার প্রথম বিদেশ সফর।  ঐতিহ্য ভেঙে তিনি প্রথম সফরের জন্য নয়াদিল্লিকে না বেছে, শি জিনপিংয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতা এবং চুক্তি চূড়ান্ত করতে চীনকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

এদিকে সীমান্ত নিয়ে কূটনৈতিক-সামরিক উত্তেজনা বেড়েই চলেছে ভারত ও নেপালের। সংকটের শুরু হিমালয়ের পাহাড়ি এলাকায় ভারতের সড়ক নির্মাণকে কেন্দ্র করে। ভারতের উদ্যোগে লিপুলেখ-কালাপানি এলাকার প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের পরেই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে কাঠমান্ডু। নেপালের দাবি, বিবাদপূর্ণ দুটি এলাকার মালিকানা তার। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন মানচিত্রের অনুমোদন দিয়ে পার্লামেন্টে বিল পাস করে নেপাল। যেখানে মানচিত্রে লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরা বিস্তীর্ণ এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ভূখণ্ডটি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি সুপ্রাচীন যাত্রাপথ; এ ছাড়া ভারত, নেপাল ও তিব্বতের তীর্থযাত্রীদের বহুল ব্যবহূত গমনপথ। ভারত সরকার লিপুলেখ দিয়ে কৈলাস-মানসসরোবর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র ভূমি হিসেবে সুপরিচিত। ভারত সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই বিবদমান লকডাউন পরিস্থিতিতেও জনগণ কাঠমান্ডুর রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

ভারত-ভুটান: ভারত ও ভুটানের 'বিশেষ সম্পর্ক' প্রায় ৭০ বছরের পুরনো, কিন্তু সেই সম্পর্কে চীনের ছায়া পড়ছে বলে সম্প্রতি ভারতেই অনেক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক মনে করছেন। চীনের সঙ্গে ভুটানের কোনও কূটনৈতিক সংযোগ না-থাকলেও ইদানীং বেজিং-এর কর্তৃপক্ষ যে নানাভাবে থিম্পুর সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাইছে, সেই ইঙ্গিতও স্পষ্ট। এই পটভূমিতে হিমালয়ের পার্বত্য দেশ ভুটানকে ঘিরে দুশ্চিন্তা বাড়ছে ভারতেও।

ভুটানকে ভারতের প্রিয়তম বন্ধু বলে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার প্রথম বিদেশ সফরে যে এই ভুটানেই গিয়েছিলেন, সে কথাও মনে করিয়ে দেন।

দু'দেশের মধ্যেকার 'ফ্রেন্ডশিপ ট্রিটি' অনুযায়ী ভুটানের প্রতিরক্ষা, বিদেশনীতি ও বাণিজ্যে ভারতের প্রভাব দ্বিপাক্ষিকভাবেই স্বীকৃত। এবং এই মুহূর্তে ডোকলাম উপত্যকায় যে ভারতীয় সেনারা চীনা ফৌজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আছে, তারাও দাঁড়িয়ে আছে ভুটানের মাটিতেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারতের বর্তমান সরকার ভুটানের সঙ্গে ঐতিহাসিক মৈত্রীর সম্পর্ককে দুর্বল করে ফেলেছে বলেই মনে করেন সিনিয়র কংগ্রেস নেতা, সাবেক এমপি ও কূটনীতিক মণিশঙ্কর আইয়ার।

বিবিসি বাংলাকে আইয়ার বলেছেন, একটি প্রাণোচ্ছল গণতন্ত্র হিসেবে ভুটানের বিবর্তন হয়েছে খুব দ্রুত। ফলে তাকে আর আগের মতো শুধু একটি রাজতন্ত্র-শাসিত দেশ হিসেবে দেখলে চলবে না, সেখানেও যে বিবিধ রাজনৈতিক মতামত জন্ম নিচ্ছে সেটাকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। ভুটানের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব নিয়ে যে কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে, বছরকয়েক আগেও তা ভাবাই যেত না। কিন্তু এখন যাচ্ছে। আর তার মূলে আছে ভুটানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার জন্য চীনের মরিয়া প্রয়াস।

ভারত-চীন: ভারত-চীনের সীমান্ত দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। এর শেকড় গাড়া হয় ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে। আফগানিস্তানকে ঘিরে যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং রুশ সাম্রাজ্যের মধ্যে ‘গ্রেট গেম’ শুরু হয় তখন ভারতের ব্রিটিশ শাসকেরা চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত নির্ধারণ করার বিষয়টি প্রথম আমলে নেন।

১৯৬২ সালে প্রথম চীনের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সীমানা নিয়ে বিরোধ থেকে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। যুদ্ধে চীনের কাছে ভারত পরাজিত হয়। এখনো দ্বন্দ্ব চলমান রয়েছে। সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছে। চীন ও ভারতের মধ্যে বিতর্কিত সীমান্ত তিনটি এলাকায় বিভক্ত। একটি হচ্ছে লাদাখকে ঘিরে ওয়েস্টার্ন সেক্টর। দ্বিতীয়টি তিব্বত সীমান্তলাগোয়া ভারতের হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড রাজ্য নিয়ে তৈরি সীমানা ও তৃতীয়টি অরুণাচল সীমান্তে থাকা ইস্টার্ন সেক্টর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা প্রকৃতই কল্পিত একটি সীমারেখা। ভারত বলছে, এটা ৩ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। এদিকে চীন বলছে, সীমানা দুই হাজার কিলোমিটারের কিছু বেশি। ভারত দাবি করে, আকসাই চিনের মালভূমি। সুইজারল্যান্ডের আয়তনের সমান একটি এলাকা যা চীন সীমান্তের পশ্চিম অংশে নিয়ন্ত্রণ করে। চীন অরুণাচল প্রদেশ দাবি করে।

ভারতের দাবি অনুযায়ী পূর্বাঞ্চলীয় সীমানা ১ হাজার ১২৬ কিলোমিটার। তবে ম্যাকমোহন লাইন দ্বারা নির্ধারিত অরুণাচল প্রদেশের এই সীমানার স্বীকৃতি চীন কখনোই দেয়নি। ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হেনরি ম্যাকমোহনের নামে এর নামকরণ। এশিয়ার দুই বৃহৎ দেশ ও একই সঙ্গে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই প্রতিবেশী বিশ্বের সবচেয়ে বিতর্কিত সীমানা হিসেবে পরিচিত এই সীমান্তে সংঘাত–সংঘর্ষ এড়াতে একাধিকবার চুক্তি ও সমঝোতা করেছে। দুই পক্ষই অবশ্য বেশির ভাগ সময় শান্ত থাকে। কিন্তু নিয়মিত সীমা লঙ্ঘন ও অনুপ্রবেশের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে।

ভারত-পাকিস্তান: ভারত-পাকিস্তানের বর্তমান সম্পর্ক বেশি ভালো যাচ্ছে না। উরি হামলা এবং পরবর্তী সময়ে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ঘিরে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ খারাপ। মোদী সরকারের সময়ই ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। পূর্বের সরকারের আমলে এতটা খারাপ পরিস্থিতি ছিল না। এমনটাই জানিয়েছেন প্রাক্তন পাক অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদি। 

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক সবসময়ই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চললেও এ সম্পর্ক আরও খারাপ হয় ২০১৯ সালে। ওই বছরে কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের ওপর জঙ্গি হামলার পাল্টায় ভারত পাকিস্তানের ভূখন্ডে হামলা শুরু করার কারণে সম্পর্কের অবনতি হয়। পোল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফেরার পথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তানের আকাশসীমার ওপর দিয়ে ৪৬ মিনিট ভ্রমণ করেছেন। প্রথা অনুযায়ী পাকিস্তানের জনগণের উদ্দেশে শুভেচ্ছাবাণী না দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন নরেন্দ্র মোদি- এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। রোববার এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন।

পাকিস্তানের ওপর দিয়ে যখনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী যাতায়াত করেন, তখন প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী পাকিস্তানের উদ্দেশে একটি শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে থাকেন তিনি। এবার মোদি সে ধরনের কোনো বার্তা না পাঠানোয় দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও বাড়বে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। 

পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল খাতের এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র ডনকে জানান, এ ধরনের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানোর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটি শুধুই দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটি প্রথা। এ ছাড়া এ মুহূর্তে এরকম কোনো বার্তা পাঠালে ভারতে অবতরণ করার পর পরই সমালোচকদের তোপের মুখে পড়তেন মোদি।

কয়েকটি পাকিস্তানি গণমাধ্যমে দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ভারতীয় উড়োজাহাজটি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে চিত্রল শহরের ওপর দিয়ে প্রবেশ করে ইসলামাবাদ ও লাহোরের ওপর দিয়ে উড়ে অবশেষে ভারতের অমৃতসরের দিকে যায়। বেসামরিক বিমান চলাচল খাতের সূত্র জানান, পাকিস্তানের আকাশসীমা ভারতের বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের জন্য সবসময়ই উন্মুক্ত থাকে। সূত্রটি জানান, ‘(ভারতের) প্রধানমন্ত্রীর উড়োজাহাজের (পাকিস্তানের ওপর দিয়ে) উড়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। তবে কখনো কখনো প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজকে বিশেষ কল সাইন (উড্ডয়ন খাতে ব্যবহৃত বিশেষ তকমা) দেওয়া হয়, যেমন পাকিস্তানের সরকারপ্রধানদের ‘পাকিস্তান ১’ ধরনের কল সাইন দেওয়া হয়।

ভারত শ্রীলঙ্কা: দেশে দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবি জোরালো হচ্ছে দিনের পর দিন। ইউরোপ, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, হংকং, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালদ্বীপের পর এবার এই কাতারে নাম লিখালো শ্রীলঙ্কাও। শ্রীলঙ্কার তরুণরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জের ঢাক দিয়েছে। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের পর এবার শ্রীলঙ্কায় শুরু হয়েছে ইন্ডিয়া আউট আন্দোলন। সম্প্রতি দেশটির কর্তৃপক্ষ ভারতের সাথে সম্পৃক্ত একটি কোম্পানিকে বিমানবন্দরে ভিসা প্রসেসিংয়ের দায়িত্ব হস্তান্তর করলে এই আন্দোলন গতি পায়। গত ৩ মে শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় আধিপত্য রুখে দিতে শুরু হয়েছে ইন্ডিয়া আউট আন্দোলন। সম্প্রতি দেশটির বিমানবন্দরে ভিসা প্রসেসিংয়ে ভারতীয় কোম্পানিকে সম্পৃক্ত করা হলে এই আন্দোলন গতি লাভ করে। সেখানে দেশটিতে ভারতের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তারা দাবি করে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ও কৌশলগত খাতগুলো এখন ভারতীয় আধিপত্যবাদের দখলে। এর একটি নমুনা দৃষ্টিগোচর হয়েছে বিমানবন্দরের এই ঘটনার মধ্য দিয়ে। জামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় এক আন্দোলনকর্মী গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমরা ভারতীয় আধিপত্যবাদের দাস নই। সেজন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আমরা আরো কঠোরভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।’

অন্য একজন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে আমরা এখন ন্যাশনাল ইমেগ্রেশন অফিসের সামনে আছি। এখান থেকে ভিনদেশী ও অ-শ্রীলঙ্কানদের হাতে আমাদের রাষ্ট্রীয় অধিকার হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা এখানে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। আমরা সম্প্রতিকালের এই ঘটনাকে আলাদা কোনো ইস্যু হিসেবে দেখি না। বরং এটিকে আমাদের অর্থনীতি ও রাষ্ট্রের কৌশলগত খাতগুলোকে দখলে নেয়ার বৃহত্তর ভারতীয় প্রচেষ্টার একটি আন্তঃসংযুক্ত ইস্যু হিসেবে দেখি।’

ভিন্ন এক আন্দোলনকর্মী বলেন, ইতিহাসে কখনোই অখণ্ড ভারত ছিল না। ভবিষ্যতেও কখনো হবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের এই সরকারের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা এবং ভারতের আশির্বাদ নিতে আগ্রহী বিরোধী দলীয় নেতারা মনে করেন যে তারা যদি ভারতকে সহযোগিতা করে, তাহলে তাদের পক্ষে ক্ষমতা গ্রহণ করা সহজ হবে। সেজন্য ভারতকে তারা এভাবে সুযোগ করে দিচ্ছে।

এক বিক্ষোভকারী বলেন, সম্প্রতি মাত্তালা বিমানবন্দরের দায়িত্ব ভারতীয় কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অনেক অর্থনৈতিক চুক্তি এবং ভারতের স্বার্থ রক্ষিত হয়, এমন নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকার এমন একটি মুক্ত বাণিজ্যের পথ উন্মোচন করেছে, যেটি কেবল ভারতের স্বার্থই রক্ষা করে। শ্রীলঙ্কার জনগণ বা শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রের স্বার্থ বিবেচনা করে না।

ভারত-আফগানিস্তান: ভারতের সঙ্গে ভালো যাচ্ছে না আফগানিস্তানের। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে থাকা আফগান দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে আফগানিস্তানের বর্তমান তালেবান সরকার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আফগান দূতাবাসের বরাত দিয়েছে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগে নয়াদিল্লিতে আফগান দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে আফগান সরকার। আফগান দূতাবাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিবেচনায় অনেক ভেবেচিন্তে কঠোর এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

আফগান দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত আফগানিস্তানের দূতাবাস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
নয়াদিল্লিতে কার্যক্রম বন্ধের জন্য বেশ কয়েকটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছে আফগান দূতাবাস— ভারত সরকারের অসহযোগিতা: গুরত্বপূর্ণ বিভিন্ন কাজে ভারত সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা মেলেনি বলে অভিযোগ করেছে আফগান দূতাবাস। এটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা বাধাগ্রস্ত করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
আফগান স্বার্থ পূরণে ব্যর্থতা: নয়াদিল্লির দূতাবাস আফগানিস্তান ও এর নাগরিকদের প্রত্যাশিত স্বার্থ ও প্রয়োজনীয়তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। এর জন্যও অবশ্য ভারত সরকারের অসহযোগিতা ও কাবুলে বৈধ সরকারের অনুপস্থিতিকে দায়ী করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দূতাবাস স্বীকার করছে, এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কেউ কেউ কাবুল থেকে সমর্থন ও নির্দেশনা পেতে পারেন, যা আমাদের বর্তমান কর্মপন্থা থেকে ভিন্ন হতে পারে।

ভারত-মালদ্বীপ: মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ভারতবিরোধী বক্তব্য দিয়ে জয়ী হন। গদিতে বসার পর তিনি স্পষ্ট করে দেন, নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ‘ইন্ডিয়া আউট’ শীর্ষক যে স্লোগান ব্যবহার করেছিলেন, তা শুধু নির্বাচনী স্লোগান ছিল না; তার চেয়েও বেশি কিছু ছিল। মুইজ্জুই মালদ্বীপের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি সফরে ভারতে যাননি। তার বদলে তিনি তুরস্ক সফর করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজেকে অধিকতর ইসলামপন্থী হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন। এ ছাড়া ভারতের প্রধান প্রতিপক্ষ চীনের পরই তিনি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের নেতৃত্বাধীন তুরস্কের নেতৃত্ব অনুসরণ করছেন বলে ধারণা দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও ভারত-মালদ্বীপের কূটনৈতিক উত্তেজনাকে উসকে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁদের বক্তব্য জনমত গঠনে প্রভাব রাখে, এমন কয়েকজন ভারতীয় ইনফ্লুয়েন্সারকে ভারতের লাক্ষাদ্বীপের পর্যটন প্রসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের বেশ কয়েকজন লাক্ষাদ্বীপের প্রচারণা চালাতে গিয়ে পর্যটন এলাকা হিসেবে মালদ্বীপকে বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর তিনজন ডেপুটি মিনিস্টার মাহজুম মাজিদ, মালসা শরিফ ও মরিয়ম শিউনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির চারিত্রিক বর্ণনা দিতে গিয়ে ‘ভাঁড়’, ‘সন্ত্রাসী’ ইত্যাদি অপমানসূচক ভাষা ব্যবহার করেন। ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা আগে থেকেই ক্ষিপ্ত ছিলেন। মালদ্বীপের মন্ত্রীদের এসব বক্তব্যের পর তাঁরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবল লড়াই শুরু হয়ে যায় এবং দ্রুতই তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। 

ভারত-কানাডা: ভারতীয় কূটনীতিকেরা কানাডার মাটিতে হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি, অপহরণ, জবরদস্তি ও হয়রানির মতো ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে’ জড়িত- এমন অভিযোগ করার পর ভারত ও কানাডার সম্পর্ক ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় কানাডা দেশটিতে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারসহ ভারতের ছয়জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। তাঁরা নানা ধরনের হুমকিমূলক আচরণে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছে কানাডা। ভারতও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কানাডার ছয়জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।

কানাডার এই বিবৃতি আন্দোলনকর্মী ও পশ্চিমা কর্মকর্তাদের সেই অভিযোগকে উসকে দিয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত সরকার বিদেশের মাটিতে, বিশেষ করে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে দমন–পীড়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে এবং ভারত রাষ্ট্রের সমালোচকদের তারা লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। কানাডার এই অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলে খারিজ করে দিয়েছে ভারত। উল্টো অভিযোগ করেছে, এটা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ভোটে জেতার রাজনৈতিক এজেন্ডা।

* প্রতিবেদনটি তৈরিতে সাহায্য নেয়া হয়েছে, বিবিসি, রয়র্টাসসহ অনেক অনলাইন মিডিয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়