আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের ডাকা বিক্ষোভে যোগ দিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমেছে। তবে বিক্ষোভ ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে পাকিস্তান সরকার ও প্রশাসন। রাজধানী ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকবি বলেন, ইসলামাবাদের ‘রেড জোনে’ প্রবেশ করলে ইমরান খানের সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হবে। সরকারি ভবনের সুরক্ষায় ওই এলাকায় চলাচল নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তবে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এসব বার্তা ও ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ইসলামাবাদে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইমরান খানের হাজার হাজার সমর্থক-কর্মীরা। বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত পিটিআইয়ের পাঁচ পার্লামেন্ট সদস্যসহ প্রায় চার হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের হামলায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে জিও নিউজ জানিয়েছে, কিছু দুর্বৃত্তকারী আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স সদস্যদের উপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছে। এতে অন্তত চারজন রেঞ্জার্স সদস্য নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন রেঞ্জার্স সদস্য এবং দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা।
অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা পুলিশ বাহিনীর ২২টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং এতে ৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে
আল-জাজিরা বলছে, ইমরান খানের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল সোমবার ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে পৌঁছে যায় পিটিআই নেতা-কর্মীদের গাড়িবহর। সেখানেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভ ঠেকাতে একদিন আগে থেকেই ইসলামাবাদের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুইমাসের জন্য জারি করা হয়েছে ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা।
এছাড়া পাঞ্জাবেও তিনদিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাদেশিক পুলিশ প্রধান উসমান আনোয়ার বলেছেন, সোমবার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ১১৯ জন এবং পুলিশের ২২টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুইজন কর্মকর্তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান তিনি।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) নেতাকর্মীদের ইসলামাবাদে পৌঁছানোর জন্য নির্ধারিত দিন ছিল গত ২৪ নভেম্বর। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গাড়িবহরের আকার এবং পথে ব্যাপক ব্যারিকেড থাকায় তারা নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে পারেননি। তবে দলটি জানিয়েছে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে যেকোনো মূল্যে ইসলামাবাদে তাদের সমাবেশের জন্য ঘোষিত স্থান ডি-চকে পৌঁছাতে চায়।
এই অবস্থা মোকাবিলায় পাকিস্তান সরকার দেশটির সংবিধানের ২৪৫ অনুচ্ছেদের আওতায় রাজধানীতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর এক সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনীকে অনুচ্ছেদ ২৪৫-এর আওতায় মাঠে নামানো হয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে অস্থিতিশীলতা এবং সশস্ত্র হামলাকারীদের শক্ত হাতে দমন করা হয়। এ ছাড়া, ‘দেখামাত্র গুলি’ করার নির্দেশও জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
বাড়তে থাকা নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ইসলামাবাদে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৪৫-এর অধীনে মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার এবং দাঙ্গাবাজ ও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। এমনকি চরম পদক্ষেপ হিসেবে দাঙ্গাকারীদের দেখামাত্র গুলি করারও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেকোনো এলাকায় কারফিউ জারি করতে পারে। এ ছাড়া, ইসলামাবাদজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং কিছু সদস্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন।
ইসলামাবাদের খুব কাছে ইমরান খানের ‘আপসহীন’ সমর্থকেরা, পরিস্থিতি থমথমেইসলামাবাদের খুব কাছে ইমরান খানের ‘আপসহীন’ সমর্থকেরা, পরিস্থিতি থমথমে
গত সপ্তাহে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছিল যে, পিটিআইয়ের পরিকল্পিত বিক্ষোভ অবৈধ এবং সরকারকে জনজীবন ব্যাহত না করে ইসলামাবাদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিল। অপর দিকে, গতকাল দিনভর পিটিআইয়ের গাড়িবহর চলমান থাকার মধ্যেই পাঞ্জাব সরকার ও পুলিশ জানিয়েছে, হাকলা ইন্টারচেঞ্জ বা মোড়ে বিশৃঙ্খলাকারীদের হাতে এক কনস্টেবল নিহত হয়েছেন।
পিটিআই নেতা শওকত ইউসুফজাই আটকের বুরহান ইন্টারচেঞ্জ থেকে ডনকে বলেছেন, গাড়িবহরগুলো ইসলামাবাদের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে। তবে বহরের আকার ও সড়কে থাকা ব্যারিকেডের কারণে ধীরে ধীরে এগোতে হচ্ছে। তিনি দাবি করেছেন, ‘বিশাল মিছিল’ দেখে পুলিশ পিছু হটেছে। ইউসুফজাই আরও বলেছেন, খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী গান্দাপুর শান্তিপূর্ণভাবে কিন্তু যেকোনো মূল্যে ডি-চকে পৌঁছাতে চান।
ইউসুফজাই বলেছেন, ‘নিরপরাধ রাজবন্দীদের- যার মধ্যে ইমরান খানও আছেন- মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত মিছিল বন্ধ হবে না।’ তিনি বলেন, ‘সরকার অদক্ষ এবং তাদের লক্ষ্য কেবল জনগণের ওপর লাঠিপেটা করা এবং রাস্তা অবরুদ্ধ করা। সরকারের একমাত্র লক্ষ্য পিটিআইকে দমন করা। তারা রাজনৈতিক লোক নয়। আমরা ধীরে ধীরে আমাদের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহর ইচ্ছায়, সত্যই বিজয় লাভ করবে।’
আপনার মতামত লিখুন :