আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১১ নভেম্বর সকালে, পূর্ব লন্ডনের ইলফোর্ডের পুলিশ ব্রিসবেন রোডে পার্ক করা সিলভার রঙের গাড়ির ভিতরে একটি মৃতদেহ খুঁজে পায়।মৃতদেহটি ২৪ বছর বয়সী হর্ষিতা ব্রেলারের যিনি দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং গত বছরের আগস্টে পঙ্কজ লাম্বাকে বিয়ে করার পর ২০২৪ সালের এপ্রিলে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। দিনকয়েক আগে হর্ষিতা নর্থহ্যাম্পটনশায়ারে তার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন।
মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পর জানা যায় তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের মতে, হর্ষিতাকে সম্ভবত তার স্বামী পঙ্কজ (২৩) খুন করেছে, যিনি অপরাধ করার পরপরই দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। গাড়ির ডিকিতে লুকিয়ে রাখা হর্ষিতার দেহটি ১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ইলফোর্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নর্থহ্যাম্পটন পুলিশ বলেছে, "তদন্ত চলাকালীন আমাদের সন্দেহ যে এই মাসের শুরুতে নর্থহ্যাম্পটনশায়ারে হর্ষিতাকে তার স্বামী পঙ্কজ লাম্বা খুন করেছে।"
নর্থহ্যাম্পশেয়ারে বাড়ি ছিল হর্ষিতা-পঙ্কজের। আর যেখান থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে তা প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার দূরে। অর্থাৎ পুলিশ মনে করছে, হর্ষিতাকে আগে খুন করে তাঁর দেহ গাড়িতে করে এতদূর নিয়ে এসে ফেলে রেখে দিয়েছিল পঙ্কজ। তারপর সে দেশ ছেড়েই পালিয়েছে বলে সন্দেহ।
কমপক্ষে ৬০ জন তদন্তকারী আপাতত এই ঘটনার তদন্ত করছেন এবং দ্রুত পঙ্কজকে গ্রেফতার করতে মরিয়া তাঁরা। হর্ষিতার বাড়ি থেকে দেহ উদ্ধারের ঘটনাস্থল পর্যন্ত রাস্তার সব সিসিটিভি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। হর্ষিতার পরিবার জানিয়েছে, পঙ্কজ মাঝেমধ্যেই তাঁদের ফোন করে জানাত যে হর্ষিতা তাঁর মায়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে। পাশাপাশি কখনও ঠিক সময়ে খাবার দিতে পারে না! এই নিয়ে তাঁদের মধ্যে নাকি অশান্তি হত। ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় হর্ষিতার সাথে শেষবার তার পরিবারের কথা হয়। সে বলেছিলো রাতের খাবার তৈরি করে তার স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষা করছে। দুদিন তার ফোন বন্ধ থাকায় উদ্বেগ বেড়ে যায়, হর্ষিতার পরিবার ১৩ নভেম্বর নর্থহ্যাম্পটনশায়ার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে । ১৪ নভেম্বর ইলফোর্ডে হর্ষিতার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ততক্ষণে, পঙ্কজ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল, শুরু হয় আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান।
হত্যার তদন্তে জানা যায় যে হর্ষিতা পারিবারিক সহিংসতার ইতিহাস সহ্য করেছিল। সেপ্টেম্বরে, হর্ষিতাকে নির্যাতনের ঘটনার পর তার স্বামীর বিরুদ্ধে একটি ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স প্রোটেকশন অর্ডার (DVPO) মঞ্জুর করা হয়েছিল। তবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। প্রতিবেশীরা তার মৃত্যুর আগের দিনগুলিতে দম্পতির বাড়ি থেকে তর্কাতর্কির আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। দিল্লিতে অবস্থিত হর্ষিতার পরিবার মিডিয়া সাক্ষাৎকারে তাদের মেয়ে হারানোর যন্ত্রণার কথা জানিয়েছেন ।
তার বাবা, সতবীর ব্রেলা জানান হর্ষিতা একজন সহজ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তরুণী ছিল। তাঁর শিক্ষক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল। হর্ষিতার বোন সোনিয়া দাবাস জানিয়েছেন , তাঁর বোন একটি ওয়ারহাউসে কাজ করতো এবং পঙ্কজ সেইসময়ে লন্ডনে ছাত্র ছিলেন। তখন দুজনের মধ্যে আলাপ হয়। হর্ষিতার বাবা সতবীর ব্রেলা বলেছেন -'আমি চাই আমার জামাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক এবং আমি চাই আমার মেয়ের মরদেহ বাড়িতে আনা হোক। মেয়েকে হারিয়ে আমার জীবনে আর কিছু অবশিষ্ট নেই।'
সূত্র: এনডিটিভি
আপনার মতামত লিখুন :