ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হতে যাচ্ছে। তিনি এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান টেক্সটাইল রপ্তানিকারক। এ অবস্থায় শীর্ষ আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো সরবরাহে বৈচিত্র্য আনতে মনোযোগ দিচ্ছে এবং তারা বাংলাদেশের বিকল্প উৎস খুঁজছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় আশাবাদী হয়ে উঠেছে ভারতীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা মনে করছেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর নতুন আমলে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর পরিকল্পনা করেছেন। এই বিষয়টি ভারতের জন্য মার্কিন রপ্তানি বাজারে বড় একটি অংশ দখলের সুযোগ তৈরি করে দেবে। পাশাপাশি ভারতীয়রা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগও নিতে চায়।
এ বিষয়ে কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির (সিআইটিআই) চেয়ারম্যান রাকেশ মেহরা বলেন, ‘নতুন (মার্কিন) প্রশাসনের সঙ্গে ভারতীয় টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক শিল্প, চীনের বিকল্প সরবরাহকারী হিসেবে নিজেদের ভূমিকা বাড়ানোর বিষয়ে আশাবাদী।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের টেক্সটাইল খাতের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজার। ওই বছরে এই খাতের ২৭ শতাংশ রপ্তানিই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানও ভালো প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের টেক্সটাইল রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক ০৬ শতাংশ।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ বেড়েছে। এই বিষয়ে মেহরা বলেন, ‘এই পারফরম্যান্স আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছাড়িয়ে গেছে।’
মেহরা জানান, এই সময়ে চীনের এই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২ শতাংশ, ভিয়েতনামের দশমিক ৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের মধ্যে ভারতের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমন উন্নতি সম্ভব হয়েছে।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের টেক্সটাইল পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক একটি বড় বাধা। বিশেষ কিছু পোশাক ক্যাটাগরিতে এই শুল্কের পরিমাণ ৩২ শতাংশ পর্যন্ত। এ বিষয়ে রাকেশ মেহরা বলেন, ‘সিআইটিআই আশাবাদী যে, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। এতে শুল্ক কাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে।’
ভারতের অ্যাপারেলস এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলও (এইপিসি) ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে বেশ আশাবাদী। সংগঠনটির চেয়ারম্যান সুধীর সেখরি জানান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন দেশগুলোতে ভারতের উপস্থিতি বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রেতারা বাংলাদেশ এবং চীনের বিকল্প হিসেবে ভারতকে ক্রমেই বেশি নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে।’
এইপিসির মহাসচিব মিথিলেশ্বর ঠাকুর বলেছেন, ‘বাণিজ্যে চলমান ব্যাঘাত এবং ক্রমবর্ধমান খরচ মোকাবিলায় এই খাতে অব্যাহত তহবিল, প্রশিক্ষণ এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন।’ অনুবাদ : আজকের পত্রিকা
আপনার মতামত লিখুন :