খালিদ আহমেদ: ভারতের কলকাতার কালীঘাটে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে গভীর রাতে নিরপত্তারক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়া ব্যক্তি সম্পর্কে নতুন তথ্য দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। আজ মঙ্গলবার পুলিশ জানায়, হাফিজুল মোল্লা গত বছর অবৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং কোনো একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তার যোগসূত্র থাকতে পারে।
কলকাতা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সোমবার সন্ধ্যায় জানান, হাফিজুল মোল্লা গত বছর দুর্গা পূজার সময় সাঁতার কেটে ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসেন এবং কয়েকদিন থাকেন।
মমতার বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাঙার বিষয়ে তদন্তকারী দলের অন্যতম এই সদস্য আরও জানান, হাফিজুল মোল্লার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, তিনি বাংলাদেশে কেন গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি কী করেছেন। পশ্চিম বঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার হাসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুল মোল্লাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'হাফিজুল মোল্লা কোনো একটি জঙ্গি দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন, এমন আলামত আমরা পেয়েছি। তবে কোনো কিছুই এখনও নিশ্চিত না।'
তদন্ত থেকে জানা গেছে, হাফিজুল মোল্লা অন্তত ১১টি সিম কার্ড ব্যবহার করেছেন। তিনি এই সিমগুলো ব্যবহার করে বাংলাদেশি এবং ভারতের ঝাড়খণ্ড ও বিহার রাজ্যের কিছু নম্বরে কল করেছেন। তিনি বলেন, তবে এসব কথোপকথনের বিষয়বস্তু কী ছিল সেই বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি,
তিনি আরও জানান, হাফিজুল মোল্লা অন্তত ৭ বার কালীঘাট এলাকায় গিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে মমতার বাসভবনের ছবি তুলেছিলেন। তিনি স্থানীয় শিশুদের চকলেট দিয়ে প্রলুব্ধ করেছিলেন, যাতে তারা ওই বাড়ি সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করে নিয়ে আসে।
হাফিজুল মোল্লা উচ্চ পর্যায়ের জি-প্লাস নিরাপত্তা ব্যবস্থার চোখ এড়িয়ে একটি লোহার রডসহ মমতার বাসভবনে ঢুকে পড়েন। সারারাত সেখানে এক কোণে ঘাপটি মেরে বসে থাকেন তিনি। সকালে নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে খুঁজে পেয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। সোমবার হাফিজুল মোল্লার পুলিশী হেফাজতের মেয়াদ ১৮ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছেন আদালত।
যদিও পরিবারের দাবি, হাফিজুল মানসিক ভারসাম্যহীন। গত ৫-৬ মাসের বেশি সময় ধরে হাফিজুলের চিকিৎসা চলছিল বলে জানান তার স্ত্রী জেস্মিনারা বিবি । তার বাবাও দাবি করেন, হাফিজুল পাগল হয়ে গিয়েছিল। তার পক্ষে এমন কাজ সম্ভব নয়।
এদিকে হাফিজুল কাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা বিবেক সহায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবুও বিতর্ক থামছে না । সোমবার কলকাতার আলিপুর আদালতে তাকে পেশ করা হলে ফের তাকে সাত দিনের সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, সবটাই সাজানো ঘটনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মিডিয়া কভারেজ দেওয়ার জন্য এই ঘটনা। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে রাজ্যের মানুষ কতটা নিরাপদ?
আপনার মতামত লিখুন :