শিরোনাম
◈ দেশবাসীর প্রতি মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারির আহ্বান ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতায় তিন মাস ◈ বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে নানা মন্তব্য ◈ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না : তারেক রহমান ◈ ‘আসিফ নজরুলের সঙ্গে আ. লীগ নেতাকর্মীদের আচরণ দেশের আত্মমর্যাদার ওপর আঘাত’ : তারেক রহমানের বিবৃতি ◈ কী হয়েছিল জেনেভা বিমানবন্দরে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে? ভিডিও ◈ হিলি স্থলবন্দরে একদিনেই এলো ১৮০০ মেট্রিক টন আলু, কিছুটা কমেছে দাম ◈ এমবাপ্পেকে ছাড়াই নেশন্স লিগের জন্য দল ঘোষণা করলো ফ্রান্স ◈ তৃণমূল থেকে ক্রিকেটার বের করার লক্ষ্যে জিয়া টুর্নামেন্ট সোমবার শুরু ◈ ইংলিশ ক্রিকেটার অ্যান্ডারসক কেন ৪২ বছর বয়সে আইপিএলে নাম দিলেন?

প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:৩৮ দুপুর
আপডেট : ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০৬:২১ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাশিয়ার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রুশ আক্রমণ শুরুর পর এখন তৃতীয় শীতের দ্বারপ্রান্তে ইউক্রেন। আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, শীতের মৌসুমে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও সাইবার আক্রমণ বেড়ে যায়।

রুশ আক্রমণ শুরুর পর এখন তৃতীয় শীতের দ্বারপ্রান্তে ইউক্রেন। আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, শীতের মৌসুমে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও সাইবার আক্রমণ বেড়ে যায়। এর লক্ষ্য হলো কিয়েভের বশ্যতা স্বীকার এবং কর্তৃপক্ষকে প্রতিরোধে হাল ছাড়তে বাধ্য করা। যদি এ ধরনের আক্রমণ ইউরোপীয় অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে হয়, তা কতটা মোকাবেলা করা যাবে এ নিয়ে সম্প্রতি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাবেক ন্যাটো মহাসচিব ও ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেন।


বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরে চলতি সপ্তাহে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এফটিতে লিখেছেন এ রাজনীতিবিদ। সেখানে বলা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংসের মুখে পড়লে ইউরোপের সঙ্গে বৈশ্বিক বাণিজ্যও চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়ে উঠবে। তাই প্রতিপক্ষের সুস্পষ্ট হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপকে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।


রুশ কর্মকর্তারা প্রায়ই বলে থাকেন, ইউরোপে সংঘাত বাড়লে তাদের লক্ষ্যবস্তু হবে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। দেশটির ‘২০০০ মিলিটারি ডকট্রিন’ অনুসারে, আধুনিক যুদ্ধের মূল বৈশিষ্ট্য হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা, অবকাঠামো, যোগাযোগের মাধ্যম এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস। ২০২২ সালে এক জ্যেষ্ঠ রুশ কর্মকর্তা জাতিসংঘকে বলেছিলেন, বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট ‘প্রতিশোধমূলক হামলার জন্য বৈধ লক্ষ্যবস্তু’ হতে পারে।

ইউরোপের সাগরতলে (সাবসি) বিস্তৃত কেবল নেটওয়ার্ক গুরুতর উদ্বেগের কারণ বলে মনে করেন অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেন। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ প্রকাশ্যে ইউক্রেনকে সমর্থন করার জবাবে হামলার হুমকিও দিয়েছেন। এ সাবসি কেবলগুলো বিশ্বের ইন্টারনেট ট্র্যাফিকের প্রায় ৯৮ শতাংশ বহন করে। এছাড়া তিনটি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ সংযোগের জন্য এ কেবলের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। কেবলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ফোন যোগাযোগ, গাড়ি, টেলিভিশন, এমনকি ফ্রিজও।

এরই মধ্যে গভীর সমুদ্র গবেষণায় রাশিয়া বিস্তৃতভাবে কাজ করছে, যাকে ন্যাটোর সাবেক মহাসচিব অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেন হুমকি হিসেবে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘‌আয়ারল্যান্ডের উপকূলসহ ঝুঁকিপূর্ণ কেবলের অবস্থান চিহ্নিত করতে রুশ সাবমেরিনগুলোর চলাচল উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।’

তার মতে, এখন রুশ আক্রমণ ক্ষেপণাস্ত্রনির্ভর না হলেও চলবে। প্যারিস অলিম্পিকের ঠিক আগে দেখা গেছে যে উচ্চগতির ট্রেন নেটওয়ার্কে অগ্নিসংযোগের কারণে কী পরিমাণ ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এ হামলার অপরাধীদের চিহ্নিত করা না গেলেও ইউরোপ যে হাইব্রিড হুমকির সম্মুখীন সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলেন অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেন।

২০২১ সালে রাশিয়াভিত্তিক র‍্যানসমওয়্যার গ্রুপের সাইবার আক্রমণে আয়ারল্যান্ডের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট ২৯১৫৫ ইউরোপজুড়ে নাশকতার ইন্ধন দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২০২০ সালে সাইবার আক্রমণের ধারা প্রসারিত হয়, যা প্রায়ই ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সরকারি সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করে, বর্তমানে যা ইউক্রেনে সাহায্য ব্যাহত করার লক্ষ্যে ব্যবহার হচ্ছে বলেও অভিযোগ এ রাজনীতিবিদের।

অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেন বলেন, ‘ইউরোপকে ইউক্রেনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং প্রস্তুতি বাড়াতে হবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, এআই ও উন্নত সাইবার সিকিউরিটির মতো সুপরিকল্পিত অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবন এখন আর শুধু অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার প্রশ্ন নয়; বরং আমাদের প্রতিরক্ষা এবং স্থিতিস্থাপকতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

এ ধরনের অবকাঠামোগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ বেশ বড়, ‘যার জন্য শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করতে পারি না’ বলে মন্তব্য অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেনের। ডিজিটাল কানেক্টিভিটি বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তিনি। টেলিকম সংস্থাগুলো ইউরোপের ডিজিটাল অর্থনীতি আপগ্রেড ও সুরক্ষিত করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে। তবে ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘিকে উদ্ধৃত করে রাসমুসেন জানান, অবকাঠামো পরিষেবার বিভক্তি ইউরোপের আন্তঃসম্পর্কিত অর্থনীতিগুলোর জন্য বড় একটি সমস্যা।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে যথাক্রমে তিন ও চারটি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর কাজ করছে। অন্যদিকে ইইউতে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর রয়েছে ৩৪টি। এ পার্থক্য ইউরোপীয় কোম্পানিকে সাবসি কেবলের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় বিনিয়োগ এবং ভবিষ্যতে পরিমার্জনের ক্ষমতাকে সীমিত করে। এটি মোকাবেলা করার জন্য ইউরোপের উচিত কোম্পানিগুলোকে ইইউর একক বাজারে প্রসারিত করার অনুমতি দেয়া। অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেনের মতে, এ উদ্যোগ নিত্যপ্রয়োজনীয় অবকাঠামোয় আরো বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে।

অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেনের মতে, আরো দুটি ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে ইউরোপের। একদিকে রয়েছে সাইবার অ্যাটাক, কাইনেটিক অ্যাটাক ও নাশকতার হুমকি। এছাড়া যদি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার সঠিক শর্ত ইউরোপে তৈরি না হয়, তবে এ পরিণতি হবে বিপর্যয়কর। তাই অবকাঠামো ও কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে, যা ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি গ্রহণে সহায়তা করবে। এ প্রসঙ্গে চীনের হুমকিও সামনে আনেন সাবেক ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী।

তার মতে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর রুশ জ্বালানি ব্যবহার বাদ দিয়েছে ইউরোপ। এখন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হলে ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য নতুন দুর্বলতা তৈরি হবে। বিষয়টি রাশিয়াও অবগত। ইউরোপ যদি সঠিকভাবে তার প্রযুক্তিগত, অর্থনৈতিক বা অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা না করে, তাহলে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বাড়ানোর জন্য তার প্রচেষ্টা দীর্ঘমেয়াদে অকার্যকর বা অপর্যাপ্ত হবে।

সুত্র : বনিক বার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়