আট বছর আগে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেডি ভ্যান্স ডোনাল্ড ট্রাম্পের তিক্ত সমালোচক ছিলেন। প্রকাশ্যে রিপাবলিকান এই নেতা ২০২৪ সালের বিজয়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘মূর্খ’ এবং ‘ঘৃণ্য’ ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে জেডি ভ্যান্স ট্রাম্পকে অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গেও তুলনা করতেন।
কিন্তু এত কিছুর পরেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সদ্য বিজয়ী ট্রাম্প গত জুলাই মাসে ভ্যান্সকে তার রানিং মেট হিসেবে বেছে নেন।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেন ট্রাম্পকে ‘মূর্খ’ বলা ৪০ বছর বয়সি সেই জেডি ভ্যান্স।
২০১৬ সালে জেডি ভ্যান্সের একটি স্মৃতিকথামূলক বই প্রকাশিত হয়। নাম হিলবিলি এলিজি।
বইটি নিই ইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার বই। পরবর্তী সময়ে বইটি নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়। বই থেকে জানা যায়, ওহাইওর মিডলটাউনে তার জন্ম। পুরো নাম জেমস ডোনাল্ড বোম্যান ভ্যান্স।
তার মা মাদকাসক্ত ছিলেন। ছোটবেলায় বাবা তাদের ছেড়ে চলে যান। পরে নানা-নানির কাছে বড় হন ভ্যান্স।
২০২২ সালে ওহাইওর সিনেট নির্বাচনে লড়াই না করার ঘোষণা দেন রিপাবলিকান সিনেটর রব পোর্টম্যান। তখন তরুণ রাজনীতিক হিসেবে ভ্যান্সের নাম সামনে আসে।
রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো ওহাইও রাজ্যের সিনেটর নির্বাচিত হন ভ্যান্স। ভ্যান্স ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে ২০১৬ সালে টুইটারে (বর্তমানে এক্স হ্যান্ডেল) এবং সাক্ষাৎকারের সময় বলেছিলেন, ‘আমি একেবারেই ট্রাম্পের সমর্থক নই। আমি ওকে কখনোই পছন্দ করিনি। আমার তাকে ঘৃণ্য ব্যক্তি মনে হয়, একজন মূর্খ।’ ওই সময়ই জেডি ভ্যান্সের স্মৃতিকথা ‘হিলবিলি এলিজি’ প্রকাশ পায়, যা তাকে দেশজুড়ে খ্যাতি এনে দেয়।
সেই বছরেই ফেসবুকে তার ল স্কুলের রুমমেট এবং বন্ধু জন ম্যাক্লরিনের (বর্তমানে জর্জিয়ার একজন স্টেট সিনেটর) সঙ্গে কথোপকথনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘আমেরিকান হিটলার’ বলেও মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল তাকে।
নিজেকে একজন ট্রাম্পবিরোধী হিসেবে পরিচয় দেওয়া ভ্যান্সকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প নিজের রানিং মেট বা নিজের পরবর্তী প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনীত করায় বেশ শোরগোল দেখা দেয়। তবে ট্রাম্প ও তার অনেক মিত্র এবং উপদেষ্টা ভ্যান্সের রূপান্তরকে বেশ ভালোভাবেই দেখেছে।
তাদের ধারণা, ভ্যান্সের রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে ট্রাম্পের যথেষ্ট মিল রয়েছে। উভয়েরই রিপাবলিকান পার্টির পুরনো নেতৃত্বদের সঙ্গে মতানৈক্য রয়েছে, যেখানে বিদেশি নীতির বাজপাখি এবং মুক্ত বাজারের প্রচারকরা এখনো প্রভাব বিস্তার করে।
রক্ষণশীল ভাষ্যকার টাকার কার্লস রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ভ্যান্স আসলে বুঝতে পেরেছিলেন ট্রাম্প কী নিয়ে চলছেন।’ যদিও ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের রূপগুলো এখনো অস্পষ্ট, তবে ধারণা করা যায়, ভ্যান্স নীতি প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
ভ্যান্স গত সপ্তাহে অ্যারিজোনার এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যেযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে আমরা আমেরিকান সমৃদ্ধির স্বর্ণযুগের চূড়ায় আছি।’
জেডি ভ্যান্সের এই পরিবর্তন অবাক করেছে অনেককেই। কয়েক বছরের মধ্যেই ট্রাম্পকে নিয়ে ভ্যান্সের মনোভাব বদলে যায়। কট্টর সমালোচক থেকে শুভাকাঙ্ক্ষী বনে যান তিনি। হয়ে ওঠেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন। সূত্র : রয়টার্স ও কালবেলা।
আপনার মতামত লিখুন :