রাশিদুল ইসলাম : সেই মাস দুয়েক ধরেই (৯ মে) মাহিন্দা কোথায়, জানেন না দ্বীপরাষ্ট্রবাসী।
তার প্রাসাদে শ্রীলঙ্কাবাসীর বিলাসের ছবি এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে নেটমাধ্যমে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার আগে থেকেই অবশ্য কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষ। কোথায় তিনি, এখনও বলতে পারছেন না ঘনিষ্ঠরাও। চারিদিকে রটে গিয়েছে তিনি নৌবাহিনীর জাহাজে চেপে দ্বীপরাষ্ট্র ছেড়েছেন। কেউ আবার বলছেন, বিমানে চেপে দেশ ছেড়েছেন রাজাপক্ষ। আবার কারও দাবি, তিনি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে আছেন। তবে, নিশ্চিত করে কেউই কিছু বলতে পারেননি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
যেমন তাঁর দাদা মাহিন্দা রাজাপক্ষর ঠিকানাও এখনও শ্রীলঙ্কাবাসীর অজানা। সেই মাস দুয়েক ধরেই (৯ মে) মাহিন্দা কোথায়, জানেন না দ্বীপরাষ্ট্রবাসী। বাড়িতে হামলা, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পরই শ্রীলঙ্কাভূম থেকে যেন কর্পূরের মত উবে গিয়েছেন মাহিন্দা। মঙ্গলবার, ৫ জুলাই পার্লামেন্ট থেকে বের করে দেওয়ার পর গোটাবায়াও উবে গেলেন।
একসময় এই দ্বীপরাষ্ট্রে ছিল ওলন্দাজদের রমরমা। তাঁদের হাতেই তৈরি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের ভবন। জনগণ যখন তাঁর ভবনে আছড়ে পড়ল, নিজের মত করে রান্নাঘরে ঢুকে চা খেল, বিছানায় শুয়ে সেলফি তুলল, সুইমিং পুলে স্নান করল, তখন বারবারই উঠল প্রশ্নটা, কোথায় গোতাবায়া?
কী ভুল ছিল গোতাবায়ার?
মার্চ থেকে, যখন সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা ‘ গোতা গো হোম’ নামে মিছিল শুরু করেন, তখনও গোতাবায়া পদত্যাগ করতে চাননি। তাঁর যুক্তি ছিল যে তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। শ্রীলঙ্কার ৫২.২৫ শতাংশ মানুষ তাঁকে নির্বাচন করেছেন। শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাংবিধানিক ব্যবস্থা রয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমেই সেই পদ পূরণ করা হবে। ২০১৯ সালে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শুরু হয়েছিল। পাঁচ বছর শেষে, ২০২৪ সালে নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে।
কিন্তু, তিনি শ্রীলঙ্কার ভেঙে পড়া অর্থনীতি নিয়ে জনগণের ক্ষোভের পরিমাণটা বুঝতে পারেননি। উলটে গোতাবায়া বিশ্বাস করতেন যে সন্ত্রাসের হাত থেকে তিনিই শ্রীলঙ্কার রক্ষাকর্তা। ২০০৯ সালে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় পরাজিত হয় এলটিটিই। সেই সময় সরকারে ছিলেন তাঁর দাদা মাহিন্দা রাজাপক্ষ। তিনি সেই সরকারের প্রতিরক্ষা দফতরের দায়িত্বে ছিলেন। শ্রীলঙ্কার ত্রাণকর্তা হিসেবে তাঁর সেই ভাবমূর্তি মনে রাখবে দ্বীপরাষ্ট্রবাসী।
তাহলে, এটাই কি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক পরিণতি?
আসলে গোতাবায়া রাজাপক্ষ বিশ্বাস করতেন যে এলটিটিইর বিরুদ্ধে সামরিক কৌশল, কলম্বোর বহুল প্রশংসিত সৌন্দর্যায়ন, তাঁকে দেশ পরিচালনার সুযোগ এনে দিয়েছে। কিন্তু, তাঁর কর ছাঁটাই, জৈব চাষে উৎসাহিত করার জন্য কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত, করোনা অতিমারী এবং ইস্টার বোমা হামলায় পর্যটনে ধাক্কা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে যন্ত্রণার জন্ম দেয়। ৩১ মার্চ, কলম্বো শহরের মিরিহানা পাঙ্গিরিওয়াত্তা শহরতলিতে গোটাবায়ার বাড়িতে হামলা চালান শত শত বিক্ষোভকারী। তাতেই যেন লেখা ছিল আজকের এই ভবিষ্যৎ। যা গোটাবায়া পড়তে পারেননি।
আপনার মতামত লিখুন :