শিরোনাম
◈ সাবেক প্রতিমন্ত্রী রাসেল ও ডিএমপি কমিশনার গোলাম ফারুককে দেখা গেল কলকাতায় ◈ সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির গ্রেফতার ◈ ধানমন্ডিতে বাসায় ঢুকে ডাকাতি চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৩ জনের ৮ জনই শিক্ষার্থী (ভিডিও) ◈ বেসিসের নতুন সভাপতি রাশিদুল হাসান ◈ মালয়েশিয়ায় এমআরপি পাসপোর্ট সেবা বন্ধ: রেমিটেন্স শাট ডাউনের হুমকি ◈ সায়মা ওয়াজেদকে নিয়ে আপত্তি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে জটিলতা তৈরি করবে ? ◈ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু হলো ব্যয়বহুল লিগামেন্ট প্রতিস্থাপন চিকিৎসা ◈ কুমিল্লার আহত জনি ও রাকিব চিকিৎসার অভাবে পঙ্গুতের পথে চাকুরী হারিয়ে চলছে মানবেতর জীবনযাপন ◈ টাঙ্গাইলে পাখির নিরাপত্তা আশ্রয় তৈরিতে গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি স্থাপন  ◈ বিনা টিকিট যাত্রী থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ে দুই রেল কর্মকর্তা বরখাস্ত

প্রকাশিত : ৩১ অক্টোবর, ২০২৪, ০৮:২২ রাত
আপডেট : ০১ নভেম্বর, ২০২৪, ০৩:১৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারত গোপন মিশনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সোনা দেশে ফেরাচ্ছে কেন? 

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা ১০২ টন সোনা ফিরিয়ে এনে দেশেই মজুত করেছে। লন্ডনে অবস্থিত ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে এই সোনা রাখা ছিল। বিদেশ থেকে সোনার মজুত ফিরিয়ে আনার যে প্রক্রিয়া ভারতের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুরু করেছে, তারই অংশ হিসেবে সর্বশেষ এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ভারতে এনে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে।

রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার মজুতসংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর শেষে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ মজুতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৫৫ টনে, যার অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ৫১০ দশমিক ৫০ টন দেশের অভ্যন্তরে রাখা হয়েছে। ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, বিদেশে স্বর্ণ মজুত রাখার ঝুঁকি এড়াতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পদক্ষেপ নিয়েছে, এই তথ্য তা প্রতিফলিত করছে।

ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে সোনার মজুত নিরাপদ করতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া সব মিলিয়ে ২১৪ টন সোনা দেশে ফিরিয়ে এনেছে। সরকারের অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, অনিশ্চিত সময়ে স্বর্ণের মজুত বিদেশে রাখার চেয়ে বরং দেশে সুরক্ষিতভাবে রাখা অনেক বেশি নিরাপদ।

তবে স্বর্ণের মজুত ভারতে ফিরিয়ে আনার এই প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে অনেক গোপনে। এ লক্ষ্যে গোপন মিশন পরিচালনা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ ফ্লাইট ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল এ উপলক্ষে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও ভারত সরকারের কর্মকর্তারা দিনরাত কাজ করেছেন, সোনা ফিরিয়ে আনার তথ্য যাতে প্রকাশ না হয়ে পড়ে।

এ ধরনের শিপমেন্টে যেসব কর আরোপ করা হয়, তা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এর ফলে স্বর্ণ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ছিল মসৃণ। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারত সরকার ভবিষ্যতে আরও স্বর্ণের মজুত ফিরিয়ে আনতে পারে। তবে কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে চলতি বছরে বড় পরিমাণ স্বর্ণ ফিরিয়ে আনা হবে, এমন পরিকল্পনা আপাতত নেই।

রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং বিশ্বের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, বৈদেশিক মুদ্রা বা সম্পদের রিজার্ভ শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করার একটি উপায় হলো সোনায় বিনিয়োগ করা। মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামা এবং অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে সোনা সব সময় একধরনের নিরাপত্তা দেয়। আর্থিক সংকট কিংবা মূল্যস্ফীতিতে সোনা মোটামুটি তার মূল্য ধরে রাখে।

কাগুজে মুদ্রার বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা না থাকলেও সোনার তা রয়েছে। আর্থিক সংকট অথবা বাজারের ওঠানামার মধ্যে সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করা হয়। স্বর্ণে বিনিয়োগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ঝুঁকি কমিয়ে আনে। একই সঙ্গে এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্বাসযোগ্যতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পায়।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে সোনার মজুত : ইকোনমিক টাইমস জানায়, চলতি বছরের শুরুতে এমন খবর জানা যায় যে যুক্তরাজ্য থেকে ১০০ টনের মতো সোনা ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং প্রায় একই পরিমাণ সোনা দেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ১৯৯০–এর দশকের পর এটাই ছিল বড় পরিমাণে সোনা দেশে ফিরিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ। সে সময় আর্থিক সংকটের কারণে ভারত তার স্বর্ণ মজুতের একটা বড় অংশ বিদেশে পাঠিয়েছিল।

১৯৯০–এর দশের গোড়ার দিকে ভারত ব্যাংক অব ইংল্যান্ড থেকে ৪০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের একটি ঋণ নিয়েছিল। লেনদেন ভারসাম্যের সংকটে পড়ে, অর্থাৎ বৈদেশিক দায়দেনা মেটানোর স্বার্থে ভারতে ওই ঋণ নিয়েছিল। তবে বিনিময়ে দিল্লিকে তার স্বর্ণের মজুতের একটি অংশ ব্রিটেনে পাঠাতে হয়েছিল। ভারত যদিও ওই ঋণ দ্রুতই পরিশোধ করেছিল, ওই স্বর্ণের বেশির ভাগই ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থেকে গিয়েছিল।

এখনো ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এবং ব্যাংক অব ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টে (বিআইএস) ভারতের ৩২৪ টন সোনা মজুত রয়েছে। ব্যাংক দুটি যুক্তরাজ্যে অবস্থিত। এই স্বর্ণের বড় অংশই ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মজুতের অংশ। পাশাপাশি ২০ টনের কিছু বেশি সোনা রাখা আছে স্বর্ণ আমানত হিসেবে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণ মজুতকারী ব্যাংক হলো নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডও এ ক্ষেত্রে বেশ বড় ভূমিকা রাখে। স্বর্ণ রাখার জন্য তাদের ভল্ট তৈরি হয় ১৬৯৭ সালে। পরে এর আরও সম্প্রসারণ ঘটে ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিপুল পরিমাণ সোনা আসার কারণে।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের স্বর্ণ ভল্টে বর্তমানে চার লাখ সোনার বার রাখা আছে। সেপ্টেম্বরের দিকে তাদের কাছে মজুত সোনার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৩৫০ টন। ব্রিটেনের এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সোনা রাখার সুবিধা হলো লন্ডনের মূল্যবান ধাতুর বাজারের সুবিধাকে কাজে লাগানো। চাইলে এই বাজারে সোনা বিক্রি করে দ্রুত নগদ অর্থ তুলে নেওয়া সম্ভব।

ব্রিটেনে স্বর্ণ মজুত রাখার সুবিধা থাকার পরও ভারতে এখন সেখান থেকে সোনার মজুত ফিরিয়ে আনতে চাওয়ার মূল কারণ হলো বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দ করেছে। এ কারণে ভারতের মতো দেশ তাদের বিদেশে রাখা সম্পদ নিয়ে আগের চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া যে স্বর্ণের মজুত দেশে ফিরিয়ে আনছে, তার অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি।

এখনো ভারত কিছু স্বর্ণ কেন বিদেশে রাখছে : দেশের মধ্যে স্বর্ণ মজুত রাখার কিছু সুবিধা সত্ত্বেও ভারত বাস্তব কিছু কারণে বিদেশের ভল্টে সোনার আংশিক মজুত রাখছে। একটি কারণ হলো, বিদেশে রাখা সোনা সহজে বেচাকেনা করা যায়, বিনিময় করা যায় কিংবা জামানত হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

এ ছাড়া রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া প্রায়ই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সোনা কেনে, যা বিদেশে রাখা সুবিধাজনক। বর্তমান বিশ্বের আর্থিক বাজার একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং বিদেশের সোনা মজুত রাখা হলে প্রয়োজনের সময় তা দ্রুত ব্যবহার করা যায়। উৎস: প্রথম আলো।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়