ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে শনিবার ভোরে দেশটিতে বেশ কিছু বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি এই হামলার প্রধান প্রধান বিষয় এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
এক নয় একাধিক স্থাপনায় হামলা: শনিবার ইরানে তখনো রাত শেষ হয়নি। চারদিকে অন্ধকারে ঢাকা। এমন অবস্থায় ইরানের বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাত হানে ইসরায়েলি বিমান। রাজধানী তেহরানেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের সুনির্দিষ্ট ও টার্গেটভিত্তিক হামলায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং বিমান সক্ষমতার পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এগুলো এতদিন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে ইরান দাবি, হামলায় শুধু ‘সীমিত ক্ষতি’ হয়েছে।
ইসরায়েল ইরানে কতটা কঠিন আঘাত হানতে পেরেছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার না। কোনো দেশই ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য দেয়নি। ইরান বলেছে, ইলাম, খুজেস্তান ও তেহরান প্রদেশে সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এতে দুই সেনা প্রাণ হারিয়েছেন।
ইসরায়েল নিশ্চিত ছিল যে তারা ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড় আঘাত হেনেছে। যার মাধ্যমে এখন ইরানে বিস্তৃত বিমান চলাচলের স্বাধীনতা লাভ করেছে বলে মন্তব্য করেন সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি।
যেসব স্থাপনায় হামলা হয়নি, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ : এবারের ইসরায়েলের হামলায় ইরানের তেল ও পরমাণু স্থাপনাগুলোকে নিশানা করা হয়নি। ফলে এই হামলার জবাবে ইরানের কড়া প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাকে কম।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই মাসের শুরুতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা সমর্থন করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া পরমাণু বা তেল স্থাপনায় আঘাত না করার ব্যাপারে ইসরায়েলের কাছ থেকে সম্মতি আদায় করেছিলেন মার্কিন কর্তা ব্যক্তিরা।
হামলার সমাপ্তি: ইসরায়েল ভোরের এই বোমা হামলাটি শেষ বলে জানিয়েছে। হাগারি বলেন, প্রতিশোধমূলক হামলা সম্পন্ন হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
তারপর ইরানের বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা জানায়, বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হবে।
জবাব না দিয়ে সংযমের আহ্বান : ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি পাল্টাপাল্টি হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। একই সঙ্গে ইরানকে জবাব দান থেকে বিরত থাকতে বলেছে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র দেশটি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারও আঞ্চলিক সংঘাত এড়াতে সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশও ইসরায়েলের এই হামলার কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ইরানের প্রধান আরব প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
তুরস্ক বলছে, ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যকে বড় যুদ্ধের কিনারে নিয়ে এসেছে। ইসরায়েলের সৃষ্ট সন্ত্রাস বন্ধ করা ঐতিহাসিক দায়িত্ব বলেও মন্তব্য করেছে। সিরিয়া ও ইরাকসহ অন্যান্য দেশ এবং হামাস এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
ইরানের জবাব গুরুত্বপূর্ণ : ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিমান হামলাগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করে তাদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছে।
ইরান আরেকটি প্রত্যক্ষ আক্রমণ চালাতে পারে। তবে এতে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া তারা হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো মিত্র গোষ্ঠীগুলোকে আরও সক্রিয় করতে পারে। যদিও উভয়ই ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে বিপর্যস্ত।
চ্যাথাম হাউজের গবেষক সানাম ভাকিল বলেছেন, ইরান সম্ভবত হামলার ক্ষয়ক্ষতি কম দেখাবে। কারণ সামরিক সীমাবদ্ধতা, নিষেধাজ্ঞাজনিত অর্থনৈতিক সংকট এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল ইরানের সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। উৎস: চ্যানেল২৪
আপনার মতামত লিখুন :