ডেইলি মেইল প্রতিবেদন: কাঠের নৌকাটিতে শিশু, নারী ও পুরুষ মিলে প্রায় ১৪০ রোহিঙ্গা মুসলিম কতদিন ধরে সাগরে ভাসছে তা জানা যায়নি। যা জানা গেছে তাদের কাছে কোনো খাবার অবশিষ্ট নেই। তারা ক্ষুধার্ত এবং মরণাপন্ন। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের নৌকাটিকে উপকূলে ভিড়তে দিচ্ছে না। ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে বলছে, মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আচেহ প্রদেশের উপকূলে প্রায় ১৪০ জন দুর্বল ও ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গা মুসলিম, যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু, একটি কাঠের নৌকায় তাদের ভাসতে দেখা যায়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের নৌকাটিকে ভিড়তে দিতে অস্বীকার করে।
শুক্রবার থেকে উপকূলে ভেসে আসছে নীল রঙের নৌকাটি। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে দক্ষিণ আচেহ জেলার লাবুহান হাজির জলসীমায় প্রায় দুই সপ্তাহের ভ্রমণের সময় তিনজন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় রোববার থেকে ১১ জন রোহিঙ্গাকে সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ আচেহ-এর জেলে সম্প্রদায়ের প্রধান মুহাম্মদ জাবাল বলেন, আমাদের সম্প্রদায়, মাছ ধরার সম্প্রদায়, অন্য জায়গায় যা ঘটেছে তার কারণে তাদের নামতে দিতে অস্বীকার করে। তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। সমুদ্রবন্দরে টাঙানো একটি বড় ব্যানারে লেখা ছিল: ‘দক্ষিণ আচেহ রিজেন্সির জনগণ দক্ষিণ আচেহ রিজেন্সি এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন প্রত্যাখ্যান করেছে।’
আচেহ পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী, এই দলটি অক্টোবর ৯ তারিখে কক্সবাজার ত্যাগ করে এবং মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছিল। নৌকার কিছু যাত্রী অন্য দেশে পরিবহনের জন্য অর্থ প্রদান করেছিল বলে জানা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের কিছু খাবার দিয়েছে, জাবাল বলেন, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারও তাদের খাবার দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, নৌকাটি যখন বাংলাদেশ ছেড়ে যায় তখন ২১৬ জন যাত্রী ছিল এবং তাদের মধ্যে ৫০ জন ইন্দোনেশিয়ার রিয়াউ প্রদেশে নেমেছিল বলে জানা গেছে। আচেহ পুলিশ লোক পাচারের অভিযোগে তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রায় ১ মিলিয়ন মুসলিম প্রধান রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হিসেবে বাংলাদেশে বসবাস করে। তাদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার যারা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এদের অনেক গণধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়। মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার। বেশিরভাগই নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত।
ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার মতো, জাতিসংঘের ১৯৫১ শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় এবং রোহিঙ্গাদে গ্রহণ করতে বাধ্য নয়। তবে, দেশটি সাধারণত দুর্দশাগ্রস্ত শরণার্থীদের অস্থায়ী আশ্রয় দেয়। গত মার্চ মাসে, ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় জেলেরা আচেহ উপকূলে একটি নৌকার উল্টে যাওয়া হুলের উপর থেকে ৭৫ জনকে উদ্ধার করে। ইউএনএইচসিআর জানায়, নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ২৮ শিশুসহ আরও ৬৭ জন যাত্রী নিহত হয়েছে। এপি জানিয়েছে যে নৌকাডুবির আগে ক্যাপ্টেন এবং ক্রু নারী ও মেয়েদের নির্যাতন করেছিল।
আপনার মতামত লিখুন :