শিরোনাম
◈ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ১০ ব্যাংকের শীর্ষ পদে নিয়োগ চূড়ান্ত, এমডি হতে পারেন যারা ◈ শেখ রুবেলের দাবি, ভারতের মাটিতে প্রবাসী সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ (ভিডিও) ◈ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন উপদেষ্টা আসিফ ◈ ৪৫ মিনিটে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াটাই শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র : মেজর হাফিজ ◈ অন্ধকারে ব্যাটাররা, তাইজুলের ৫ উইকেটে লড়াইয়ে বাংলাদেশ ◈ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় থাকবে শিক্ষার্থীরা, পাবেন সম্মানী ◈ নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহীনুর মিয়া গ্রেপ্তার ◈ বিএনপির দুই গ্রুপ একইস্থানে সমাবেশ ডাকায় পাবনায় ১৪৪ ধারা জারি ◈ বেনাপোল বন্দরে ৫ শতাংশ শুল্কায়নে আমদানিকৃত ডিম খালাস ◈ যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩ দেশের রাষ্ট্রদূতের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:৫৭ দুপুর
আপডেট : ২১ অক্টোবর, ২০২৪, ০৬:২১ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গত সাত দশক ধরে চলা হত্যা, ধর্ষণ এবং সহিংসতার জবাব ৭ অক্টোবরের অভিযান

বছরের পর বছর ধরে ইসরাইলের শাসক গোষ্ঠী ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের পক্ষে ফিলিস্তিনের ৬০ ভাগেরও বেশি ভূমি এবং সমস্ত পানি সম্পদ দখল করে রেখেছে এবং ২০০৫ সাল পর্যন্ত গাজাকে একটি দখলদার সামরিক বাহিনীর অধীনে রেখেছে।

গত সাত দশক ধরে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা চালিয়ে আসছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। এই অপরাধযজ্ঞ ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রয়েছে এবং প্রতিবারই পশ্চিমাদের দ্বারা সমর্থিত হয়ে আসছে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য ইসরাইলকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। পার্সটুডে এবং এমই এর উদ্ধৃতি অনুসারে, এই দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অপরাধমূলক যুদ্ধকে বারবার সমর্থন করেছে এই বলে যে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে"। এদিকে,  এই আত্মরক্ষা আসলে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের দিকে পরিচালিত করেছে।

এর মধ্যে ২০২২ সালের আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার কথা বলা যায়। গাজায় তিন দিনের বিমান হামলায় ১৭ শিশুসহ ৪৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছিল ইসরাইল। এই নৃশংসতার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া ছিল আগের  মতোই। অর্থ্যাৎ ইসরাইলের "আত্মরক্ষার অধিকার" সমর্থন করার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের হত্যার সংক্ষিপ্ত নিন্দা জানিয়ে কার্যকরভাবে ইসরাইলের  অপরাধ উপেক্ষা করে থাকে। এটি ছিল বর্তমান যুদ্ধের আগে গাজায় ইসরাইলের শেষ বড় গণহত্যা, তবে এটি অবশ্যই প্রথম ছিল না।

এই সহিংসতাগুলো আরও ভালভাবে বুঝতে হলে আমাদেরকে ১৯৫১ সালের দিকে  ফিরে যেতে হবে যখন ইসরাইল গাজায় প্রথম হামলা চালায়। ১৯৪৭ সালের শেষ থেকে ১৯৫০ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত ইসরাইল গাজাসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করেছিল। ১৯৫১ সালের অক্টোবরে ইসরাইল গাজা আক্রমণ করে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি ও মিশরীয়কে হত্যা করে,বহু বাড়িঘর ধ্বংস করে এবং ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়ি ঘরে ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে তারা পানির কূপগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। সেই সময়ে ইসরাইলের "আত্মরক্ষার অধিকার" সমর্থন করার পরিবর্তে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই হত্যাকাণ্ডকে "ইচ্ছাকৃত গণহত্যার ভয়ঙ্কর ঘটনা" বলে অভিহিত করেছিলেন।

এসব অপরাধ শুধু গাজাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ১৯৪৫ সালের আগস্টে, ইসরায়েলি সৈন্যরা দুজন ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে গ্রেপ্তার করে; তারা লোকটিকে হত্যা করে এবং তারপর ২২ সৈন্য পালাক্রমে ফিলিস্তিনি মহিলাকে ধর্ষণ করে এবং অবশেষে তাকেও হত্যা করে।

১৯৫০ সালের মার্চ মাসে, ইসরাইলি সৈন্যরা গাজা থেকে দুটি ফিলিস্তিনি মেয়ে এবং একটি ছেলেকে অপহরণ করে; তারা ছেলেটিকে শহীদ করে এবং মেয়েদের ধর্ষণ করে তারপর হত্যা করে। সহিংসতা বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে এবং ফিলিস্তিনি নারীদের ধর্ষণের অসংখ্য ঘটনা ঘটে যারা তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।

এসব অপরাধযজ্ঞের ধারাবাহিকতায় ১৯৫৩ সালে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ১০১ তম ইউনিটের বাহিনী বুরিজ ক্যাম্পে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের তাঁবুতে বোমা হামলা চালিয়ে নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। একই বছর ইসরাইলি সেনারা পশ্চিম তীরের কুবিয়া গ্রামে ৭০ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে শহীদ করে। এমনকি ন্যাশনাল জিউস পোস্টের মতো ইসরায়েলপন্থী মিডিয়া পর্যন্ত এই গণহত্যাকে নাৎসি নৃশংসতার সাথে তুলনা করেছে।

এছাড়া,  ১৯৫৫ সালে ইসরাইল গাজায় একটি মিশরীয় সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করে ৩৬ মিশরীয় সৈন্য এবং দুই ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে। বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালায়।

১৯৫৬ সালের নভেম্বরে ইসরাইল খান ইউনিস শহরে বোমাবর্ষণ করে শত শত লোককে হত্যা করে এবং তারপর ইসরাইলি স্থল বাহিনী শহরে প্রবেশ করে এবং প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হত্যা করে। এছাড়াও শরণার্থী শিবিরে তারা ১৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং ছেলেদের জড়ো করেছিল এবং মেশিনগান দিয়ে তাদের হত্যা করেছিল।এই গণহত্যায় ৩০০ থেকে ৫০০ লোক শহীদ হয়েছিল যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক এবং ১৯৪৮ সালের শরণার্থী।

কয়েক দশক ধরে এভাবেই ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ চলতে থাকে। ১৯৬৭ সালে ইসরাইল আবার গাজা দখল করে এবং ৭৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করে। পরের বছরগুলোতে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের পক্ষে ইসরাইল ফিলিস্তিনের ৬০ ভাগের বেশি জমি এবং সমস্ত পানি সম্পদ দখল করে এবং ২০০৫ সাল পর্যন্ত গাজাকে একটি বর্ণবাদী সামরিক বাহিনীর দখলে রাখে। এর পরে গাজা উপত্যকা একটি বড় জেলখানা হয়ে ওঠে এবং তারপর থেকে ইসরাইল এই অঞ্চলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিমান হামলা চালিয়ে আসছে এবং হাজার হাজার বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল আবারও গাজায় গণহত্যা শুরু করে। এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধে ইসরাইল যে একমাত্র "জয়" অর্জন করেছে তা হল হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ হত্যা এবং দুই মিলিয়নেরও বেশি লোককে বাস্তুচ্যুত করা। যদিও ফিলিস্তিনিরা অস্ত্রের অভাব সত্ত্বেও প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী কেবল ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করতে সফল হয়েছে।

এরই মধ্যে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রশ্নাতীত সমর্থন অব্যাহত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা "জেক সুলিভান" এমনকি আরও এগিয়ে গিয়ে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের "শত্রু" বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে,পশ্চিমাদের দ্বারা প্রভাবিত বিশ্ব সম্প্রদায়ের একটি অংশ ইসরাইলকে সমর্থন এবং "আত্মরক্ষার অধিকার" দাবি করে চলেছে যখন ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়