শিরোনাম
◈ চিফ হিট অফিসার আতিককন্যা বুশরা কত টাকা বেতন পেতেন? ◈ জানলে চমকে যাবেন, সরকারের মেট্রোরেল মেরামতে সাশ্রয় হয়েছে কত টাকা?  ◈ নির্বাচনের সময় নিয়ে সরাসরি কথা বললেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ◈ সংস্কার নিয়ে সংলাপের চিন্তা: অগ্রাধিকার পাচ্ছে নির্বাচনি আইন ◈ (১৮ অক্টোবর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার  ◈ ফরিদপুরে বাস খাদে পড়ে আহত ৩০, অলৌকিকভাবে উদ্ধার নবজাতক ◈ বাংলাদেশের ওয়ার্ক পারমিট বৈধতা স্থগিত করল ইতালি (ভিডিও) ◈ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হবে ◈ হাসিনা সরকার বাইডেন প্রশাসনকে জানিয়েছিল পিটার হাস্‌কে নিয়ে অস্বস্তির কথা ◈ পুলিশের আরও চার কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের অনুমতি

প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ০২:০৩ রাত
আপডেট : ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লেবানন থেকে কেন শান্তিরক্ষীদের তাড়াতে চান নেতানিয়াহু?

গত প্রায় এক মাস ধরে লেবাননজুড়ে বিশেষ করে দক্ষিণ লেবাননে ব্যাপক হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। এ হামলার মধ্যে সম্প্রতি লেবানন থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনকে সরানোর জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাটির কর্মকর্তাদের ওপর চাপ দিচ্ছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।

লেবাননে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৫০টি দেশের ১০ হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন রয়েছেন। এই বাহিনী গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলের সঙ্গে লেবাননের যে সীমান্ত তার নিরাপত্তায় কাজ করছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এই শান্তিরক্ষীদের তাড়াতে নেতানিয়াহু কেন উঠেপড়ে লেগেছেন?

 বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর পেছনে নেতানিয়াহুর একটি হীন উদ্দেশ্য রয়েছে। সেটা হলো, লেবাননে ইসরাইলের সামরিক কর্মকাণ্ডের কোনো রেকর্ড যেন না থাকে। সীমান্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি শান্তিরক্ষীরা ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক’ হিসেবেও কাজ করছেন। নেতানিয়াহু তাদের অপসারণ চাইছেন; যাতে কেউ লেবাননে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের রেকর্ড না রাখতে পারে।
 
লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন বা ইউনাইটেড ন্যাশন্স ইনটারিম ফোর্স ইন লেবানন; সংক্ষেপে ইউনিফিল। মিশনের প্রায় ১০ হাজার সদস্য লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত এবং লিটানি নদীর মধ্যে ১ হাজার বর্গ কিলোমিটারের (৩৮৬ বর্গ মাইল) বেশি বিস্তৃত অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছেন।
 
 বছরের পর বছর ধরে দখলদারিত্ব ও নির্যাতন-নিপীড়নের জবাবে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপরই গাজায় সামরিক আগ্রাসনের নির্দেশ দেন নেতানিয়াহু। শুরু হয় এক অসম যুদ্ধ।
 
এদিকে সীমান্তে হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা চলতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মাসের শেষদিকে লেবাননজুড়ে বড় হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। এরপর পহেলা অক্টোবর থেকে দক্ষিণ লেবাননে শুরু হয় স্থল অভিযান।
 
ইসরাইলের দাবি, তারা হিজবুল্লাহর অবস্থান ও স্থাপনা লক্ষ্য করে এই অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় নাগরিক, লেবানন সরকার ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, ইসরাইল নির্বিচারে ঘরবাড়ি, কলকারখানা ও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালাচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনও রেহাই পাচ্ছে না।
 
চলতি সপ্তাহে ইউনিফিলের বেশ কয়েকটি অবস্থানে ট্যাঙ্ক থেকে গোলাবর্ষণ করেছে ইসরাইলি বাহিনী। মিশনের অন্তত একটি ঘাঁটির সীমানা ও প্রধান ফটক গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তিন দফায় চালানো এসব হামলায় অনেক শান্তিরক্ষী সদস্য আহত হয়েছেন।
 
 শান্তিরক্ষা মিশনের ওপর হামলার পর কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যসহ শতাধিক দেশ নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখেও থামছেন না নেতানিয়াহু। তিনি এখন শান্তিরক্ষীদের তাড়াতে চাইছেন।
 
গত রোববার (১৩ অক্টোবর) ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি ভিডিও বার্তা জারি করা হয়। তাতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেসকে উদ্দেশ করে নেতানিয়াহু বলেন, ‘মহাসচিব মহোদয়, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীকে (ইউনিফিল) যুদ্ধ অঞ্চল থেকে এখনই সরিয়ে দিন।’ দাবি করেন, রক্ষীদের উপস্থিতি হিজবুল্লাহর জন্য ‘মানব ঢাল’ হিসেবে কাজ করছে।
 
তবে জাতিসংঘ তার সিদ্ধান্তে অটল। সংস্থাটি ইসরাইলকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্যরা লেবানন ছেড়ে কোথাও যাবে না। সংস্থাটির মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘জাতিসংঘের পতাকা উড়তেই থাকবে।’
 
শান্তিরক্ষা মিশন সরিয়ে নিতে বলার উদ্দেশ্য কী?
একটি কূটনৈতিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘ইউনিফিল আন্তর্জাতিক আইনশৃঙ্খলার অংশ। এর অপসারণ মানে ইসরাইলের সহজ জয়।’
 
এই বাহিনীর প্রতিষ্ঠা ১৯৭৮ সালে; ইসরাইল যখন প্রথমবার দক্ষিণ লেবানন দখল করে। এই অঞ্চল থেকে ইসরাইলি বাহিনীর প্রত্যাহার নিশ্চিত করা, শান্তি বজায় রাখা ও লেবানন সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়তাই ছিল এই মিশনের প্রধান লক্ষ্য।
 
২০০৬ সালে ইসরাইল ফের লেবাননে আক্রমণ করলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রেজ্যুলেশন ১৭০১ নামে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। যার উদ্দেশ্য ইউনিফিলের ক্ষমতা বাড়ানো; যাতে তারা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং এটা নিশ্চিত করতে পারে যে ওই এলাকায় লেবাননের সেনাবাহিনী ছাড়া অন্য কোনো সশস্ত্র বাহিনী উপস্থিত থাকবে না। মানে দক্ষিণ লেবাবনে হিজবুল্লাহ বা ইসরাইলি বাহিনী কোনো বাহিনীরই উপস্থিতি থাকবে না।
 
ইউনিফিলের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল লেবানিজ ও ইসরাইলিদের মধ্যকার মতানৈক্য নিরসনে একটি প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি এবং লিটানি নদীর দক্ষিণে লেবাননের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু সেটা কখনই সম্ভব হয়নি। উল্টো হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলি বাহিনী উভয়ই নিয়মিতভাবে জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন লঙ্ঘন করেছে।
 
 যাইহোক, দক্ষিণ লেবাননে চলমান স্থল অভিযানের মধ্যে ইসরাইল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যে হামলাগুলো চালিয়েছে, সেটাকে ইচ্ছাকৃত বলে অভিহিত করেছে ইউনিফিল। আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন করায় ইসরাইল অনেক নিন্দা কুড়িয়েছে।
 
নেতানিয়াহুর দাবি অনুযায়ী শান্তিরক্ষা মিশন সরানো হলে ওই অঞ্চলে ইসরাইলের মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন তদারকি আরও কঠিন হয়ে পড়বে। যেমনটা বলছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব গালওয়ের আইরিশ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের সিনিয়র লেকচারার শেন ডার্সি।
 
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ইউনিফিলের অপসারণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন নিরীক্ষণ অসম্ভব হয়ে পড়বে। তার কথায়, ‘সাংবাদিক হোক বা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী, আইন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের বিতাড়নকে ইসরাইলি বাহিনীর কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি সীমিত করার ইচ্ছাকৃত কৌশল বলে মনে হয়।’
 
 ফিলিস্তিনি মিডিয়া অফিসের তথ্যমতে, গাজায় ইসরাইল অন্তত ১৭৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সাংবাদিক ও জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের নানাভাবে বাধা দেয়া হয়েছে। লেবাননেও সাংবাদিকদের ওপর ইসরাইলি হামলার ঘটনা ঘটেছে। তথ্যসূত্র: আল জাজিরা ও সময়নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়