ডেইলি মেইল: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে মানবাধিকারের অবনতি হওয়ায় মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কাছে অস্ত্রের সরবরাহ সীমিত করতে এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দেশটির জেনারেলদের বিচার করার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে আরও কিছু করার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির নাগরিকরা। মিয়ানমারের বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টার টম অ্যান্ড্রুজের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়ার পরিবারগুলো বৃহত্তর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটিশ মিডিয়া ডেইলি মেইলের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে পতন ঘটায় এবং বছরের পর বছর ধরে পদ্ধতিগত দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সূচনা করে।
জান্তা ৫৬০০ টিরও বেশি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে, ২০,০০০ রাজনৈতিক বন্দিকে কারাগারে ঠেলে দিয়েছে এবং ৩.১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টার টম অ্যান্ড্রুজের একজন বোন আছে এবং অস্ট্রেলিয়ার বেশ কিছু পরিবার মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যে চীনা দূতাবাসের সামনে এক বিক্ষোভে অংশ নেয়। গত শুক্রবার ক্যানবেরায় চীনের দূতাবাসের বাইরে এক বিক্ষোভে মিঃ অ্যান্ড্রুজ বলেন, ‘মিয়ানমারে শান্তি নেই, আমরা চাই তারা অস্ট্রেলিয়ার মতো শান্তিতে ঘুমোক।’
প্যাট্রিক চো, যার ভাই এবং বোন ইয়াঙ্গুনে থাকেন, তিনি বলেন, প্রতিদিন তার পরিবার নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়। আমি বিশ্বাস করি অস্ট্রেলিয়া সবসময় মিয়ানমারের ব্যাপারে একটি মুখ্য ভূমিকা পালনের কথা বলে কিš‘ ... আমি মোটেও সন্তষ্ট নই। মিঃ অ্যান্ড্রুস ক্যানবেরার কাছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক শক্তি ব্যবহার করার জন্য একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘খারাপ থেকে খারাপ আরো ‘ভয়ঙ্কর’ হয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারে আরও বড় বিপর্যয় এড়াতে একটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গৃহীত পদক্ষেপে সংশোধন অপরিহার্য। তিনি চান অস্ট্রেলিয়া যুদ্ধাপরাধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সর্বজনীন এখতিয়ার ব্যবহার করে মিয়ানমারের প্রধান সামরিক ব্যক্তিত্বদের বিচার শুরু করুক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এই ধরনের অপরাধ উত্থাপন করুক।
তবে মিঃ অ্যান্ড্রুজ স্বীকার করেছেন যে মিয়ানমারে ঘটমান পরিসংখ্যানগুলি দেশটির সামরিক নেতাদের অস্ট্রেলিয়ায় জেলের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে এটি জবাবদিহিতার পথে তাদের আনতে সাহায্য করবে এবং মিয়ানমারের জনগণের দুর্দশার উপর আলোকপাত করবে। তিনি অস্ট্রেলিয়াকে তার নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা প্রসারিত করার আহ্বান জানান। শিক্ষাবিদ এবং মিয়ানমারের প্রাক্তন রাজনৈতিক বন্দী শন টার্নেল এএপিকে বলেছেন যে জান্তা শাসনের প্রধান ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে। তিনি বলেন, সামরিক জেনারেলদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞাগুলি ‘জামানতের ক্ষতি এড়ায় এবং মিয়ানমারে প্রকৃত ব্যবসাকে বাধা দেয় না। বরং এটি তাদের ব্যক্তিগতভাবে দুর্বল করে তোলে। অতীতে, সেই ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞাগুলিই কাজ করেছে।’
মিঃ অ্যান্ড্রুজ অস্ট্রেলিয়াকে ‘জান্তা’ নির্বাচন আয়োজনের নিন্দা করে বলেন, অস্ট্রেলিয়া উদ্বিগ্ন যে মিয়ানমারে বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হবে না এবং ‘কেবল সহিংসতা ও সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করবে। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে মিয়ানমারের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণহানি এবং মানবাধিকারের প্রতি অসম্মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি মিঃ অ্যান্ড্রুজের সাথে দেখা করার সময় মিয়ানমারে মানবিক সংকটের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে বড় সাহায্য দাতা, ২০১৭ সাল থেকে দেশটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তহবিল সহ মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে ৮৬০ মিলিয়নেরও বেশি দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :