পার্সটুডে – ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের আল-আকসা অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ছিল ইসরাইলের অপরাজেয় হওয়ার দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়া এবং সেইসাথে পৃথিবীর সর্বশেষ ঔপনিবেশিক শক্তির দাবিদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিলুপ্ত না হওয়ার দাবির অসারতাও প্রমাণিত হয়।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ছিল এমন একটি দিন যা বিশ্বের ঔপনিবেশিক বিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট। এই দিনটি শুধু সামরিক অভিযানের কারণে যে গুরুত্বপূর্ণ তা নয় বরং এটি একটি জাতির ঔপনিবেশিক বিরোধী প্রতিরোধের প্রতীক। হামাসের এই "আল-আকসা তুফান" অভিযান ইসরাইলের বুকে কাপন ধরিয়ে দিয়েছে। এই অভিযানের আলাদা বৈশিষ্ট্য বা সাফল্যের দিক হচ্ছে, এটি ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর ভিতকে নাড়া দিয়েছে।
ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে বাঁচতে একটি জাতিকে মূল্য দিতে হচ্ছে
কোনো ঔপনিবেশিক বিরোধী আন্দোলন বিনা মূল্যে হয় না। গত এক বছরে ফিলিস্তিনিরা গণহত্যা ও ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন হয়েছে। ৪২ হাজারেরও বেশি মানুষ শহীদ এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছে। দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং অবকাঠামোর ধ্বংস ছিল এই প্রতিরোধের অন্যতম পরিণতি। তাই, আমাদের এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, এই আত্মত্যাগগুলো সেই মূল্য পরিশোধের অংশ যা একটি জাতি স্বাধীনতা অর্জন এবং ঔপনিবেশিকতার অবসানের জন্য প্রদান করে থাকে। যেমন, প্রতিরোধের নেতারা বারবার বলেছেন, এই যুদ্ধ ছিল ‘অস্তিত্বের’ লড়াই; ৭০ বছর ধরে ইউরোপীয় ও পশ্চিমা অভিবাসীদের দখল ও নিপীড়নের অধীনে থাকা একটি জাতির পরিচয় টিকিয়ে রাখা ও অস্তিত্ব রক্ষা করার লড়াই।
অপূরণীয় ব্যর্থতা
ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের এই অভিযান ছিল কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সাফল্যমণ্ডিত। গত বছর এ দিনে হামাস শুধু যে সামরিকভাবে বড় আঘাত হেনেছিল তাই নয় এটা ইসরাইলের জন্যও ছিল অনেক বড় গোয়েন্দা ব্যর্থতা যা কিনা ইসরাইলের ভিতকে একেবারে নড়বড়ে করে দিয়েছে। হামাসের ওই অভিযান শুধু সামরিক বিজয় তাই নয় একই সাথে এ ঘটনা ইসরাইলের অভ্যন্তরে বড় ধরণের ফাটল ও তীব্র মতবিরোধ সৃষ্টি করেছে। আমেরিকার সামরিক সহযোগিতা ও গোয়েন্দা সংস্থার উপর ভরসা করে যে ইসরাইল দশকের পর দশক ধরে পশ্চিম এশিয়ায় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে আসছে ধূমকেতুর ন্যায় হামাসের আল-আকসা তুফানের আঘাতে সেই ইসরাইল আজ বিপর্যয়ের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন শুধু হামাস নয় ইয়েমেন, লেবানন, ইরাক ও ইরান থেকেও তারা হামলার শিকার হচ্ছে।
তাই, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খামেনেয়ী, যথার্থই ইঙ্গিত করেছেন যে ৭ অক্টোবরের পর ইসরাইল এখন আর আগের সেই অবস্থায় নেই এবং গত এক বছরের যুদ্ধে তারা অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে।
বিশ্ব জাগরণ
হামাসের এই অভিযান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, ফিলিস্তিন ইস্যুটিকে আবার বিশ্বব্যাপী মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এর আগে কিছু বৃহৎ শক্তি এবং মধ্যপ্রচ্যের কয়েকটি দেশ দখলদার ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এবং ফিলিস্তিন ইস্যুকে ভোলানোর চেষ্টা করলেও আল-আকসা তুফান অভিযান আবারও ফিলিস্তিন সমস্যাকে বিশ্ববাসীর সামনে এনে হাজির করেছে। এমনকি আলজেরিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিষয়টি তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে উত্থাপন করেছে এবং ইউরোপ থেকে আমেরিকা পর্যন্ত বিশ্বের জনমত ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :