এধরনের কঠিন দায়িত্ব নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া দি প্রিন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘আপনার যদি ধৈর্য না থাকে তবে আপনি গণতন্ত্রের যোগ্য নন’। এভাবে শুরু করে প্রতিবেদক তার প্রতিবেদন শেষ করেছেন, এভাবে যে, ‘আপনি যদি এর দ্বৈরথ এবং বিশৃঙ্খলার জন্য ধৈর্য না রাখেন তবে আপনি গণতন্ত্রের যোগ্য নন।
আমাদের ‘হাইপোথিসিসটি’ একই সময়ে পরের দরজায় পরীক্ষা করা হচ্ছে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে।
প্রতিবেদনে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করা হলেও বাংলাদেশে যে গত পনের বছরের বেশি সময় ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেয়ে ভোট দিতে পারেনি, ভোট গ্রহণের অতি নিম্ন হারের কারণ কি বা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বিরাজমান ছিল তার ধারে কাছে যাননি প্রতিবেদক। প্রতিবেদক লিখেছেন, শ্রীলঙ্কার উত্তরণ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়েছিল। বৈসাদৃশ্যের জন্য বাংলাদেশ পরীক্ষা করুন। তারা তাদের দায়িত্বশীলদের নির্বাসনে বাধ্য করেছিল, অরাজনৈতিক লোকদের বেশিরভাগ অনির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। এরপর প্রতিবেদক তার ভাষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিহিত রয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন, জাতি এবং সমাজে কখনও কখনও উত্থান ঘটবে। অনেকে এর ফলে আত্ম-ধ্বংস করবে বা পরিবর্তন এবং অস্থিরতার পুনরাবৃত্তি চক্রে যাবে। যারা বেঁচে থাকে-এবং সম্ভবত শক্তিশালীও আবির্ভূত হয়-তাদের প্রয়োজন হবে একটি অত্যন্ত কম-প্রশংসিত বৈশিষ্ট্য: গণতান্ত্রিক ধৈর্য। এটা কি, এবং কিভাবে এটা কাজ করে?
উদাহরণ টেনে বলা হয়েছে, প্রথমে শ্রীলঙ্কা। ২০২২ সালের জুলাইয়ে, বিক্ষোভকারীদের রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ ভাংচুর, স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহ, এর পুলে সাঁতার কাটা এবং রিল তৈরির ছবি দেখে বিশ্ব অবাক হয়ে তাকিয়েছিল। সরকার একপাশে ভেসে গেল। যাইহোক, ফলাফল যা হয়নি তা হল একটি শূন্যতা যেখানে এলোমেলো প্রতিবাদকারী, ছাত্র নেতা, এনজিও বা ব্যস্ত ব্যক্তি দ্বৈত-পাসপোর্টধারীরা প্রবেশ করতে পারে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ দেখুন। তারা তাদের দায়িত্বশীলদের নির্বাসনে বাধ্য করেছে। এনজিও, ছাত্র, টেকনোক্রেট এবং ইসলামপন্থীদের একটি অনির্বাচিত এবং অনির্বাচিত সরকার চলে এসেছে। তারা এখন নতুন সংবিধান লেখার জন্য বিদেশ থেকে স্থানীয় শিক্ষাবিদদের ডাকছে। তারা সমস্ত কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতা দিয়েছে, যার ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনীকে শাসনে আনা হয়েছে।
এ পর্যায়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান পরিস্থিতিকে এক সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সাদৃশ্য টানা হয়েছে পাকিস্তানের। বলা হয়েছে, উভয় প্রতিবেশী একই ধরনের উত্থান ছিল। একজন কিভাবে এত সহজে ট্রানজিশন পরিচালনা করলেন যখন অন্যজন চেষ্টাও করেনি? এরপর টানা হয়েছে নেপালের উদাহরণ। দেশটিতে একটি গণআন্দোলন এবং একটি সশস্ত্র মাওবাদী বিদ্রোহ রাজতন্ত্রের অবসান ঘটায়। গণতন্ত্রের ১৬ বছরে, দেশটি ১৬টি স্বল্প মেয়াদে আটজন প্রধানমন্ত্রীকে ভাগ করে দেখেছে। কিন্তু তারা তাদের গণতন্ত্রকে আরও ভালো করার জন্য অবিচলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা গণতান্ত্রিক ধৈর্য নিয়ে ধন্য। অবশ্য এসব দেশের সঙ্গে প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারতের সম্পর্কের উত্থান-পতনের কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন মনে করেননি প্রতিবেদক।
প্রতিবেদকের যুক্তি হচ্ছে, গণতন্ত্র এলোমেলো। জেনারেল, স্বৈরশাসক, আয়াতুল্লাহ এবং নোবেল বিজয়ীদের চেহারা এবং শব্দ এত আলাদা, গুণী এবং মসৃণ। যে দেশগুলি তাদের অরাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রলোভনে পড়ে তারা সেই দেশগুলি যারা এখনও গণতন্ত্রে অনিবার্য গণ্ডগোল, তাপ এবং ধূলিকণা সহ্য করার জন্য পরিপক্ক হয় নি। আপনার যদি সেই ধৈর্য না থাকে তবে আপনি শর্টকাটগুলি সন্ধান করুন। বাংলাদেশ দেখুন। প্রতিবেদকের ধারণা, শ্রীলঙ্কার রূপান্তরটি মসৃণ ছিল, পরিচিত রাজনৈতিক মুখগুলিকে আনা হয়েছিল, তাদের মধ্যে বর্তমান ক্ষমতাসীন এবং প্রার্থী রনিল বিক্রমাসিংহে, (৭৫) তাদের লং মার্চারের শেষ।
শ্রীলঙ্কানরা কিছু প্রতিবেশী বা গ্লোবাল ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে আমদানির জন্য গণতন্ত্রের বাণিজ্য করেনি যে তারা দরিদ্র, অপ্রত্যাশিত তৃতীয় বিশ্বের গণতন্ত্রীকরণ করতে পারে এমন শ্বাসরুদ্ধকর বিশ্বাসে ভরপুর। তাই বিক্রমাসিংহে জিতুক বা হারুক, এটা আমাদের যুক্তিকে শক্তিশালী করবে। গণতন্ত্রের সবক দিতে যেয়ে মার্কিন মুল্লুক থেকে মিশরের তাহরির স্কয়ার কিংবা তাহরির স্কয়ারের সঙ্গে ভারতীয় রাজনৈতিক বৈসাদৃশ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে দি প্রিন্টের প্রতিবেদনে। বিস্তর বিশ্লেষণে না যেয়ে প্রতিবেদনের চুম্বক অংশ অনেকটা এরকম। তা হচ্ছে, ভারত বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিক্রমায় শক্তিশালী হয়ে উঠেছে কারণ এর দরিদ্রতম জনগণের গণতান্ত্রিক ধৈর্য ছিল। যেমনটা নেপাল ও শ্রীলঙ্কার। ক্যাপিটল হিল আক্রমণের সাথে ২০২০ এর ফলাফলকে উল্টে দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের মরিয়া হয়ে ওঠাকে আমেরিকার প্রত্যাখ্যান যোগ করুন। বাংলাদেশিরা উল্টোটা দেখিয়েছে। সেখানে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়কেরা রাজনীতিবিদদের ছাড়াই একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে চান এবং তারপরে নির্বাচন করতে চান, ঠিক যে কোনও বাগান-বিচিত্র পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের মতো। মতভেদ হল যে তারা খুব ভাল জায়গায় শেষ হবে না।
বাংলাদেশের হালফিল রাজনীতি নিয়ে প্রিন্টের ভবিষ্যৎবাণী এমননি। যেটি নাই তা হচ্ছে বাংলাদেশে পতিত স্বৈরশাসক হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে প্রতিবেশি এ দেশটি বাংলাদেশে কোন ধরনের গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা দেখতে চাচ্ছে সেটি।
আপনার মতামত লিখুন :