শিরোনাম
◈ আপা আপা বলা তানভীর: আ. লীগ দ্বারা নির্যাতিত দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পেয়েছেন! ◈ ৭ হাজার ১৪ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এলো মাত্র সাত দিনে ◈ প্রবাসীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণেও এবার মিলবে প্রণোদনা ◈ ফের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিট চালু ◈ যেদিন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু ◈ সংস্কার, সংলাপ ও নির্বাচন নিয়ে যে প্রক্রিয়ায় এগুবে অন্তর্বর্তী সরকার, জানালেন রিজওয়ানা ◈ ফেসবুকে চিত্রনায়ক নাঈমের স্ট্যাটাস ঢাকায় জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন নিয়ে , যা লিখলেন ◈ সংস্কার প্রয়োজন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের: অ্যাটর্নি জেনারেল ◈ ফাতিমা কেন উপদেষ্টা নাহিদের বোন পরিচয় দিয়েছিলেন, জানালেন নিজেই  ◈ বিশ্ববাজারে তিন বছরে সর্বনিম্ন তেলের দাম

প্রকাশিত : ২২ আগস্ট, ২০২৪, ০৬:০৫ বিকাল
আপডেট : ২৪ আগস্ট, ২০২৪, ০৬:২৩ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘গ্যাং অব ফোর’ ডুবিয়েছে শেখ হাসিনাকে

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রতিবেদনঃ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য আত্মগোপনে থাকা ওই নেতাদের একজন দলের অভ্যন্তরীণ একটি স্বার্থগোষ্ঠীকে দায়ী করে বলেছেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের কথা শোনেননি।’ এই গোষ্ঠীকে ‘গ্যাং অব ফোর’ বলে আখ্যায়িত করেন নেতাদের একজন। তিনি বলেন, গোষ্ঠীটি শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা বুঝতে দেয়নি।

এই চার নেতা হলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ‘চারজনের এই দল তাঁর (হাসিনা) পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ব্যক্তিদের ওপর তাঁর ছিল অন্ধবিশ্বাস। তাঁর যে সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল, তা তিনি তাঁদের কারণে হারিয়েছেন।’

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গত এক সপ্তাহে এই ব্যক্তিদের কারও কারও সঙ্গে অপ্রকাশিত অবস্থানে দেখা করতে এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিশোধের শিকার হওয়ার শঙ্কায় আত্মগোপনে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়েছে। তাঁদের অভিন্ন কথা, ‘হাসিনা দল ও জনগণকে পরিত্যাগ করেছেন।’

বিএনপিকে নির্বাচনে না আনা ‘বড় ভুল’

এ বছরের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপিকে না আনা শেখ হাসিনার একটি ‘বড় ভুল’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।

সূত্রগুলো বলেছে, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে লন্ডনে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।

একটি সূত্রের ভাষ্যমতে, ‘আড়ালে থাকা একটি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রস্তাবও দেওয়া হয় (বিএনপিকে নির্বাচনে আনার)। আমাদের ধারণা, তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় চ্যানেলটি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের এক বছর আগেই ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়...কিন্তু হাসিনা ওই প্রস্তাবে সবুজসংকেত দেননি।’

আওয়ামী লীগের একজন নেতার বক্তব্য, বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি হাসিনার প্রত্যাখ্যান করা ছিল ‘সাংঘাতিক ভুল’। কেননা, একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন বিএনপি নির্বাচনে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা গেলে বিরোধীদের রাগ–ক্ষোভ হয়তো মিটে যেত।

ওই নেতা আরও বলেন, ‘দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, পুলিশের নিষ্ঠুরতায় জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা বুঝছিলাম। বিএনপিকে নির্বাচনী তরিতে ওঠানো গেলে সেই ক্ষোভ হয়তো থামানোও যেত। তাতে আমরাই আবার জিততে পারতাম এবং দল ক্ষমতায় থাকত।’

নেতা–কর্মীরা মনে করেন, বিশেষ করে গত জানুয়ারির নির্বাচনে জেতার পর শেখ হাসিনা আরও একগুঁয়ে হয়ে ওঠেন ও কোনো পরামর্শ গায়ে মাখেননি। এ প্রসঙ্গে ওই নেতা বলেন, ‘টানা চতুর্থবার জিতে তিনি (হাসিনা) অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন এবং কোটা সংস্কার নিয়ে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে সৃষ্ট ক্ষোভের মাত্রা বুঝতে ব্যর্থ হন।’

সূত্রগুলো বলেছে, কৌশলে কিছু নেতা হাসিনাকে জুলাইয়ের শুরুতে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। (হাসিনা সরকারের) কফিনে শেষ পেরেকটি বসে তখন, যখন একই মাসে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা ছাত্রনেতাদের তুলে নিয়ে যান এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ও আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারে জোরপূর্বক প্রতিশ্রুতি আদায় করে ছেড়ে দেন।

এ কৌশল হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়। কর্মসূচি প্রত্যাহারে কীভাবে জোরপূর্বক প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়েছে, ছাত্র নেতারা সেই বিষয় জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেন। এটি পরপর কিছু ঘটনার সূত্রপাত ঘটায় এবং হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

শেখ হাসিনার পতনের পর জীবনাশঙ্কায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা–কর্মী ও বুদ্ধিজীবী দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেন।

আশ্রয় নেওয়া এই ৬২৬ জনের মধ্যে ছিলেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা, ৫ বিচারক, বেসামরিক প্রশাসনের ১৯ কর্মকর্তা, ২৮ পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন পদের ৪৮৭ জন পুলিশ সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ নানা পেশার ১২ জন ও ৫১টি পরিবার।

ঘটনাচক্রে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টাকালে আটক হয়েছেন শেখ হাসিনার বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিদেশ যাওয়ার সময় আটক হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ।

‘আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে পারব না’; ‘আমি আত্মগোপনে আছি, ফোনে কথা বলতে পারি’; ‘নিরাপদ কোনো স্থানে আমি আপনার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করব’; ‘আপনার গতিবিধি নজরদারি করা হবে, তাই আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে পারব কি না, জানি না’।

এগুলো ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ তাঁর দল আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা–কর্মী ও সাবেক সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সদস্যদের পাঠানো কিছু বার্তা; যা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পেয়েছে।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গত এক সপ্তাহে এই ব্যক্তিদের কারও কারও সঙ্গে অপ্রকাশিত অবস্থানে দেখা করতে এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিশোধের শিকার হওয়ার শঙ্কায় আত্মগোপনে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়েছে।

এই ব্যক্তিদের অভিন্ন কথা, ‘হাসিনা দল ও জনগণকে পরিত্যাগ করেছেন।’ তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আপা (হাসিনা) আমাদের ছেড়ে গেছেন।’

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, পুলিশের নিষ্ঠুরতায় জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা বুঝছিলাম। বিএনপিকে নির্বাচনী তরিতে ওঠানো গেলে সেই ক্ষোভ হয়তো থামানো যেত। তাতে আমরাই আবার জিততে পারতাম এবং দল ক্ষমতায় থাকত।
নেতা–কর্মীদের পরিত্যাগ করে শেখ হাসিনার চলে যাওয়ার একই অনুভূতি শেয়ার করছেন আরও অনেকেই। ৫ আগস্টের ঘটনাবলি তাঁরা আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি। সেদিন হাসিনা তাঁর বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ভারতে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, হাসিনার দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য, এমনকি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও ‘পুরোপুরি বিস্মিত’ করেছে। এক নেতা বলেন, ‘আমরা টেলিভিশনের খবর থেকে এটা জানতে পারি।’

হাসিনার দেশত্যাগে বিপদে নেতা–কর্মীদের জীবন

এভাবে শেখ হাসিনার চলে যাওয়ার ঘটনা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের জীবন বিপদের মধ্যে ফেলেছে। ‘বিক্ষোভকারী, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী এবং সুযোগসন্ধানীরা’ আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়গুলো নিশানা বানান। করা হয় অগ্নিসংযোগ, লুট; চালানো হয় ভাঙচুর।

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘(৫ আগস্ট শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর) আমরা একটা সময়ই শুধু বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাই। সেটি সেনাপ্রধান যখন বেলা তিনটার দিকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ও মানুষ তা শুনতে টেলিভিশনের পর্দায় নজর রাখছিলেন।’

চারজনের এই দল তাঁর (হাসিনা) পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ব্যক্তিদের ওপর তাঁর ছিল অন্ধবিশ্বাস। তাঁর যে সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল, তা তিনি তাঁদের কারণে হারিয়েছেন।
আরেক নেতা ও মন্ত্রী (সাবেক সরকারের) বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা ধরা পড়লে লোকজন আমাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারতেন।’

আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনার সরকার বিরোধী দলের নেতাদের নিশানা করে, কারাগারে পাঠায়, মারধর করে, ভয়ভীতি দেখায় ও হয়রানি করে। কিন্তু পরে হঠাৎই পরিস্থিতি উল্টে যায়।

সাম্প্রতিকতম ঘটনার (শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগ) খানিকটা পেছনে তাকালে দেখা যাবে, ঘটনাপ্রবাহে কেউ কেউ (হাসিনা সরকারের) বিশেষ করে গত জুলাইয়ে শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরে ৩–৪ আগস্ট ছাত্র–জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভাঙেন। সেদিনই সরকারের পতন ঘটে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়