এম খান: [২] বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতে ১৯ এপ্রিল শুক্রবার থেকে ১ জুন পর্যন্ত মোট সাতটি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ১৮ তম নির্বাচন। দেশটির নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯৬ কোটি, তারাই বেছে নেবেন ৫৪৩টি লোকসভা আসন থেকে কারা পার্লামেন্টে যাবেন। সূত্র: বিবিসি
[৩] ভারতের নির্বাচন কমিশন বলছে, এই ৯৬ কোটি ভোটারের প্রত্যেকের ভোটই অত্যন্ত মূল্যবান আর তারা দেশের যে প্রান্তে, যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন - ভোটের বাক্সে তারা যাতে নিজেদের মতামত খুব সহজে ও মসৃণভাবে দিতে পারেন তার জন্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখা হবে না।
[৪] শ্যামশরণ নেগিকে ছাড়া এই প্রথম ভোট: স্বাধীনতার পর এই প্রথম ভারতে কোনও সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে যাতে শ্যামশরণ নেগি ভোট দেবেন না। শ্যামশরণ নেগি-কে ‘ভারতের প্রথম ভোটার’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন পার্বত্য রাজ্য হিমাচল প্রদেশের দুর্গম কল্পা অঞ্চলের বাসিন্দা। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ১০৫ বছর বয়সে শ্যামশরণ নেগির মৃত্যু হয়।
[৫] শ্যামশরণ নেগি সম্ভবত ভারতের একমাত্র নাগরিক যিনি এ যাবত দেশে হওয়া সবগুলো সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন।
[৬] ডুবুরি নিয়ে পোলিং বুথে!: মেঘালয়ের ওয়েস্ট জৈন্তিয়া হিলস জেলার এক প্রান্তে, ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে কামসিং নামে একটি গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সারিগোয়াইন নদী, যার মাঝবরাবর টানা হয়েছে সীমান্তরেখা।
[৭] নির্বাচন কমিশনের একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “কামসিং-এ যাওয়ার সময় নৌকাতে আমাদের পোলিং অফিসারদের সবাইকে লাইফ জ্যাকেট পরতে হয়।” “নদীপথে নৌকা ডুবে গিয়ে কারও জীবন সংশয় হলে বা ভোটের সরঞ্জাম জলে পড়ে গেলে যাতে তা উদ্ধার করা যায়, সে জন্য কয়েকজন ডুবুরিও এই যাত্রায় তাদের সঙ্গে থাকেন।”
[৮] গত নির্বাচনে দুর্গম কামসিং গ্রামে ছিলেন মাত্র ৩৫ জন ভোটার ২০ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারী। এরা সবাই পানের বরজে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
[৯] বিশ্বের মধ্যে উচ্চতম পোলিং স্টেশন: নির্বাচনী কর্মকর্তারা আরও জানান, হিমাচল প্রদেশের লাহুল-স্পিটি অঞ্চলে রয়েছে তাশিগাং নামে একটি প্রত্যন্ত গ্রাম সেখানেও তারা প্রতিবার আলাদা পোলিং বুথ বসিয়ে থাকেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫,২৫৬ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত তাশিগাং গ্রামের এই বুথটিকেই ‘সারা বিশ্বের মধ্যে উচ্চতম পোলিং স্টেশন’ বলে দাবি করছেন তারা।
[১০] জঙ্গলে একলা সন্ন্যাসীর পোলিং বুথ: ভারতের গুজরাটে ‘গির ফরেস্ট’ হল সারা পৃথিবীতেই এশিয়াটিক লায়ন প্রজাতির শেষ টিঁকে থাকা আবাসভূমি। সিংহের এই অভয়ারণ্যে, গির-এর গভীর জঙ্গলের ভেতরে সেই ২০০৭ সাল থেকে নির্বাচন কমিশন প্রতিবার ভোট এলেই একটি বিশেষ ভোটগ্রহণ কেন্দ্র তৈরি করে আসছে, এবারেও যার ব্যতিক্রম হবে না। জঙ্গলের ভেতরে ‘বানেজ’ নামে একটি জায়গার কাছে ওই পোলিং বুথটিতে মাত্র একজনই নথিভুক্ত ভোটার, তার নাম মহন্ত হরিদাসজী উদাসীন।
[১১] অরুণাচল প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম মালোগামেও রয়েছে আর একটি পোলিং স্টেশন, যেখানে নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা মাত্র একজন।
[১২] ২০১৯ সালে মালোগামের সেই একাকী ভোটারের কাছে পৌঁছতে নির্বাচন কমিশনের কর্মীদের টানা চার দিন ধরে দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা আর খরস্রোতা নদী উপত্যকা পাড়ি দিতে হয়েছিল।
এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :