আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আহত অবস্থায় ক্লিনিকে নিয়ে আসা হয়েছে এক তরুণকে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন, পাঁজরের হাড় ভাঙা। অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যেও খোঁজ করছিলেন প্রিয় সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের। একসময় তিনি চিকিৎসককে বললেন, পরিবারের সদস্যরা যদি বেঁচে না থাকেন, তাহলে তাঁরও বেঁচে থাকার কোনো দরকার নেই। প্রথম আলো
ক্লিনিকে ভর্তি আরেক শিশুও গুরুতর আহত। নিজের ছোট্ট শরীরের আঘাতের দিকে যেন খেয়াল নেই তার। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া মা-বাবা ও ভাই-বোনকে সাহায্য করার জন্য আকুতি জানাচ্ছিল সে। হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠলেন, তাঁরা কেউ বেঁচে নেই। শুনেই অচেতন হয়ে যায় শিশুটি।
এসব করুণ কাহিনি আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশের ছোট শহর জিয়ানের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া আহত ব্যক্তিদের। বুধবার ভোরে পাকতিকা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত প্রদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর থেকেই সেখানে ভিড় করছেন বেঁচে ফেরা আহতরা। ওই ক্লিনিকের একজন কর্মীর সঙ্গে কথা হয়েছে বিবিসির। মুহাম্মদ গুল নাম তাঁর।
বৃহস্পতিবার মুহাম্মদ গুল বলেন, তাঁদের ক্লিনিকে শয্যা মাত্র পাঁচটি। তবে ভূমিকম্পে সব কক্ষ ধ্বংস হয়ে গেছে। এদিকে সকাল থেকে রোগী এসেছে ৫০০ জন। তাদের মধ্যে ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাকতিকার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কয়েকজনকে একটি হেলিকপ্টারে করে শহরগুলোতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যাঁদের কোথাও যাওয়ার সুযোগ হয়নি, তাঁদের জন্য অস্থায়ী ক্লিনিক খুলে দুজন চিকিৎসক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে যে জেনারেটরটি দিয়ে ক্লিনিকের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, সেটির জ্বালানি তেলও ফুরিয়ে আসছে। আশপাশের প্রদেশগুলো থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে এখনো তেমন কিছু হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন মুহাম্মদ গুল। বলেন, ‘ক্লিনিকে আহত ব্যক্তিদের ভীড় বাড়ছে। অনেকেরই জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন। আমার মনে হয় না তাঁরা রাত পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবেন।’
ইতিমধ্যে, আহত ব্যক্তিদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। ভূমিকম্পটি এমন সব স্থানে আঘাত হেনেছে যেগুলো মূলত দরিদ্র পাহাড়ি এলাকা। সেখানকার বাড়িঘরগুলো দুর্বল, ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি সয়ে টিকে থাকার মতো নয়। স্বাভাবিকভাবে ভূমিকম্পে শত শত বাড়িঘর ধসে পড়েছে। ভূমিকম্পের পাশাপাশি হয়েছে ভূমিধস।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি জিয়ান। ভূমিকম্পের পর অনেক মানুষ এখনো বিধ্বস্ত বাড়িঘরের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :