মহসিন কবির: দেশের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাত সংস্কারের লক্ষ্যে ছয় বছর মেয়াদি ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক খসড়া পরিকল্পনা করছে সরকার। খসড়া সম্পাদনা করেছেন আইসিটি বিভাগের নীতি পরামর্শক (সমন্বয় ও সংস্কার) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- সরকারি হস্তক্ষেপমুক্ত স্বাধীন উপাত্ত সুরক্ষা বোর্ড গঠন, ৮০ লাখ দক্ষ জনবল তৈরি, ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় অর্জন, অসম চুক্তি সংশোধন, প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন, আইসিটি খাত সম্পর্কিত নীতি বাস্তবায়ন।
খসড়া পথনকশায় আন্তঃপরিচালনাযোগ্য ডিজিটাল অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা; সাইবার নিরাপত্তা ও ডেটা গভর্ন্যান্স শক্তিশালীকরণ; কার্যকর সেবা প্রদানের জন্য আইসিটি বিভাগের সংস্কার; নাগরিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ডিজিটাল পরিষেবা সম্প্রসারণ; একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেম গড়া; অন্তত ৮০ লাখ দক্ষ আইসিটি জনবল গড়ে তোলা; ২০২৭ সালের মধ্যে ২০ হাজার ও ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ হাজার সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ গড়ে তোলা; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পোশাক খাতের শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানো; সরকার, প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপমুক্ত ডেটা গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টের অধীন একটি স্বাধীন উপাত্ত ও এআই কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা, আইনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) মডেল অনুসরণ করা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ডেটা আদান-প্রদানে বাংলাদেশ জাতীয় ডিজিটাল আর্কিটেকচার (বিএনডিএ) চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে একটি জাতীয় ডেটা এক্সচেঞ্জ তৈরি করা, ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করা, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা টাস্কফোর্স তৈরি করা, সরকারের ই-সেবাকে আরও ত্বরান্বিত করা ও ডিজিটাল অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের অগ্রাধিকারে আছে ডিজিটাল অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তৃতীয় ধাপের অগ্রাধিকারে আছে পরিপূর্ণ ডিজিটাল অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার প্রতিষ্ঠা। যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের হাব হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে।
খসড়া অনুযায়ী, সংস্কার প্রক্রিয়া ন্যাশনাল ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন টাস্কফোর্সের তত্ত্বাবধানে হবে, যা আইসিটি বিভাগ বাস্তবায়ন করবে। কারিগরি সহায়তা দেবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোও এই প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করবে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবে। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো অর্থসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দেবে।
সংস্কারের অংশ হিসেবে আইসিটি বিভাগের কিছু উদ্যোগের কথা আছে খসড়ায়। এর মধ্যে আছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সহায়তায় তৈরি আইসিটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’ (মহাপরিকল্পনা)-এর ওপর অংশীজন বৈঠক।
অপটিক্যাল ফাইবার ও নেটওয়ার্ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ২০১৭ সাল থেকে সামিট কমিউনিকেশনস ও ফাইবার অ্যাট হোম নামের দুটি প্রতিষ্ঠান বিসিসির ফাইবার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু এই নেটওয়ার্কের ডিজিটাল মানচিত্র প্রতিষ্ঠান দুটি দেয়নি। এ ছাড়া বিসিসির সঙ্গে প্রতিষ্ঠান দুটির ৯০ : ১০ হারে অসম রাজস্ব ভাগাভাগির চুক্তি ছিল। এসব ক্ষেত্রে সংস্কার হবে।
আইসিটি বিভাগের বেশ কিছু উদ্যোগের পুনরাবৃত্তি রয়েছে উল্লেখ করে খসড়ায় বলা হয়েছে, এগুলো নতুন করে বিবেচনায় আসবে। সেই হিসেবে আইডিয়া প্রকল্প ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ এক হয়ে যাবে। জাতীয় ডেটা সেন্টার ও বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি এক হবে। এ ছাড়া আইসিটি বিভাগের অধীন সংস্থাগুলোর মধ্যে একই ধরনের ভিন্ন প্রকল্প থাকলে সেগুলো একত্র (মার্জ) করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :