শিরোনাম
◈ কী হয়েছিল জেনেভা বিমানবন্দরে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে? ভিডিও ◈ হিলি স্থলবন্দরে একদিনেই এলো ১৮০০ মেট্রিক টন আলু, কিছুটা কমেছে দাম ◈ এমবাপ্পেকে ছাড়াই নেশন্স লিগের জন্য দল ঘোষণা করলো ফ্রান্স ◈ তৃণমূল থেকে ক্রিকেটার বের করার লক্ষ্যে জিয়া টুর্নামেন্ট সোমবার শুরু ◈ ইংলিশ ক্রিকেটার অ্যান্ডারসক কেন ৪২ বছর বয়সে আইপিএলে নাম দিলেন? ◈ বাংলাদেশ সফরে সিরিজের জন্য আয়ারল্যান্ডের দল ঘোষণা ◈ পটপরিবর্তনের পর সরকার থেকে আমার কাছে দিকনির্দেশনা চাওয়া হয়: বুলবুল ◈ পরিকল্পিতভাবে এজলাসে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করা হয়েছে: আইনজীবী (ভিডিও) ◈ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার ব্যবসা বন্ধ হওয়া দরকার: ব্যারিস্টার ফুয়াদ ◈ নারী ফুটবলারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশিত : ০৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:৪০ দুপুর
আপডেট : ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যেভাবে গাড়ির দেশ হয়ে ওঠে জার্মানি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গতি, নিরাপত্তা, বিলাস—এই তিনে মোটর গাড়ির জগতে পৃথিবীতে রোমাঞ্চ জাগায় ‘বিগ থ্রি’ নামটি। এটি অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও মার্সিডিজ বেঞ্জ, আউডি আর বিএমডব্লিউকে প্রায় সবাই চেনে। এই তিন প্রতিষ্ঠানকে একত্রে বলে বিগ থ্রি। শুধু বিগ থ্রি? মোটর গাড়ির আবিষ্কারক দেশ জার্মানিতে তৈরি হয় পোরশের মতো বিলাসবহুল এবং ভক্সওয়াগনের মতো জনপ্রিয় গাড়িও। ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিন প্রকাশিত এ বছরের ১০টি মোটর গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তালিকার ৪টিই জার্মানির।


কিন্তু জার্মানি কীভাবে হয়ে উঠল মোটর গাড়ির দেশ? শিল্পবিপ্লবের কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আঠারো শতকে বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন তৈরি হতে শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় ১৮৮৬ সালে দৈনন্দিন ব্যবহার্য আধুনিক মোটর গাড়ি উদ্ভাবন করেন জার্মান উদ্ভাবক কার্ল ফ্রেডরিখ বেঞ্জ। জার্মানির গাড়ির জগতে সেটিই ছিল আধিপত্য বিস্তারের সূচনা।


বেঞ্জ দম্পতির গল্প

জার্মানির মাইনহেমে বাস করতেন কার্ল ফ্রেডরিখ বেঞ্জ ও বার্থা বেঞ্জ দম্পতি। কার্ল ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। স্ত্রী বার্থার অর্থায়নে মেকানিক্যাল যন্ত্র তৈরির একটি প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন তিনি। নাম দেন বেঞ্জ অ্যান্ড কাই। যদিও পরে সেই নাম বদলে রাখেন বেঞ্জ পেটেন্ট মোটরওয়াগন। এরপরই শুরু করেন গাড়ি তৈরির স্বপ্নের প্রকল্প। এবারও অর্থের জোগান দেন বার্থা।

অবশেষে ১৮৮৬ সালে পেট্রলচালিত প্রথম মোটর গাড়ি তৈরি করেন কার্ল। নাম দেন বেঞ্জ মোটরওয়াগন। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ মাইল বেগে চলত কার্লের গাড়িটি। সেটি ছিল ৩ চাকার গাড়ি।

বিরক্তিকর ধোঁয়ার কারণে ঘোড়ার গাড়ির সেই যুগে মানুষ মোটর গাড়ির প্রতি আকৃষ্ট হয়নি। কিন্তু নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে ১৯০০ সালের মধ্যেই বিশ্বের ধনী গাড়ি উৎপাদনকারীর তালিকায় নাম লেখান কার্ল ফ্রেডরিখ বেঞ্জ।

বিশ শতকের একেবারে শুরুতে জার্মানিতে একে একে তৈরি হতে থাকে আউডি (১৯০৯), বিএমডব্লিউ (১৯১৬), পোরশে (১৯৩১) কিংবা ভক্সওয়াগনের (১৯৩৭) মতো দৈনন্দিন ব্যবহার্য গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান।

মার্সিডিজ ও বেঞ্জ যেভাবে এক হলো

ডাইমলার মোটরেন গ্যাসেলশাফট ও বেঞ্জ পেটেন্ট মোটরওয়াগন দুটি পৃথক প্রতিষ্ঠান। একটির মালিক ছিলেন গটলিব ডাইমলার, অন্যটির কার্ল ফ্রেডরিখ বেঞ্জ। একই সময় দুটি প্রতিষ্ঠানেরই লক্ষ্য ছিল মোটর গাড়ি নির্মাণ। সেযাত্রায় প্রথম হন বেঞ্জ। কিন্তু গটলিব হাল ছাড়েননি। গাড়ি তৈরি করতে না পারলেও বিশ্বের প্রথম মোটরসাইকেল তৈরি করেন তিনি। তবে ১৮৮৯ সালে মোটরসাইকেল বাদ দিয়ে গাড়ি তৈরিতে মন দিলেও গটলিব নিজের প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত সাফল্য দেখে যেতে পারেননি। ১৯০০ সালে মৃত্যু হয় তাঁর। এর পরের বছর প্রতিষ্ঠানটিতে যুক্ত হন নতুন সিইও এমিল জেলিনেক। তাঁর তত্ত্বাবধানে ১৯০১ সালে ‘ডাইমলার মোটরেন গ্যাসেলশাফট’ থেকে তৈরি হয় মার্সিডিজ পিএস ৩৫। নামটি রাখা হয়েছিল এমিলের মেয়ে মার্সিডিজের নামে।

এরপর শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ফলে মোটর গাড়ি তৈরি প্রায় তলানিতে ঠেকে। এমন অবস্থায় প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার খাতিরে অনেকটা বাধ্য হয়ে ডাইমলারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার প্রস্তাব পাঠান ফ্রেডরিখ বেঞ্জ। প্রথমে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকলে একসময় ডাইমলারের প্রতিষ্ঠান বেঞ্জের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। ফলে ১৯২৬ সালে এক হয়ে যাত্রা শুরু করে ‘ডাইমলার-বেঞ্জ’। পরের বছরই বাজারে আসে তাদের প্রথম গাড়ি ‘মার্সিডিজ বেঞ্জ’।

হিটলারের উত্থানের পর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া শুরু করে জার্মানির অটোমোবাইল শিল্প। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত হিটলারের বাহন ছিল মার্সিডিজ বেঞ্জ। তাঁর এই পৃষ্ঠপোষকতায় ত্রিশের দশকের শুরু থেকে জার্মানির আভিজাত্যের অংশ হয়ে ওঠে এ গাড়িগুলো।

গাড়ি শিল্পে পথপ্রদর্শক জার্মানি

১৯০১ সালে তৈরি মার্সিডিজ পিএস ৩৫-কে অনেকে আধুনিক গাড়ির জনক মনে করে। ১৯৪৮ সালে পোরশে ৩৫৬ কারের জগতে প্রথম বাউহাস ডিজাইনের পরিচিতি ঘটায়। ১৯৭২ সালে বিএমডব্লিউর বিএমডব্লিউ ১৬০২ ই প্রথমবার ইলেকট্রিক কারের ধারণা নিয়ে আসে।

জার্মান গাড়িগুলো দেখতে আকর্ষণীয়, উচ্চগতিসম্পন্ন এবং একই সঙ্গে নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের নিশ্চয়তা দেয়। আবার নির্ভরযোগ্য এ গাড়িগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনও বেশ কম। এ ছাড়া এসব গাড়িতে প্রথম উন্নত নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য; যেমন এয়ারব্যাগ এবং অ্যান্টি-লক ব্রেক সংযুক্ত করা হয়।

জার্মানরা জাতি হিসেবে একরোখা বলে পরিচিত। সাফল্যের জন্য তারা যেকোনো কঠোর পরিশ্রম করতে রাজি। প্রায় ১৩৮ বছর আগে ফ্রেডরিখ ও বার্থা বেঞ্জ সেটি প্রমাণ করেছেন। সেদিনের সেই ছোট্ট রোড ট্রিপ গাড়ি দিয়ে এই দম্পতি যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, পরবর্তী প্রজন্ম তাঁদের ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বময়।

সুত্র : আজকের পত্রিকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়