কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই খাতে স্যামসাং ও গুগলের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে অ্যাপল অনেকটাই পিছিয়ে ছিল ২০২৪ সালের শুরুতেও। কিন্তু গত ১০ জুন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপারস কনফারেন্সে ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ নামের নিজস্ব একটি এআই প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়ে এআই খাতে নিজেদের উপস্থিতি ভালোভাবেই জানান দেয় আইফোণ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
পরবর্তীতে সেপ্টেম্বরে উন্মোচিত হয় অ্যাপলের প্রথম ‘এআই ফোন’ খ্যাত আইফোন ১৬ সিরিজ, যেখানে ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অত্যাধুনিক এবং একইসাথে আকর্ষণীয় কিছু এআই ফিচারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ব্যবহারকারীদের। তবে অ্যাপল আগেই জানিয়েছিল যে, অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম অ্যাক্সেস করতে হলে প্রয়োজন হবে আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের ১৮.১ আপডেট।
ফলে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্বজুড়ে আইফোন ১৬ সিরিজের ফোনগুলো গ্রাহকদের কাছে পৌঁছতে শুরু করলেও ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ ভিত্তিক এআই ফিচারগুলো ব্যবহার করার জন্য তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়েছে আইওএস ১৮.১ আপডেটের জন্য।
অবশেষে গত ২৮ অক্টোবর আইওএস ১৮.১ ফ্রি আপডেটটি প্রকাশ করেছে অ্যাপল। এর মাধ্যমে ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’-এর প্রথম ব্যাচের এআই ফিচারগুলো আইফোনসহ অ্যাপলের বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ ব্যবহার করতে যা প্রয়োজন হবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ভিত্তিক ফিচার বা টুল ব্যবহার করতে প্রয়োজন হয় শক্তিশালী হার্ডওয়্যার যেমন প্রসেসর বা চিপ এবং এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সফটওয়্যার। অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সও এর ব্যতিক্রম নয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করতে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের কোন যুগলবন্দীর প্রয়োজন পড়বে:
প্রসেসর বা চিপ (সিস্টেম অন চিপ):
আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাকবুক, আইম্যাক, ম্যাকমিনি, ম্যাক স্টুডিও, ম্যাক প্রো- অ্যাপলের এই ডিভাইসগুলোর সকল মডেল থেকে ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ অ্যাক্সেস করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন হবে নির্দিষ্ট প্রসেসর বা চিপের।
আইফোনে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করতে হলে প্রয়োজন হবে ৩ ন্যানোমিটার নোড প্রযুক্তিতে তৈরি এ১৭ প্রো বা পরবর্তী কোনো চিপ (সিস্টেম অন চিপ)। আইপ্যাড ও ম্যাকবুকের জন্য দরকার হবে এম১ বা পরবর্তী কোনো সিস্টেম অন চিপ। আইম্যাক ও ম্যাক মিনি’তেও এম১ চিপ থাকলেই ব্যবহার করা যাবে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেমের এআই ফিচার।
তবে ম্যাক স্টুডিও এর ক্ষেত্রে এম১ ম্যাক্স চিপ এবং ম্যাক প্রো ওয়ার্কস্টেশনের ক্ষেত্রে এম২ আলট্রা চিপ থাকতে হবে ডিভাইসে। আর তাহলেই অ্যাক্সেস করা যাবে অ্যাপলের এআই ফিচারসমূহ।
অপারেটিং সিস্টেম:
অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স-এর এআই ফিচার ব্যবহার করতে অ্যাপলের বিভিন্ন পণ্যে অপারেটিং সিস্টেমের যে আপডেট প্রয়োজন সেগুলো হচ্ছে: আইওএস ১৮.১, আইপ্যাডওএস ১৮.১ ও ম্যাকওএস সিকোইয়া ১৫.১। অ্যাপলের ডিভাইসগুলোতে প্রযোজ্য অপারেটিং সিস্টেমের ফ্রি আপডেট ডাউনলোড করে নিলেই ব্যবহার করা যাবে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স।
‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ ব্যবহার করা যাবে যে ডিভাইসগুলোতে
প্রয়োজনীয় চিপ ও অপারেটিং সিস্টেমের আপডেট থাকলে অ্যাপলের যে ডিভাইসগুলোতে ব্যবহার করা যাবে সেগুলো হলো:
আইফোন
আইফোন ১৬, আইফোন ১৬ প্লাস, আইফোন ১৬ প্রো, আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স
আইফোন ১৫ প্রো, আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স
আইপ্যাড
আইপ্যাড প্রো- এম১ বা পরবর্তী কোনো চিপ
আইপ্যাড এয়ার- এম১ বা পরবর্তী কোনো চিপ
ম্যাকবুক
ম্যাকবুক প্রো- এম১ বা পরবর্তী কোনো চিপ
ম্যাকবুক এয়ার- এম১ বা পরবর্তী কোনো চিপ
অ্যাপলের ডেস্কটপ পিসি
আইম্যাক- এম১ বা পরবর্তী কোনো চিপ
ম্যাক মিনি- এম১ বা পরবর্তী কোনো চিপ
অ্যাপলের ওয়ার্কস্টেশন
ম্যাক স্টুডিও- এম১ ম্যাক্স বা পরবর্তী কোনো চিপ
ম্যাক প্রো- এম২ আলট্রা বা পরবর্তী কোনো চিপ
যেভাবে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স এর এআই ফিচার ব্যবহার করা যাবে
অ্যাপলের প্রযোজ্য ডিভাইসগুলোতে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করতে হলে প্রথমেই সেটিংস থেকে জেনারেশন অপশনে যেতে হবে। এবার ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড রিজিওন (ভাষা ও এলাকা) অপশনে গিয়ে ডিভাইসের প্রাইমারি ভাষা হিসেবে ‘ইংলিশ (ইউএস)’ সিলেক্ট করে দিতে হবে।
ডিভাইসের ল্যাঙ্গুয়েজ সেটিং পরিবর্তন করার পর অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স এন্ড সিরি’র ভাষাও একইভাবে সেটিংস থেকে পরিবর্তন করে দিতে হবে। এজন্য সেটিংস থেকে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স এন্ড সিরি অপশনে গিয়ে ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড রিজিওন (ভাষা ও এলাকা) অপশন থেকে ‘ইংলিশ (ইউএস)’ সিলেক্ট করে দিতে হবে সিরি এবং অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সের ভাষা হিসেবে। এবার আপনার ডিভাইসটি ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ অ্যাক্সেস করার জন্য প্রস্তুত।
এবার অ্যাপল প্রথমেই আপনাকে ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ ব্যবহার করতে ইচ্ছুক ব্যবহারকারীদের অপেক্ষমান তালিকায় (ওয়েটলিস্ট) যুক্ত করে নিবে। এরপর অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স-এর লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল আপনার ডিভাইসে ডাউনলোড হয়ে যাওয়ার পর নোটিফিকেশন প্রদানের মাধ্যমে আপনাকে সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে। নোটিকেশন পেতে কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এবার আপনি অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সে গিয়ে বিভিন্ন এআই ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন।
বিশ্বের অন্যান্য ভাষায় কবে আসবে ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’?
অ্যাপল জানিয়েছে ইংলিশ (ইউএস) এর পাশাপাশি অচিরেই বিশ্বের বেশ কয়েকটি ভাষায় ব্যবহার করা যাবে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স। আগামী ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইউকে’র প্রচলিত ইংরেজি ভাষায় অ্যাক্সেস করা যাবে এই এআই প্ল্যাটফর্মটি। এছাড়া আগামী বছরের (২০২৫) এপ্রিলে ফ্রি সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে বিশ্বের আরও কয়েকটি স্থানীয় ভাষায় অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের সুযোগ করে দিবে বলে জানিয়েছে অ্যাপল।
২০২৫ সালে বছরজুড়েই অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স-এর জন্য বিভিন্ন স্থানীয় ভাষার সাপোর্ট যুক্ত করবে অ্যাপল। এর মধ্যে রয়েছে চাইনিজ, ইংলিশ (ইন্ডিয়া), ইংলিশ (সিঙ্গাপুর), ফ্রেঞ্চ, জার্মান, ইটালিয়ান, জাপানিজ, কোরিয়ান, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, ভিয়েতনামিজসহ আরও বেশ কয়েকটি ভাষা।
তথ্যসূত্র: অ্যাপল
আপনার মতামত লিখুন :