অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্সেস্টার কলেজে কয়েক দশক ধরে মানুষের মাথার খুলি দিয়ে তৈরি একটি পাত্রে পানীয় পরিবেশনের রীতি চালু ছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বইয়ে উঠে এসেছে এমন বিস্ময়কর তথ্য।
মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ‘এভরি মনুমেন্ট উইল ফল’ শিরোনামের এক বইয়ে চাঞ্চল্যকর এই বিষয় তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিট রিভার্স মিউজিয়ামের প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড্যান হিক্স।
ড্যান হিক্স জানিয়েছেন, খুলিটির বয়স আনুমানিক ২২৫ বছর এবং এটি সম্ভবত ক্যারিবীয় অঞ্চলের কোনো দাস নারীর ছিল। খুলির ওপর রুপার কাজ করা এই পাত্র ২০১৫ সাল পর্যন্ত কলেজের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে ব্যবহার করা হতো।
বইটিতে বলা হয়েছে, যখন এই পাত্রে মদ রাখা যেত না, তখন এটি চকলেট পরিবেশনের জন্য ব্যবহৃত হতো। তবে সহকর্মী ও অতিথিদের ক্রমবর্ধমান অস্বস্তির কারণে এই রীতি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ হিক্সকে খুলিটির উৎস সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
ড্যান হিক্স জানান, যাঁর খুলি দিয়ে পাত্রটি তৈরি হয়েছিল, তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে কার্বন ডেটিংয়ে জানা গেছে, এটির আনুমানিক বয়স ২২৫ বছর। আকৃতি ও প্রাসঙ্গিক প্রমাণ বলছে, এটি সম্ভবত ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে আনা এবং কোনো দাস নারীর দেহাবশেষ হতে পারে।
অন্যদিকে, পাত্রটির ব্রিটিশ মালিকদের পরিচয় বিস্তারিতভাবে নথিবদ্ধ আছে। এটি ১৯৪৬ সালে উর্সেস্টার কলেজে দান করেছিলেন সাবেক ছাত্র জর্জ পিট-রিভার্স। তাঁর নামটি রুপার রিমে খোদাই করা রয়েছে। তিনি ছিলেন একজন ইউজেনিসিস্ট (জিনগত উৎকর্ষবাদে বিশ্বাসী) এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্যাসিস্ট নেতা অসওয়াল্ড মোসলিকে সমর্থনের কারণে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে বন্দী করেছিল।
এই পাত্র জর্জ পিট-রিভার্সের দাদা—বিখ্যাত ব্রিটিশ সৈনিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ অগাস্টাস হেনরি লেন ফক্স পিট রিভার্সের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় ছিল। তিনি ১৮৮৪ সালে পিট রিভার্স মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই বছরই সথোবির এক নিলামে পাত্রটি কিনেছিলেন।
পাত্রটির আগের মালিক ছিলেন আইনজীবী বার্নহার্ড স্মিথ, যিনি অক্সফোর্ডের ওরিয়েল কলেজের গ্র্যাজুয়েট। ধারণা করা হয়, তিনি এটি উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন তাঁর বাবার কাছ থেকে, যিনি রাজকীয় ব্রিটিশ নৌবাহিনীর হয়ে ক্যারিবীয় অঞ্চলে কর্মরত ছিলেন।
এই ঘটনাকে ঔপনিবেশিক লুণ্ঠনের একটি রূপ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ড্যান হিক্স। তাঁর মতে, সহিংসতা শুধু সম্পদ লুটে নেয়নি, মানুষের পরিচয় ও মর্যাদাও নিশ্চিহ্ন করেছে। অনুবাদ: আজকের পত্রিকা