শিরোনাম
◈ ফের বাড়লো জ্বালানি তেলের দাম ◈ সমন্বয়ক আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আহত ৮ ◈ ট্রাম্পের সহায়তা প্রত্যাহারে চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে বাংলাদেশ ◈ দুই দেশ থেকে এলো সাড়ে ৩০ হাজার টন চাল ◈ রাজনৈতিক নেতৃত্বই জুলাই বিপ্লবে পুলিশকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল: এইচআরডব্লিউ ◈ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রতি বাংলাদেশের শ্রদ্ধাবোধ থাকবে বলে আশা ভারতের ◈ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধের জেরে আইসিডিডিআর,বির হাজার কর্মী ছাঁটাই ◈ বিগত সময়ে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদেরকে রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করার আহ্বান ◈ বিয়ে করলেন সারজিস আলম, পাত্রী কে? ◈ কীভাবে রাজনীতির রং লাগলো অরাজনৈতিক তাবলীগে?

প্রকাশিত : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:২২ রাত
আপডেট : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মসুও নারীরা চান একাধিক পুরুষসঙ্গী, যে সমাজে পুরুষের কাজ শুধুই শয্যাসঙ্গী হওয়া!

মসুও নারীরা একজনের সঙ্গে আটকে থাকতে চান না। তারা চান একাধিক পুরুষ সঙ্গী। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসি বাংলা: বিশ্বের বেশির ভাগ সমাজই পুরুষতান্ত্রিক। সেখানে সাধারণত পুরুষরাই হয়ে থাকেন ঘর ও পরিবারের হর্তাকর্তা। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন মাতৃতান্ত্রিক এক সম্প্রদায়ের নাম মসুও। অঞ্চলটি তথাকথিত নারীশাসিত এক অভিনব সাম্রাজ্য।
 
চীনের ইউনান প্রদেশে পাহাড়ের কোলে মসুও সমাজে নারীরাই সর্বেসর্বা। তাদের সমাজে পুরুষরা গৌণ। তাদের কোনো কর্তৃত্ব নেই। পুরুষের যৌন সংসর্গ ছাড়া যেহেতু সন্তান উৎপাদন সম্ভব নয়, তাই মসুও সমাজে পুরুষের প্রয়োজন শুধু ভবিষ্যৎ বংশধর তৈরির জন্য। এর বাইরে পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ককে তাদের সমাজে নিরুৎসাহিত করা হয়।

আইনজীবী চু ওয়াই হং মসুও জনগোষ্ঠীকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি ২০০৬ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন সিঙ্গাপুরে একটা বড় প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ আইনজীবী হিসেবে। ওই বছর তার শহুরে ব্যস্ত জীবন থেকে আগাম অবসর নিয়ে চু ওয়াই হং যখন তার পূর্বপুরুষের দেশ চীনে বেড়াতে যান, তখন হঠাৎই তিনি দেখা পান পাহাড়ের বাসিন্দা এই বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায়ের। সঙ্গে সঙ্গে তাদের দারুণ ভালো লেগে যায় চু ওয়াই হংয়ের।
 
নারীদের অপরিসীম আত্মবিশ্বাস
চু ওয়াই হং বলেন, ‘নারীরা সেখানে দারুণ ক্ষমতাশালী। আপনি সেখানে গেলে দেখবেন এই সম্প্রদায়ের নারীদের মধ্যে কী পরিমাণ আত্মবিশ্বাস!- সেটা কিন্তু তাদের স্বভাবজাত। আমাদের নারীদের মধ্যে এটা সচরাচর দেখা যায় না। এরা কিন্তু সেভাবে শিক্ষিত নয়, এরা কৃষক। কিন্তু আত্মবিশ্বাসে এরা যেন টগবগ করছে!’

পাহাড়ের প্রায় তিন হাজার মিটার উচ্চতায় অপূর্ব সুন্দর একটা হ্রদ- নাম ‘লুগু লেক’। তার চারপাশে চমৎকার ঝাউবন। পাহাড়ে ঘেরা চোখ জুড়ানো দারুণ এলাকা। প্রত্যেকেই কৃষিজীবী আর খুব শান্ত-ধীরস্থির জীবনযাত্রা সেখানে।
 
চু ওয়াই হং যখন ২০০৬ সালে লুগু লেকে যান, তখনো সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা প্রায় ছিলই না। বাইরের মানুষের প্রভাবও তেমন পড়েনি। তিনি তখনো ভাবেননি যে সেখানেই ভবিষ্যতে তার ঘর বাঁধবেন।

মসুও নারীরা চান একাধিক পুরুষসঙ্গী
মসুও একটি ছোট প্রাচীন সম্প্রদায়। সংখ্যায় তারা ৪০ হাজারের মতো। মূলত স্বনির্ভর জাতিগোষ্ঠী। কঠোর ধর্মবিশ্বাস আর সংস্কৃতিকেন্দ্রিক তাদের জীবনযাপন। চু ওয়াই হং যেদিন সেখানে গিয়ে পৌঁছান, সেদিন মসুও নারীরা তাদের প্রথাগত উজ্জ্বল সাজপোশাক পরে তাদের পাহাড়ের দেবীর উৎসব উদযাপন করছিলেন।
 
চু ওয়াই হং বলেন, ‘‘তারা খুব মজা করে নাচ-গান করছিল, আগুন জ্বালিয়ে খাবার রান্না করছিল আর পর্বতের দেবীর সামনে ধূপ জ্বালাতে সবাই পাহাড় ভেঙে উপরে উঠছিল। পাহাড়ের মাথায় তাদের দেবী ‘গামু’র মন্দির। তাদের বিশ্বাস, এই দেবীই তাদের রক্ষাকর্ত্রী। তারা বলেন, তাদের এই দেবী নাচ-গান ভালোবাসেন; মদ্যপান, বহুগামিতা তার খুব পছন্দ। তাই এই দেবীকেই তারা অনুসরণ করেন।”
 
মসুও নারীদের বক্তব্য- ‘দেবীর মতো আমাদের জীবনেও একাধিক পুরুষসঙ্গী চাই। আমরা একজনের সঙ্গে আটকে থাকতে চাই না’। মসুওদের জীবন নিয়ে চু ওয়াই হং বই লিখেছেন ‘কিংডম অব উইমেন’। মসুওদের ভাষাও শিখেছেন তিনি, তাদের সঙ্গে বসবাস করেছেন।

প্রথাগতভাবে মসুওরা মাতৃতান্ত্রিক। অর্থাৎ তাদের বংশপরম্পরা মায়ের দিক থেকে। তাদের সমাজে মাতামহী বা প্রমাতামহী সবচেয়ে ক্ষমতাশালী। মেয়ে মায়ের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়।

মসুও পরিবারের কন্যারা ভাই বা ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়। ছেলেরা কখনো বাসা ছেড়ে কোথাও যায় না। বোনের পরিবারেই থাকে। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মে পরিবারের মাথা কে হবে, সেটা কোন কন্যাসন্তান পরিবারের অগ্রজ, সেটা বিচার করে তারা ঠিক করে না। পরিবারে যে কন্যাসন্তান সবচেয়ে বুদ্ধিমতী, আর সবচেয়ে পরিশ্রমী- সেই পরিবারের মাথা হয়। মেধা ও কর্মদক্ষতা বিচার করে সেটা ঠিক করে দেন পরিবারে মায়ের দিকের  সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ নারী। পরিবারে সবাইকে তিনি নির্দেশ দিয়ে জানিয়ে দেন ভবিষ্যতে ওই পরিবার কার কর্তৃত্ব মেনে নেবে।
 
মসুও পুরুষের ভূমিকা কী?
মসুওদের লোকসংস্কৃতিতে তাদের বিশ্বাস যে, পুরুষের ভূমিকা হলো শুধু সন্তান উৎপাদনে সাহায্য করা। তাদের ব্যাখ্যায়- নারীর শরীরে নতুন জীবনের যে বীজ সুপ্ত আছে, পুরুষ তাকে অঙ্কুরিত করবে। সেই বীজে যখন প্রাণের সঞ্চার হবে, তখন থেকেই সেই শিশুর মালিক তার গর্ভধারিণী মা। বাবার ওই শিশুতে কোনো অধিকার নেই। সে শুধু বীজে পানি দিয়ে তাকে অঙ্কুরিত করেছে। ওইটুকুই তার ভূমিকা। শিশুর জীবনে বাবার আর কোনো ভূমিকাই থাকে না।

মসুও পরিবারে শিশুরা যেহেতু মায়ের বাড়িতে বেড়ে ওঠে, তাই ঘরে পুরুষ বলতে বাবার চেয়ে তারা বেশি চেনে মামাকে বা মায়ের বংশের যে পুরুষ সেই পরিবারে থাকেন- তাকে। সন্তানের বাবার পিতৃত্বে কোনো অধিকার থাকে না।

আমরা বাবা বলতে যেটা বুঝি, মসুও সমাজে বাবারা কিন্তু সে রকম নয়। সন্তানের বড় হয়ে ওঠার ব্যাপারে তাদের কোনোই দায়িত্ব থাকে না। সব দায়িত্ব নেন মামারা। বোনের বাচ্চাদের মসুও সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া, তাদের জীবনযাপন, মূল্যবোধ সবকিছু যথাযথভাবে শেখানোর দায়িত্ব মামাদের।
 
পথচলতি বিয়ে
মসুওদের সমাজে নারী-পুরুষের সম্পর্কের ব্যাপারটাও একেবারেই অন্যরকম। বিয়ে বলে তাদের সমাজে কিছু নেই। নারী আর পুরুষের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কেও তারা বিশ্বাস করে না। মসুও সমাজে একজন পুরুষ, নারীকে বলে- আজ রাতে আমি তোমার বাসায় কাটাব। মসুওদের বাসায় প্রত্যেক নারীর আলাদা ঘর থাকে। পুরুষ এসে রাতে তার পছন্দের নারীর দরজায় পাথর দিয়ে টোকা মারে ও তার ঘরে রাত কাটায়।
 
ওই পুরুষকে সূর্য ওঠার আগেই কিন্তু ঘর থেকে চলে যেতে হয় তার নিজের বাসায়। মসুওরা এটাকে বলে ‘পথচলতি বিয়ে’। তারা কখনোই এই পথচলতি বিয়েকে স্থায়ী কোনো সম্পর্ক হিসেবে দেখে না বা দেখার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করে না। তাদের যুগল সম্পর্ক শুধু রাতের ওই মুহূর্তটির জন্যই স্থায়ী হয়।
 
নারীদের সম্মানের শিক্ষা
মসুও সমাজে পুরুষরা ছোটবেলা থেকেই নারীদের সম্মান করতে শেখে। নারীর প্রতি সম্মানবোধ নিয়ে তারা বেড়ে ওঠে। তাই বলে মসুও নারীরা কিন্তু পুরুষদের কখনই হেয় করেন না। পুরুষপ্রধান দুনিয়ায় পুরুষরা নারীদের প্রতি যেভাবে আচরণ করে, তাদের যে চোখে দেখে- মসুও সমাজ নারীপ্রধান হলেও নারীরা কিন্তু পুরুষদের একইভাবে দেখে না। তারা পুরুষের ওপর প্রভুত্ব করে না। পুরুষদের গালমন্দ করে না। তাদের প্রতি মসুও নারীরা খুবই মমতাশীল। অন্যদিকে পুরুষরাও সেই সমাজে কখনো নিজেদের অধস্তন বা অবদমিত বলে মনে করেন না।
 
আধুনিক জীবনধারার প্রভাব
মসুও এলাকায় এখন পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে তারা এখন চীনের আধুনিক জীবনধারার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। অনেক মসুও নারী একজন পুরুষের সঙ্গে ঘর বাঁধার আইডিয়াও পছন্দ করতে শুরু করেছেন। সূত্র বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়